৪৬.৪ কোটি ডলার জরিমানার বন্ড জোগাড় করতে পারেননি ট্রাম্প
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে নিউইয়র্কের এক জালিয়াতির মামলায় ৪৬৪ মিলিয়ন বা ৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার জরিমানা প্রদানের যে আদেশ দেওয়া হয়েছে, তার গ্যারান্টি দেওয়ার জন্য একটি প্রাইভেট কোম্পানি খুঁজে পাচ্ছেন না। সাবেক প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই তার আপিল প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য নগদে সম্পূর্ণ অর্থ প্রদান করতে হবে অথবা তাকে একটি বন্ড সিকিউরিটি হিসেবে দেখাতে হবে। ট্রাম্প বলেছিলেন, এই আকারের একটি বন্ড নিশ্চিত করা ‘বাস্তবে অসম্ভব’।
এই অর্থ পরিশোধ না করা পর্যন্ত ট্রাম্প তার কিছু রিয়েল এস্টেট সম্পদ হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। ফি হিসেবে অন্তত একটি বন্ডিং কোম্পানিকে নিউইয়র্কের আদালতে সম্পূর্ণ অর্থের গ্যারান্টি (নিশ্চয়তা) দিতে হবে। ট্রাম্প যদি তার আপিলে হারে যান এবং নিজে যদি তা পরিশোধ করতে না পারেন, তাহলে তাদের তা দিতে হবে।
বিবৃতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তাকে যে বন্ড দিতে বলা হয়েছে, তা তার একটি সফল প্রতিষ্ঠানসহ যেকোনো সংস্থার পক্ষে অসম্ভব।
ট্রাম্পের আইনজীবীরা আদালতে এক আবেদনে উল্লেখ করেন, তার একটি প্রতিনিধি দল বিশ্বের একটি বৃহৎ বিমা কোম্পানির সঙ্গে অগণিত ঘণ্টা দর-কষাকষি করেছে। কিন্তু তারা উপসংহারে পৌঁছেছে, খুব কম বন্ডিং কোম্পানি এই মাত্রার কাছাকাছি কোনো বন্ড বিবেচনা করবে। আইনজীবীরা আরও বলেন, তারা আরও ৩০টি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, কিন্তু সফল হননি। ট্রাম্পের দুই বড় ছেলেকেও এই মামলায় কয়েক মিলিয়ন ডলার জরিমান গুনতে হবে।
এই মামলায় ট্রাম্পকে জরিমানা প্রদানের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি তাকে তিন বছরের জন্য নিউইয়র্কে ব্যবসা পরিচালনা করতেও নিষেধাজ্ঞা দেন বিচারক আর্থার এনগোরন। তুলনামূলক বেশি ঋণ সুবিধা পেতে সাবেক প্রেসিডেন্ট কারসাজি করে সম্পদ বাড়িয়ে দেখিয়েছেন, এমন অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর এ আদেশ দেন বিচারক।
গত মাসে নিউইয়র্কের একজন বিচারক ট্রাম্পের ব্যবসা পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেন, কিন্তু তার জরিমানা কমিয়ে ১০০ মিলিয়ন ডলারের ছোট বন্ড প্রদানের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন।
সাবেক প্রেসিডেন্টের আইনজীবীরা নথিতে এবার একটি বেসরকারি বিমা সংস্থার প্রধানের হলফনামা অন্তর্ভুক্ত করেছেন, সেখানে তিনি বলেন, ‘সহজ কথায়, এই আকারের একটি বন্ড খুব বিরল, যদিওবা কখনো দেখা যায়।’
আইনজীবীরা আরও বলেন, ‘এটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। এই আকারের একটি বন্ড জারি করা হয় বিশ্বের বৃহত্তম পাবলিক সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রে, কোনো ব্যক্তি বা কোনো ব্যক্তিগত ব্যবসায় নয়।’
সাবেক ফেডারেল প্রসিকিউটর ডায়ানা ফ্লোরেন্স বলেছেন, ট্রাম্পের নজিরবিহীন আইনি পরিস্থিতিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন। এই মাত্রায় জরিমানা সাধারণত বড় কোম্পানির বিরুদ্ধে আরোপ করা হয়।
নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতারণার জরিমানা না দিলে ট্রাম্পের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি অর্থ প্রদান না করা পর্যন্ত জরিমানার সুদ প্রতিদিন কমপক্ষে এক লাখ ১২ হাজার ডলার করে যোগ হচ্ছে।
ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রায় ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ রয়েছে। গত বছর তার ৪০০ মিলিয়ন ডলারের তরল সম্পদ (হাতে নগদ, ব্যাংক আমানতের ওপর নগদ এবং দ্রুত ও সহজেই নগদে রূপান্তরিত করা যেতে পারে) রয়েছে বলে ঘোষণা করেছিলেন।
৪৬৪ মিলিয়ন ডলার জরিমানার রায়, সাবেক এই প্রেসিডেন্টের একমাত্র খরচ নয়। লেখিকা ই জিন ক্যারলের এক মানহানির মামলায় জানুয়ারিতে তাকে ৮৩ মিলিয়ন ডলার প্রদানের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এই মামলায় যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন ক্যারল। ওই মামলায় ট্রাম্প ইতোমধ্যে মুচলেকা দিয়েছেন।
ট্রাম্প সোমবার তার বিরুদ্ধে চলমান চার মামলার একটিতে আবারও আইনি ধাক্কা খেয়েছেন। নিউইয়র্কের একজন বিচারক এই মামলায় দুই প্রধান সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রদান ঠেকাতে সাবেক প্রেসিডেন্টের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন। মামলাটিতে তার বিরুদ্ধে গোপনে অর্থ প্রদানের বিষয়টি আড়াল করতে ব্যবসার নথিতে জালিয়াতি করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিচারক জুয়ান মার্চান বলেন, ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেন ও পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস আদালতে সাক্ষ্য দিতে পারবেন, যা এপ্রিলের মধ্যে শুরু হতে পারে।