সৌদি সীমান্তরক্ষীদের বিরুদ্ধে শতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশী হত্যার অভিযোগ
ইয়েমেন থেকে সৌদি আরবে প্রবেশের চেষ্টাকালে ইথিওপিয়ান অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দিকে বৃষ্টির মতো গুলি ছুঁড়েছে সৌদির সীমান্তরক্ষীরা। গত বছর শতাধিক ইথিওপিয়ানকে গুলি করে হত্যা করেছে তারা। আজ সোমবার (২১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। যদিও এইচআরডব্লিউয়ের এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলছে সৌদি সরকারের একটি সূত্র। খবর এএফপির।
মানবাধিকার সংস্থাটির প্রতিবেদনটি আফ্রিকা থেকে সৌদি আরব পর্যন্ত বিপজ্জনক রুট বরাবর অপব্যবহারের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে কয়েক হাজার ইথিওপিয়ান বাস করে এবং কাজ করে।
প্রত্যক্ষদর্শী ২০ বছর বয়সী এক ইথিওপিয়ান নারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে এইচআরডব্লিউ। দেশটির ওরামিয়া রাজ্যে থাকা এই নারী বলেন, ‘সৌদি সীমান্তরক্ষীরা একদল অভিবাসনপ্রত্যাশীর ওপর গুলি চালায়, যাদেরকে তারা সদ্য হেফাজত থেকে মুক্তি দিয়েছে।’ এই নারী বলেন, ‘তারা বৃষ্টির মতো আমাদের ওপর গুলি চালায়। যখন কথাটি আমার মনে পড়ে, আমি কেঁদে উঠি।’
২০ বছর বয়সী এই নারী আরও বলেন, ‘আমি একজনকে দেখছিলাম যিনি কি না দুই পা হারানো ও সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিল। তিনি চিৎকার করে বলছিলেন, তোমরা কি আমাকে এখানে ছেড়ে যাচ্ছো, দয়া করে যেও না। আমরা তাকে সাহায্য করতে পারিনি। কারণ, প্রাণ ভয়ে আমরা দৌড়ে পালাচ্ছিলাম।’
এইচআরডব্লিউর গবেষক নাদিয়া হার্ডম্যান বলেন, ‘সৌদি কর্মকর্তারা বহির্বিশ্বের অন্তরালে থাকা দুর্গম সীমান্ত এলাকায় শত শত অভিবাসন ও রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাশীদের হত্যা করছে। সৌদি ভাবমূর্তি উন্নত করার জন্য পেশাদার গলফ, ফুটবল ক্লাব ও বড় বড় বিনোদন অনুষ্ঠানের আয়োজনে বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ ব্যয় করছে। আমাদের এই ভয়ঙ্কর অপরাধ থেকে মনোযোগ সরানো উচিত নয়।’
সৌদি সরকারের সূত্রটি নাম না প্রকাশ করার শর্তে অভিযোগগুলো অস্বীকার করে এএফপিকে বলেন, ‘এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে করা অভিযোগের কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া যায়নি এবং এটি পুরোপুরি ভিত্তিহীন।’
নিউইয়র্কভিত্তিক সংস্থাটি প্রায় এক দশক ধরে সৌদি আরব-ইয়েমেন সীমান্তে ইথিওপিয়ান অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে অপব্যবহারের বিষয়টি নথিভুক্ত করেছে। এইচআরডব্লিউ বলছে, সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডগুলোকে বিস্তৃত এবং পদ্ধতিগত বলে মনে হচ্ছে। এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হতে পারে।
গত বছর জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করে জানিয়েছিলেন, ২০২২ সালের প্রথম চার মাসে সৌদির সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে ৪৩০ অভিবাসনপ্রত্যাশী নিহত হয়েছে। এমনটা হয়েছে সৌদির দক্ষিণাঞ্চল ও ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলে। ওই বছরের মার্চে রিয়াদ ও ইথিওপিয়ার মধ্যে একটি চুক্তি হয়। চুক্তির আওতায় সৌদি আরব থেকে ইথিওপিয়ানদের প্রত্যাবাসন শুরু হয়। সে সময় ইথিওপিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় এক লাখ নাগরিককে দেশে ফেরত আনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, বিষয়টির মন্তব্যের জন্য তারা সৌদি স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠালেও কেউ কোনো উত্তর দেয়নি। তবে, উত্তর ইয়েমেনের নিয়ন্ত্রণকারী হুতি বিদ্রোহীদের চিঠি পাঠালে তারা জবাবে সৌদি সীমান্তরক্ষীদের দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে অভিবাসী ও ইয়েমেনিদের হত্যার অভিযোগ করে।
অধিকার গোষ্ঠীটির মতে, অভিবাসীরা বলেছে, হুতিরা চোরাচালানকারীদের সঙ্গে কাজ করে। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আটক করে অর্থ নেয় গ্রুপটি। তবে, হুতিরা চোরাচালানকারীদের সঙ্গে কাজ করার কথা অস্বীকার করে।
এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে ইয়েমেন সীমান্তের মাধ্যমে সৌদি আরবে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন এরকম ৩৮ ইথিওপিয়ান অভিবাসনপ্রত্যাশীর সাক্ষাৎকারের কথা উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া সংস্থাটি স্যাটেলাইট ছবি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য উৎস থেকে পাওয়া ছবি ও ভিডিও সূত্রের কথা জানায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা সাক্ষাৎকারে ২৮টি বিস্ফোরক অস্ত্র সহকারে আক্রমণের ঘটনার বর্ণনা দেন, যার মধ্যে মর্টারের গোলাও অন্তর্ভুক্ত।