দোকান থেকে চুরির অভিযোগে নিউজিল্যান্ডে এমপির পদত্যাগ
পোশাকের দোকান থেকে চুরি করার একাধিক অভিযোগ ওঠার পর পদত্যাগ করেছেন নিউজিল্যান্ডের একজন সংসদ সদস্য। অভিযোগগুলো তদন্ত করছে পুলিশ।
গ্রিন পার্টির এমপি গোলরিজ ঘহরমানের বিরুদ্ধে অকল্যান্ড ও ওয়েলিংটনের দুটি পোশাকের দোকান থেকে তিনবার চুরি করার অভিযোগ রয়েছে। খবর বিবিসির।
জাতিসংঘের সাবেক মানবাধিকার বিষয়ক এই আইনজীবী ২০১৭ সালে শরণার্থী হিসেবে দেশটির এমপি নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন। তিনি বলেন, কাজ সম্পর্কিত চাপের কারণে তিনি নিজের চরিত্রের সঙ্গে যায় না এমন কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন।
এজন্য ক্ষমা চেয়ে সংসদ সদস্য গোলরিজ ঘহরমান বলেন, ‘আমি অনেক মানুষকে হতাশ করেছি এবং আমি অত্যন্ত দুঃখিত।’
ঘহরমান শৈশবে তার পরিবারের সঙ্গে ইরান থেকে পালান। তাদেরকে নিউজিল্যান্ডে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) প্রকাশিত এক সিসিটিভি ফুটেজে অকল্যান্ডের একটি বুটিক থেকে তার ডিজাইনার হ্যান্ডব্যাগ নেওয়ার দৃশ্য ধরা পড়ে। এরপরই পদত্যাগ করেন তিনি।
৪২ বছর বয়সী ঘহরমানের বিরুদ্ধে আগে কোনো অপরাধের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছ থেকে জনগণ যে উচ্চমানের আচরণ প্রত্যাশা করে, তার কর্মকাণ্ড সেটিকে ‘খাটো’ করেছে।
গোলরিজ ঘহরমান বলেন, ‘এই আচরণের ব্যাখ্যা নেই, কারণ এটি কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। চিকিৎসা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে আমি বুঝতে পারি, আমি সুস্থ নই।’ নিজের এই কাজের জন্য কোনো অজুহাত দিতে চান না বলেও জানান তিনি।
‘আমার মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসক বলেছেন, আমার সাম্প্রতিক আচরণগুলো সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেগুলো আমার ওপর চরম চাপ সৃষ্টি করেছে। একইসঙ্গে আমার পূর্বের ট্রমার সঙ্গে সম্পর্কিত’, বলেন এই নারী রাজনীতিবিদ।
গোলরিজ ঘহরমানের পদত্যাগের প্রতিক্রিয়ায় গ্রিন পার্টির নেতা জেমস শ বলেন, ‘পার্লামেন্টে নির্বাচিত হওয়ার দিন থেকেই তিনি যৌন সহিংসতা, শারীরিক সহিংসতা, প্রাণনাশের হুমকির মুখে পড়েছিলেন। এটি সংসদের অন্যান্য সদস্যদের অভিজ্ঞতার চেয়ে তার ওপর উচ্চপর্যায়ের চাপ যুক্ত করেছে।’
জেমস শ বলেন, ‘তিনি (গোলরিজ ঘহরমান) সংসদ সদস্য থাকার প্রায় পুরো সময়জুড়েই পাওয়া সেই হুমকিগুলোর বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করেছে। তাই স্পষ্টতই আপনি যদি সেই পর্যায়ের হুমকিতে বসবাস করেন ও বেশ চাপের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, তাহলে এর পরিণতিও আসবে।’
এর আগেও নিজের ইরানি বংশগত, লিঙ্গবৈষম্য জনিত এবং বিভিন্ন বিষয়ে নেওয়া অবস্থানের জন্য অনলাইনে ও ব্যক্তিগতভাবে নিপীড়নের শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন গোলরিজ ঘহরমান।
২০২১ সালে দেশটির জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যম টিভিএনজেডকে গোলরিজ ঘহরমান বলেছিলেন, ‘একপর্যায়ে আমি কিছু অনলাইন হুমকির সম্মুখীন হয়েছিলাম, যখন আমাকে একটি নিরাপত্তা অ্যালার্ম বহন করতে হয়েছিল। আর পার্লামেন্টের সামনে-পেছনে নিরাপত্তা বাহিনী তো আছেই।’
২০১৭ সালে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের হুমকির পরে ঘহরমানকে নিরাপত্তা বাহিনীর এসকর্ট সুবিধা দেওয়া হয়েছিল।
অতি সম্প্রতি গোলরিজ ঘহরমান ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার জন্য সমালোচিত হয়েছেন। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপের সমালোচনার জন্য গ্রিন পার্টির পররাষ্ট্র ও মানবাধিকার বিষয়ক মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকার জন্য সমালোচনার শিকার হন তিনি।
সহকর্মী গ্রিন পার্টির আরেক নেতা মারামা ডেভিডসন বলেন, এটা ঠিক যে ঘহরমান পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু এটা স্পষ্ট তিনি মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন এবং তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখবেন।
ডেভিডসন বলেন, ‘আমরা গত কয়েক বছর ধরে আলোচনা-সমালোচনাগুলো দেখেছি, বিশেষ করে পাবলিক প্রোফাইলের নারীদের সঙ্গে করা নির্দিষ্ট ধরনের আচরণের বিষয়ে এবং পাবলিক প্রোফাইলের অন্য বর্ণের নারীদের ক্ষেত্রে।’