আসন্ন ন্যাটো সম্মেলনকে ঘিরে ঘুরছে নানা প্রশ্ন
ইউরোপের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক পালাবদলের সম্ভাবনা ন্যাটোর গতিপথ প্রশ্নের মুখে ফেলছে৷ ইউক্রেনের জন্য সহায়তা অটুট রাখতে শীর্ষ সম্মেলন শুরুর আগেই উদ্যোগ চলছে৷ রাশিয়ার হামলার মুখে ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের লাগাতার সমর্থন এতদিন সম্ভব হলেও ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে কিছু রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা সেই নিশ্চয়তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে৷
সামরিক জোট ন্যাটোর ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আগামী ৯ থেকে ১২ জুলাই ওয়াশিংটনে শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনকে সহায়তার বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব পাবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ ফ্রান্সে সাধারণ নির্বাচনে উগ্র দক্ষিণপন্থি শিবিরের ক্ষমতায় আসা এবং যুক্তরাষ্ট্রে আগামী নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা সামরিক জোটের ঐক্য বড় প্রশ্নের মুখে ফেলছে৷ প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের প্রস্থান এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর রাজনৈতিক দুর্বলতা ন্যাটোর অনেক সিদ্ধান্ত প্রশ্নের মুখে ফেলবে৷
ন্যাটোর বিদায়ী মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ গুরুত্বপূর্ণ এই শীর্ষ সম্মেলনে বিঘ্ন এড়াতে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিচ্ছেন৷ তিনি একাধিক সদস্য দেশ সফর করে ঐকমত্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন৷ গত বছরের সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সুইডেনের প্রার্থিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ঐক্যে চিড় ধরিয়েছিলেন৷ এবারের সম্মেলনে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে আপত্তি জানাতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ বিশেষ করে, ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তার ক্ষেত্রে ন্যাটোর কেন্দ্রীয় ভূমিকার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন তিনি৷ তবে স্টলটেনবার্গের বুদাপেস্ট সফরের পর তিনি সেই উদ্যোগে বাধা সৃষ্টি না করার আশ্বাস দিয়েছেন৷ স্টলটেনবার্গের উত্তরসূরি হিসেবে নেদারল্যান্ডসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের প্রতিও শেষ পর্যন্ত সমর্থন দেখিয়েছেন ওরবান৷
ওরবানের মতো নেতার সম্মতি আদায় করা ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠলেও পশ্চিমা জোটের মূল দুশ্চিন্তা যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক পালাবদল নিয়ে৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার হোয়াইট হাউসে পা রাখলে ন্যাটোর ঐক্যে চিড় ধরতে পারে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ এখনও পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ‘রামস্টাইন প্রক্রিয়া’ নামের কাঠামোর আওতায় প্রায় ৫০টি দেশের সঙ্গে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সাহায্যের সমন্বয় করে চলেছে৷ ন্যাটো এখনও সরাসরি ইউক্রেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা না দিলেও ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে৷ তিনি ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তায় কাটছাঁট করলে ন্যাটোকেই হয়তো সেই ঘাটতি মেটাতে হতে পারে৷
ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা অটুট রাখতে নানা ধরনের আইনি নিশ্চয়তার উদ্যোগ চলছে৷ ইতালিতে জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন ১০ বছরের নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে৷ এর আওতায় ভবিষ্যতে ইউক্রেনে আবার হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে৷ তবে বাইডেনের আমলেও যুক্তরাষ্ট্র এবং সহযোগী দেশ জার্মানি ইউক্রেনের জন্য সহায়তার ক্ষেত্রে ‘অতি সতর্ক’ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে ন্যাটোর অনেক সদস্য মনে করে৷