গাঁজার ‘নিয়ন্ত্রিত’ ব্যবহারের অনুমতি দিতে যাচ্ছে জার্মানি
গাঁজার নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের বৈধতা দিতে যাচ্ছে ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ জার্মানি। এ সংক্রান্ত একটি খসড়া আইন আজ বুধবার (১৬ আগস্ট) পাস করেছে জার্মান সরকার। এই আইনের ফলে, বিনোদনের জন্য দেশটিতে গাঁজা কেনা ও সঙ্গে রাখা যাবে। খবর এএফপির।
প্রতিবেদনে ফরাসি সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, নতুন আইনের ফলে জার্মানির একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোক ২৫ গ্রাম বা শূন্য দশমিক ৯ আউন্স গাঁজা নিজের সঙ্গে রাখতে পারবেন। ব্যক্তিগত কারণে তিনটি পর্যন্ত গাছ রোপণ করতে পারবেন প্রাপ্তবয়স্ক জার্মানরা। এ ছাড়া অলাভজনক সংস্থা ‘ক্যানাবিস ক্লাবেও’ যোগ দিতে পারবেন তারা। এসব ক্লাবে বৈধভাবে গাঁজা চাষ ও বিক্রি হয়ে থাকে।
এদিকে, জার্মান সরকারের প্রস্তাবিত খসড়া আইনটি দেশটির পার্লামেন্ট থেকে পাস হতে হবে। এরপরেই এটি আইন আকারে বাস্তবায়িত হবে। আর বর্তমানে পার্লামেন্টের সদস্যরা গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে রয়েছেন। ছুটি শেষে পার্লামেন্ট শুরু হবে আগামী ৪ সেপ্টেম্বরে।
জার্মান সরকারের পাসকৃত খসড়া আইনটিকে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বলে আখ্যায়িত করেছে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী কার্ল লাউটারবাখ। তিনি বলেন, ‘এই আইনের ফলে গাঁজার প্রতি জার্মানদের মনোভাব পরিবর্তন হবে।’
বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই আইনের ফলে আইন প্রয়োগকারীদের ওপর থেকে বোঝা কমবে। নিরাপদে গাঁজা সেবনের অনুমতি দেবে। পাশাপাশি কালোবাজারি এবং মাদক সম্পর্কিত অপরাধীদের দমন করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে কার্ল লাউটারবাখ বলেন, ‘আইনে কিন্তু নাবালকদের গাঁজা সেবন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকার এই নিয়ে একটি ক্যাম্পিং চালাবে। যেখানে বিশেষ করে যুবকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে প্রচারণা চালানো হবে। আমরা গাঁজার সেবন কমাতে ও নিরাপদ করতে চাইছি।’
প্রতিবেদনে এএফপি আরও জানিয়েছে, প্রস্তাবিত আইনটি চ্যান্সেলর ওলফ শলৎসের বামপন্থী জোটের একটি প্রকল্প। গাঁজা নীতি নিয়ে ইউরোপের সবচেয়ে উদার দেশে পরিণত হবে জার্মানি।
নিবন্ধিত দোকানে গাঁজা বিক্রির চিন্তা ছিল জার্মানির। কিন্তু এ নিয়ে উদ্বেগ জানায় ইউরোপীয় কমিশন। এর জেরে গত এপ্রিলে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসে জার্মানি।
এদিকে, জার্মান সরকার খসড়া আইনটি পাস করলেও এর বিরোধীতা করছে রক্ষণশীল রাজনীতিবিদরা। তাদের সঙ্গে রয়েছে চিকিৎসকও আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারাও।
বাভারিয়া প্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ডানপন্থী দল সিডিইউর নেতা ক্লুয়াস হোলেটচেক খসড়া আইনটিকে ‘দায়িত্বহীন’ বলে আখ্যা দিয়েছে। এই খসড়া আইনের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে দেশটির শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সংগঠন দ্য প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ পেডিয়াট্রিশিয়ানস। বিবৃতি দিয়েছে আরও কয়েকটি ইয়ুথ হেলথকেয়ার অ্যাসোসিয়েশনও। সংগঠনগুলো বলছে, এই আইনের ফলে যুবকরা গাঁজা সেবনে উৎসাহী হয়ে উঠবে।
পুলিশ ইউনিয়ন ও বিচারকরাও এই আইনের সমালোচনা করেছে। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার ব্যবস্থায় আরও চাপ বাড়বে বলে মত তাদের।