মরক্কোর ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে
মরক্কোতে কয়েক দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে। তারা বলছে, প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় আটকে পড়াদের উদ্ধারে উদ্ধারকারী দল কাজ করছে। খবর এএফপির।
প্রতিবেদনে ফরাসি সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, ভূমিকম্পের জেরে মরক্কোতে তিনদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো ঠিক করতে কয়েক বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছে রেড ক্রস।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য মতে, স্থানীয় সময় শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টা ১১ মিনিটে পর্যটননগরী মারাকেশ শহরের ৭২ কিলোমিটার বা ৪৫ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ছয় দশমিক আট। আর গভীরতা ছিল ১৮ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার। ভূমিকম্পের জেরে কেঁপে ওঠে উপকূলীয় শহর রাবাত, কাসাব্যালন্স ও ইসাওরিয়াও। প্রাকৃতিক দুর্যোগটিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আতঙ্কিত বাসিন্দা ও পর্যটকরা মধ্যরাতে নিরাপত্তার জন্য রাস্তায় নেমে পড়ে।
কাসাব্যালন্স শহরের বাসিন্দা ৮০ বছর বয়সী গান্নু নাজিম বলেন, ‘আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে দরজা ও শাটার বাজানোর শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়। পরে, বুঝলাম ভূমিকম্প হয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে আমি বাড়ির বাইরে চলে গিয়েছিলাম।’
এএফপি জানিয়েছে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত পাহাড়ি গ্রাম তাফেঘাঘতে কোনো ভবন আর দাঁড়িয়ে নেই। সবগুলোই ধ্বংস হয়ে গেছে। এই অঞ্চলের ভবনগুলো যে ঐতিহ্যবাহী ইট দিয়ে তৈরি সেগুলো ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো নয়। শুক্রবার বিকেলের দিকে ওই এলাকার ধ্বংসাবশে অনুসন্ধান চালায় সৈন্যরা। কিন্তু, বেশিরভাগ গ্রামবাসীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ওই গ্রামে অন্তত ৭০ বাসিন্দা এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে মারা গেছে।
তাফেঘাঘতের বাসিন্দা ৭২ বছর বয়সী ওমর বেনহান্নাহ বলেন, ‘আমার তিন নাতি-নাতনি ও তাদের মা মারা গেছে। ভবনের ধ্বংসাবশেষে তারা চাপা পড়েছিল। এখনও তারা সেখানেই আছে। ভূমিকম্পের কিছু সময় আগেও আমি তাদের সঙ্গে খেলছিলাম।’
উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে শুক্রবার হওয়া ভূমিকম্পটি ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘১২০ বছরের বেশি সময় ধরে এতো শক্তিশালী ভূমিকম্প এই দেশটিতে আঘাত হানেনি।’ ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক বিল ম্যাকগুরে বলেন, ‘উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প বিরল। দেশটিতে ভবনগুলো মজবুত করে তৈরি করা হয় না। এর ফলে এগুলো ধসে পড়ে ও হতাহতের ঘটনা ঘটে।’
মরক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ভূমিকম্পে ইতোমধ্যে দুই হাজার ১২ জন মারা গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে তারোদান্ত প্রদেশের আল-হাওজ শহরে। প্রাকৃতিক দুর্যোগটিতে আহত হয়েছে দুই হাজার ৫৯ জন, যার মধ্যে এক হাজার ৪০৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ত্রাণ অভিযানের নেতৃত্বে থাকা সিভিল ডিফেন্সের কর্নেল হিচাম চৌকরি রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমকে বলেন, ‘ভূমিকম্প একটি ব্যতিক্রমী জরুরি পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।’