বন্যায় বিপর্যস্ত লিবিয়ার ডেরনা, কয়েক হাজার মানুষ নিখোঁজ
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/09/15/libiyyaa-thaamb.jpg)
ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাবে অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় লিবিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর অন্যতম ডেরনা শহর। সুনামি আকারের আকস্মিক বন্যায় বন্দর নগরীটিতে অনেকে ভেসে গেছে। নিখোঁজ কয়েক হাজার বাসিন্দাকে খুঁজতে আজ শুক্রবারও (১৫ সেপ্টেম্বর) উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর ডেরনায় প্রলয়ঙ্কারী এ বন্যায় মৃতের সংখ্যা প্রায় চার হাজার। খবর এএফপির।
সংবাদ সংস্থাটি জানায়, ড্যানিয়েলের আঘাতে গত রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে দুটি বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ে ডেরনা শহরে। ঝড়-বন্যার তোড়ে ওই রাতে ভেসে ও ধসে যায় অনেক ভবন। শহরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। প্লাবিত হয় গোটা শহর। ভূমধ্যসাগরে ভেসে যান অগণিত মানুষ।
ডেরনা শহর থেকে এএফপির একজন ফটো সাংবাদিক বলেন, ‘সাধারণত এ সময়ে নদীর দুপাশের এলাকাগুলো শুকনো থাকে। তবে, এবার তেমটি নেই। দেখে মনে হচ্ছে, এসব এলাকায় স্টিম রোলার চলেছে। গাছ ও ভবন উপড়ে গেছে, যানবাহনগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2023/09/15/libiyyaa-in.jpg)
প্রতিবেদনে বেনগাজি মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নেওয়া একজনের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, ‘কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে পানির উচ্চতা অনেক বেড়ে যায়। আমি ও আমার মা ভেসে যাচ্ছিলাম। তবে, সৌভাগ্যবশত আমরা একটি ভবনের নিচতলায় যেতে সক্ষম হই। ওই রাতে আমাদের অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছে।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘আমরা ভবনটির চতুর্থতলায় পৌঁছানো না পর্যন্ত পানি বাড়ছিল। দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত পানি উঠেছিল। আমরা চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম। জানালা থেকে আমি গাড়ি ও মরদেহগুলোকে ভেসে যেতে দেখেছিলাম। এটি এক বা দেড় ঘণ্টার মতো স্থায়ী ছিল। কিন্তু, আমাদের জন্য এটি এক বছরের মতো মনে হয়েছিল।’
এএফপি জানিয়েছে, ডেরনার কাদামাখা রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে শতাধিক লাশের ব্যাগ রাখা হয়েছে। মরদেহগুলোকে গণকবর করা হবে। শোকাহত বাসিন্দারা নিখোঁজ প্রিয়জনদের খোঁজ করছে। আর বুলডোজার দিয়ে ধ্বংসাবশেষ ও কাদাময় রাস্তা পরিষ্কার করে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।’
এএফপির সংবাদাতা বলেন, ‘একটি বাড়িতে পানি ঢুকে গিয়েছিল। সেই পানি সরাতে বাড়িতে একটি পাম্প বসায় উদ্ধারকারীরা। পানি সরে গেলে এক নারী ও এক শিশুর মরদেহ পাওয়া যায়। ওই শিশুটির হাত আকড়ে ধরেছিলেন ওই নারী, যিনি সম্ভবত ওই শিশুর মা।’
ডেরনায় যখন এই আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়, ঠিক তখনই শহরটিতে রেড ক্রসের একটি প্রতিনিধি দল ছিল। লিবিয়ায় রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির প্রতিনিধি দলের প্রধান ইয়ান ফ্রিডেজ বলেন, ‘এই বিপর্যয়টি হিংস্র ও নিষ্ঠুর ছিল। সাত মিটার বা ২৩ ফুট উচ্চতার ঢেউ ভবনগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। অনেক অবকাঠামো সমুদ্রে ভেসে গেছে। ভেসে যাওয়াদের মরদেহগুলো তীরে ভেসে আসছে।’
লিবিয়ার চিহা এলাকার কাছেই থাকতেন আবদেলআজিজ-বাউসম্যা। ওই এলাকার আশপাশের জেলাগুলো বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, শহরটির এক দশমাংশ বাসিন্দা বন্যার জেরে মারা গেছেন। ২৯ বছর বয়সী বাউসম্যা বলেন, ‘আমি আমার বন্ধুদের হারিয়েছি। আমার প্রিয়জনকে হারিয়েছি। তারা সবাই মাটির নিচে চাপা পড়ে গেছে বা বন্যার পানিতে সমুদ্রে ভেসে গেছে।’