ওয়াকফ আইনবিরোধী বিক্ষোভে রণক্ষেত্র মুর্শিদাবাদ, নিহত ৩

ভারতের বিতর্কিত ওয়াকফ (সংশোধন) আইন ২০২৫-এর বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার (১২ এপ্রিল) পুলিশ জানিয়েছে, এই সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। খবর এনডিটিভির।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া সহিংসতায় এ পর্যন্ত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাটির মোট ১১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশের আইন ও শৃঙ্খলা বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) জাওয়েদ শামিম জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে দুইজন সংঘর্ষে ও একজন গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ জঙ্গীপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে।
এদিকে প্রতিবেশী রাজ্য ত্রিপুরার উনাকোটি জেলাতেও ওয়াকফ (সংশোধন) আইন বাতিলের দাবিতে অনুষ্ঠিত একটি প্রতিবাদ মিছিল সহিংস রূপ নিলে কমপক্ষে ১৮ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন যে, এই আইন রাজ্যে কার্যকর হবে না। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের (টুইটার) এক পোস্টে বলেন, ‘এই বিষয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট—আমরা এই আইনকে সমর্থন করি না। এই আইন আমাদের রাজ্যে কার্যকর হবে না। তাহলে এই দাঙ্গা কীসের?’
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য এমন সময়ে এসেছে যখন রাজ্যের একাধিক অঞ্চল, বিশেষত মুর্শিদাবাদ গত কয়েকদিন ধরেই ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন ঘিরে উত্তপ্ত। তিনি শান্তি ও সম্প্রীতির আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই আইন কেন্দ্রীয় সরকার পাস করেছে। ধর্মকে রাজনৈতিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে দাঙ্গা উসকে দেওয়ার জন্য কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান মমতা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘যারা আন্দোলন করছেন, মনে রাখবেন এই আইন আমরা করিনি। কেন্দ্রীয় সরকার করেছে। উত্তর তাদের কাছ থেকেই চাইতে হবে।’
ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ (লোকসভা সদস্য) ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও শান্তির বার্তা দিয়েছেন। তিনি ‘কিছু শক্তি ধর্মের নামে বিভাজন তৈরি করে বাংলায় অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে’ বলে অভিযোগ করেন।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘উন্নয়নের ইস্যুতে আমাদের হারাতে না পেরে এখন ধর্মের নামে বাংলায় অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। আমি সকলকে শান্তি বজায় রাখতে ও বাংলার ঐতিহ্য রক্ষায় সচেতন থাকার আহ্বান জানাই। কিছু মানুষ চাইছে বাংলায় আগুন লাগুক।’

গতকাল শুক্রবার মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও হুগলি জেলায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশ ভ্যানসহ একাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে, নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করে।
পুলিশ মহাপরিচালক রাজীব কুমার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘প্রতিবাদের নামে কেউ আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি সুকান্ত মজুমদার তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে মুর্শিদাবাদে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেন, ‘বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় এলে সংখ্যালঘুদের একাংশের এই ধরনের ভাঙচুর পাঁচ মিনিটের মধ্যে থেমে যাবে।’
এই বিজেপি নেতা আরও অভিযোগ করেন, সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক ২৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের প্রতিবাদ থেকে জনগণের দৃষ্টি ঘোরানোর উদ্দেশ্যেই এই সহিংসতা ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হতে পারে।
কংগ্রেস নেতা রাশিদ আলভি কেন্দ্রের ধর্মীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপকেই মুর্শিদাবাদের এই অস্থির পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন। একই সঙ্গে এই অবস্থার জন্য বিজেপিকেই সরাসরি অভিযুক্ত করেছেন।
উল্লেখ্য, ওয়াকফ (সংশোধন) বিলটি গত ২ ও ৩ এপ্রিল যথাক্রমে লোকসভা ও রাজ্যসভায় পাস হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ৫ এপ্রিল এতে সম্মতি দেন। এরপর এটি আইনে পরিণত হয়। দেশটির মুসলমানরা এই আইনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানালেও বিজেপি আগামী ২০ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত ‘ওয়াকফ সংস্কার সচেতনতা অভিযান’ শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। এই অভিযানের মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়কে এই আইনের ‘সুবিধা’ সম্পর্কে অবহিত করা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলটি।