মার্কিন সহায়তা কাটছাঁটে হুমকির মুখে পড়বে লাখো জীবন : ডব্লিউএইচও

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস ওয়াশিংটনের প্রতি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতে সহায়তা প্রদানে কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সাহায্য কার্যক্রম হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লাখ লাখ মানুষের জীবন বিপন্ন হবে।
সোমবার (১৭ মার্চ) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে গেব্রেয়াসুস বলেন, ‘বৈশ্বিক স্বাস্থ্যখাতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিষয়টিকে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছি আমরা।’ তিনি জানান, সাহায্য কাটছাঁটের কারণে কেবলমাত্র বৈশ্বিক এইচআইভি কর্মসূচিতে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে গত ২০ বছরের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করবে। এর ফলে অতিরিক্ত এক কোটিরও বেশি এইচআইভি সংক্রমণ বাড়তে পারে এবং এ রোগে ৩০ লাখেরও বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে। খবর এএফপির।
গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদেশে সবধরনের সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন আর এর ফলে সারা বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য খাতে মার্কিন সহায়তা প্রদানে স্থিতাবস্থা তৈরি হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের ফলে ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বপরিমণ্ডলে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে আসা দেশটির অবস্থান সমগ্র মানব সম্প্রদায়কে বিপাকে ফেলে দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান গেব্রেয়াসুস এ বিষয়ে হুঁশিয়ার করে বলেন, ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) এবং ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) - এই দুই সংস্থার আর্থিক সহায়তায় যে সব কাজ চলছে বিশ্বজুড়ে তাতে ভীষণ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি আরও বলেন, বছরের পর বছর ধরে এইচআইভি থেকে শুরু করে হাম বা পোলিও নির্মূলে যে কাজ চলছে তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস বলেন, ‘এই মুহূর্তে ম্যালেরিয়া রোগ শনাক্তের কাজ খুব বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি ওষুধ ও কীটনাশকের মজুদ শেষ হয়ে আসছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত দুই যুগেরও বেশি সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ছিল ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধান অর্থ লগ্নিকারী দেশ। তাদের তৎপরতার কারণে ২২০ কোটি ম্যালেরিয়ার রোগী চিকিৎসা পেয়েছে আর জীবন বাঁচানো গেছে ১ কোটি ২৭ লাখ মানুষের।’
গেব্রেয়াসুস সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘যদি সহায়তা কাজে বিঘ্ন চলতেই থাকে তবে আগামী ১৫ বছরে দেড় কোটি ম্যালেরিয়া রোগীর চিকিৎসা এবং এক লাখ ৭ হাজার মানুষের জীবন বিপন্ন হবে।’ তিনি আরও জানান, এইচআইভি’র ক্ষেত্রেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে ৫০টিরও বেশি দেশে ইতোমধ্যে এইচআইভি শনাক্ত করার পরীক্ষা, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া আরও আটটি দেশে এন্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি এবং এর জন্য ওষুধ সরবরাহ কাজ কয়েক মাসের মধ্যে সঙ্কটে পড়তে পারে।

গ্রেব্রেয়াসুস বলেন, গত দুই যুগে যক্ষা রোগের চিকিৎসার মাধ্যমে আট কোটিরও বেশি মানুষের জীন বাঁচানো গেছে। কিন্তু এখন এই তৎপরতাও হুমকির মুখে। তিনি আরও জানান, একই সময়ে হাম এবং রুবেলা প্রতিষেধক টিকার কাজে বিশ্বের ৭০০টিরও বেশি পরীক্ষাগার একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পরিচালিত হতো, কিন্তু বর্তমানে সেগুলোও বন্ধ হওয়ার মুখে।
গত ৫০ বছরে হামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি মানুষের জীবন রক্ষা করা গেলেও সেসব অর্জন এখন হুমকির মুখে পড়েছে উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান আরও বলেন, এখনকার সময়টা হলো সবচেয়ে খারাপ কেননা হামের প্রকোপ আবারও শুরু হতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।