সামরিক চ্যাট ফাঁসের দায় স্বীকার করেছেন ওয়াল্টজ : ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ ‘গোপন চ্যাট’ ফাঁসের দায় স্বীকার করেছেন। স্থানীয় সময় বুধবার (২৬ মার্চ) ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয়, মাইক ওয়াল্টজ দায় (গোপন তথ্য ফাঁসের) স্বীকার করেছেন। আমাকে বলা হয়েছে, এটি মাইকের কাজ ছিল।’ খবর বিবিসির।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘ওয়াল্টজ দায়িত্ব নিয়েছেন, আমার অন্য কোনো কর্মকর্তা এতে জড়িত নন।’
এ সময় প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথের প্রশংসা করে ট্রাম্প বলেন, ‘হেগসেথ দুর্দান্ত কাজ করছেন। তার এর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।’
এর আগে গত সোমবার (২৪ মার্চ) মেসেজিং অ্যাপ সিগন্যালে মার্কিন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জন্য খোলা একটি গোপন সামরিক চ্যাট গ্রুপের তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। সেখানে ইয়েমেনে সামরিক হামলা চালানোর মতো স্পর্শকাতর তথ্য ছিল, যা মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য আটলান্টিক’ প্রকাশ করে।

তবে বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন না ট্রাম্প। তিনি বলেন, সিগন্যাল চ্যাট ফাঁস হওয়ার ঘটনা তাকে বিব্রত করছে না।
এ সময় মেসেজিং অ্যাপের ওপর দায় চাপিয়ে ট্রাম্প আরও বলেন, “সবাই সিগন্যাল ব্যবহার করে, তবে এটি ‘ত্রুটিপূর্ণ’ প্ল্যাটফর্ম হতে পারে। আমাদের এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে।” তবে তিনি এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।
হুতিদের বিরুদ্ধে সামরিক হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সফলতা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ট্রাম্প বলেন, ‘এটি আমাদের কল্পনার চেয়েও বড় সাফল্য ছিল।’ এ সময় তিনি হুতিদের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা ‘দীর্ঘ সময় ধরে’ চলানোর ঘোষণা দেন।
ঘটনার সূত্রপাত
পাবলিক মেসেজিং অ্যাপ ‘সিগন্যাল’ গোপনীয়তা রক্ষার জন্য এনক্রিপশন ব্যবহার করে। এই অ্যাপটি ব্যবহার করেই মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তারা ইয়েমেনে হুতিদের ওপর সামরিক হামলার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ ভুলবশত দ্য অ্যাটলান্টিকের সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গকে গ্রুপ চ্যাটে আমন্ত্রণ জানান। এখান থেকেই কেলেঙ্কারির সূত্রপাত হয়।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য আটলান্টিক’ এর প্রধান সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গ জানান, তাকে হঠাৎ করেই সিগন্যাল মেসেজিং অ্যাপের একটি চ্যাট গ্রুপে যুক্ত হওয়ার আমন্ত্রণ করা হয়। ‘হুটি পিসি স্মল গ্রুপ’ নামের ওই চ্যাট গ্রুপে ইয়েমেনে সামরিক অভিযান নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল।
গোল্ডবার্গ দাবি করেন, হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ওই গ্রুপে অপারেশন সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পোস্ট করেন। সেখানে সম্ভাব্য হামলার লক্ষ্যবস্তু, ব্যবহৃত অস্ত্র এবং হামলার ধাপে ধাপে পরিকল্পনার তথ্য উল্লেখ ছিল। পরবর্তীতে ১৫ মার্চ ইয়েমেনে হামলা চালানো হয়। দেখা যায়, চ্যাট গ্রুপে যেভাবে হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, সেভাবেই হামলা হয়েছে।
এই ঘটনায় মার্কিন রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভুলবশত এই ঘটনা ঘটলেও এর মাধ্যমে মার্কিন সামরিক পরিকল্পনার মতো স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।