হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি, বাড়ি ফিরছে হাজারো জনতা
লেবাননে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়া ১০ হাজারেরও বেশি লোক গতকাল বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) থেকে ধ্বংস হয়ে যাওয়া গ্রাম ও শহরগুলোতে ফিরতে শুরু করেছে। যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া পক্ষ দুটির মধ্যে অস্ত্রবিরতি চুক্তি হওয়ার পরপরই ওই সব লোকজন তাদের নিজ নিজ ঠিকানায় ফিরতে পারছে। খবর এএফপির।
চুক্তির শর্তানুসারে, সংঘাতের এই সাময়িক বিরতিতে লেবাননের সামরিক বাহিনী দেশটির দক্ষিণে তাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে কাজ শুরু করেছে। এখানকার বিস্তীর্ণ এলাকায় হিজবুল্লাহ তাদের প্রভাব খাটিয়ে আসছিল।
গত বছরের অক্টোবরে ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হামলার মাধ্যমে গাজায় যে যুদ্ধ শুরু হয়, তাতে হামাসের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে লেবাননের সীমান্তে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সংঘাত। লেবাননে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলায় মারা যায় কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি সীমান্তজুড়ে গণহারে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ে হাজার হাজার মানুষ।
গত সেপ্টেম্বরে ইসরায়েল গাজা উপত্যকা থেকে তার দৃষ্টি সরিয়ে নেয় লেবাননের দিকে। নিজেদের উত্তর সীমান্তকে হিজবুল্লাহর হামলা থেকে রক্ষায় লেবাননে বেশ কয়েকটি বড় অভিযানও চালায় তারা।
অব্যাহত ইসরায়েলি হামলায় ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া এ সময় তাদের শীর্ষ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন।
তবে এত কিছুর পরেও গতকাল বুধবার হিজবুল্লাহ এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘বিজয়ের’ ঘোষণা দিয়েছে। বিবৃতিকে তারা বলে, সর্বশক্তিমান আল্লাহর রাস্তায় সঠিকভাবে থাকার কারণেই এই বিজয় অর্জিত হয়েছে।
হিজবুল্লাহর আইনপ্রণেতা হাসান ফাদলাল্লাহ বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, তার দল দক্ষিণ লেবাননে সেনাবাহিনী মোতায়েনে সহযোগিতা করছে।
এদিকে, লেবাননের রাজধানী বৈরুত থেকে দেশের দক্ষিণে যাওয়ার রাস্তাটিতে ভোর থেকেই বাড়ি ফিরতে থাকা মানুষের ভিড়ে প্রচণ্ড যানজট দেখা দেয়। ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাসে তোষক, স্যুটকেস, কম্বল নিয়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় হর্ন বাজিয়ে গান গেয়ে বাড়িফেরার মুহূর্তটি উপভোগ করছিল।
একজন লেবাননবাসী গাড়িচালক বলেন, ‘আমরা যা অনুভব করছি, তা বর্ণনা করা সম্ভব নয়।’ আরেকজন নাগরিক এ সময় বলেন, ‘জনগণের বিজয় হয়েছে।’
অন্যদিকে আলি মাজরানি নামে লেবাননের দক্ষিণের শহর নাবাতিয়েহর এক অধিবাসী বলেন, তিনি ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার ভয়াবহতা দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেছেন। শহরে ফিরে তিনি বলেন, ‘এটা কি সত্যি নাবাতিয়েহ? নাবাতিয়েহকে নিয়ে আমাদের সব স্মৃতি হারিয়ে গেছে আর আমরা আমাদের নিজেদের শহরকেই এখন চিনতে পারছি না।’
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাড়িছাড়া হয়েছেন লেবাননের প্রায় ৯ লাখ অধিবাসী।