জার্মানির জোট সরকার কি ভাঙনের পথে?
একের পর এক রাজ্য নির্বাচনে শোচনীয় ফলাফলের জের ধরে জার্মানির জোট সরকারের শরিক সবুজ দলের নেতৃত্ব পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ জোটের অন্য দলের মধ্যেও অস্থিরতা বাড়ায় সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷
চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের নেতৃত্বে জার্মানির তিন দলের জোট সরকার প্রায় তিন বছর পূর্ণ করেছে৷ একের পর এক সংকট, জোটসঙ্গীদের মধ্যে প্রকাশ্যে কোন্দল, ভোটারদের অনীহার মতো কারণে সরকার আরো এক বছর টিকে থাকতে পারবে কি না, সেই প্রশ্ন বারবার উঠছে৷ পর পর তিনটি রাজ্য নির্বাচনে খারাপ ফলাফলের দায় নিয়ে সরকারের শরিক সবুজ দলের নেতৃত্ব যৌথভাবে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ দলের যুব শাখার নেতৃত্ব আরো এক ধাপ এগিয়ে পদত্যাগের পাশাপাশি দলত্যাগেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
শলৎসের নেতৃত্বে জোট সরকারের দ্বিতীয় শক্তিশালী দল হিসেবে গ্রিন পার্টির এই কড়া পদক্ষেপ জার্মানির রাজনীতি জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করছে৷ দলের যুগ্ম শীর্ষ নেতা রিকার্ডা লাং এবং ওমিদ নুরিপুর বুধবার বলেন, সবুজ দলের নতুন সূচনা প্রয়োজন৷ নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি দলীয় সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন৷ দলের অন্যতম নেতা ও জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলর রোব্যার্ট হাবেক তাদের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন৷ সবুজ দলের নেত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেন, মানুষের আস্থা ফিরে পেতে কাজ করতে হবে৷ তবে আপাতত কোনো নেতাই জোট সরকার ছেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন না৷
জার্মান অর্থনীতির বর্তমান সংকটের জন্য জার্মান রাজনীতি জগতের একাংশ সবুজ দলের পরিবেশবাদী নীতিকে দায়ী করছে৷ জীবাশ্ম জ্বালানি ত্যাগ করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের জন্য চাপের কারণে জার্মানির শিল্প ও বাণিজ্যজগতের ক্ষতি হচ্ছে বলে সবুজ দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে৷ ভোটারদের মনেও দলের প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে৷
চ্যান্সেলর শলৎসের এসপিডি দলের অবস্থাও তেমন ভালো নয়৷ সরকার প্রধান হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তাও তলানিতে এসে ঠেকেছে৷ গত সপ্তাহান্তে ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যের নির্বাচনে অবশেষে এসপিডি দল আবার সাফল্যের মুখ দেখলেও সেই রাজ্যের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রীর কারণেই সেটা সম্ভব হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সংশয় নেই৷ এমনকি ২০২৫ সালে শলৎসকে আবার চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী করা হবে কিনা, দলের মধ্যে সে বিষয়েও তর্কবিতর্ক চলছে৷
জার্মানির জোট সরকারের সবচেয়ে ছোট শরিক এফডিপি দলের মধ্যেও সংকট দানা বাঁধছে৷ একের পর এক নির্বাচনে সেই দলও সমর্থন হারিয়ে চলেছে৷ ফলে জনপ্রিয়তা ফিরে পেতে দলের মধ্যে সরকার ত্যাগ করার দাবি বাড়ছে৷ দলের নেতা ও অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার অবশ্য ক্ষমতা ছাড়ার কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছেন না৷ দলের কিছু নেতা মনে করছেন, সরকার ত্যাগ করলে উদারপন্থি এই শক্তি জার্মানির রাজনৈতিক মঞ্চে আরো কোণঠাসা হয়ে পড়বে৷