নেকারের তীরে বাংলা ভাষা চর্চা
হাইডেলবার্গ শহর থেকে ৪০ মিনিটের ড্রাইভিং দূরত্বে অবস্থিত মধ্যযুগে গড়ে ওঠা আরেক শহর ল্যাডেনবার্গে নেকার (Neckar) নদীর তীরে আমি ও অধ্যাপক ড. হ্যান্স হার্ডার দাঁড়িয়েছিলাম। তখন রাত ৮টা বাজে। কিন্তু সূর্যের আলো নদীর স্রোতে ঝলমল করছে। কিছুদূরে নদীর ওপর রেলসেতু দিয়ে একটি ট্রেন পার হচ্ছে। সেদিকে আমি হ্যান্সের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বললেন, মাল গাড়ি যাচ্ছে। ‘মালগাড়ি’ শব্দটি এই জার্মানভাষী বাংলার অধ্যাপকের কণ্ঠে শুনে খুশি হলাম। তাহলে তিনি বাংলা ভাষাকে অনেক গভীর অনুশীলনে আত্মস্থ করেছেন বুঝলাম। অবশ্য সেদিন সকালে তাঁকে ক্লাসে বাংলা পড়াতে দেখেছি। তিনি ও সহকারী অধ্যাপক চৈতী বসু উভয়ে শিক্ষার্থীদের ধরে ধরে উচ্চারণ করে বাংলা বলতে ও বুঝতে সাহায্য করছিলেন।
বাংলা ভাষার জন্য তাঁদের আন্তরিকতা দেখে খুব ভালো লেগেছে। চৈতী কলকাতার মেয়ে, বাংলাদেশের জন্য তাঁর গভীর টান আছে। আর ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক বাংলা একাডেমির গ্রন্থমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হ্যান্স হার্ডারের বক্তৃতা বাংলায় শুনেছি বলেই তাঁর সঙ্গে আমার যোগাযোগ গড়ে উঠেছে। তিনি প্রকৃতপক্ষেই একজন নিষ্ঠাবান বাংলা ভাষাপ্রেমী। তবু জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটে বসে বাংলা ভাষা চর্চা ও গবেষণা একটি কঠিন কাজ। হ্যান্সের প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও বাংলাভাষার দেশগুলোতে জার্মানির ছাত্রছাত্রীদের বাংলা শেখানোর ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এ নিয়ে যথার্থ সহযোগিতার পাওয়ার আশায় আছেন তাঁরা।
২.
৩ জুলাই (২০১৭) দুপুরে হাইডেলবার্গ শহরে পৌঁছে হোটেলে থিতু হয়ে বসার কিছুক্ষণ পর সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চৈতী বসু এসে হাজির। কিছুক্ষণ বাদে অধ্যাপক হ্যান্স এলেন। তিনি অন্য একটি কাজের ব্যস্ততার কারণে চলে গেলেন। তবে চৈতী তাঁর স্বামী বিজয়সহ আমাকে শহরের কিছুটা পথ হাঁটিয়ে নিয়ে এলেন। প্রায় দেড় লাখ মানুষের শহর এটি। পুরোনো দিনের বাড়িঘর, সরু গলি ও পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা রাস্তাগুলো হাইডেলবার্গকে দিয়েছে সৌন্দর্যের এক নতুন ছোঁয়া। নেকার নদীর তীরে হাইডেলবার্গ শহরটি অবস্থিত। এখানে আছে বেশ কিছু পুরোনো বাড়িঘর, সুসজ্জিত পার্ক ও দৃষ্টিনন্দিত বাগান। এই শহরে রয়েছে ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়, যার মধ্যে স্বনামধন্য একটি হচ্ছে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, যার চিকিৎসা বিভাগ খুবই জনপ্রিয়। সেখানকার সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটে এসেছি আমি বক্তৃতা করতে। দেখলাম হাইডেলবার্গে সবকিছু কাছাকাছি আর মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় হেঁটে বা সাইকেলে চড়ে যেতে পারেন।
হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় বা রুপ্রেশ্ট-কার্লস-উনিভার্যিটেট, হাইডেলবার্গ হচ্ছে জার্মানির হাইডেলবার্গে অবস্থিত একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণাই যার মুখ্য কাজ। ১৩৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় জার্মানির সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় ও রোমান সাম্রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত তিনটি বিশ্ববিদ্যলয়ের একটি। ১৮৯৯ সাল থেকে এখানে কো-এডুকেশন প্রচলিত হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুষদ সংখ্যা ১২। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট, গ্র্যাজুয়েট, ও পোস্টগ্র্যাজুয়েট লেভেলে প্রায় ১০০টি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এটি জার্মান এক্সেলেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত। সেই সঙ্গে এটি লিগ অব ইউরোপিয়ান রিসার্চ ইউনিভার্সিটিস ও কোইম্ব্রা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বিশ্ববিদ্যালয়টি অনেক প্রাচীন হওয়ার কারণে, এটার কোনো কেন্দ্রীয় ক্যাম্পাস নেই, বরং ছড়িয়ে রয়েছে শহর জুড়ে। ন্যাচারাল সায়েন্সের ক্যাম্পাসটি তাদের নিজেদের জেলা Neuenheimer Feld-এ অবস্থিত। হাইডেলবার্গ এ বেশ কিছু মেডিসিন ও স্বাস্থ্য সংস্থা রয়েছে, যেগুলো শহরটির বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছে ও বেশ সুনাম অর্জন করেছে। জার্মানির ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট DKFZ-এর হেড অফিস হাইডেলবার্গে অবস্থিত। এখানকার সবচেয়ে পুরোনো বিল্ডিংটি হচ্ছে হোটেল Ritter, যেটি তৈরি করা হয়েছিল ১৫৯২ সালের দিকে। কেউ যদি এই পুরোনো ভবনটিতে থাকতে চান, তাহলে আগেভাগেই বুক করে রাখতে হয়।
হাইডেলবার্গে রয়েছে অনেক পুরোনো সুন্দর স্থান যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে অন্যান্য শহরের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। সে জন্য এগুলো রয়েছে অক্ষত ও সংরক্ষিত। শহরের পুরাতন অংশে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি বিল্ডিং। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর এবং শিক্ষার্থীদের ক্যান্টিনও সেখানে। সরু রাস্তা ও নদীর তীর ঘেঁষে ছবির মতো সাজানো বাড়ি আর প্রাচীন চার্চের ঘণ্টাধ্বনি শুনতে শুনতে যেকেউ অন্য রকম অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। শহরের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের ওপরে বরাবর একটি রাস্তা চলে গেছে, রাস্তা কিংবা পাহাড়ি রেলের কাঠের কারে চড়ে ওপরে যাওয়ার পর পুরো শহরটিকে ও এর বিল্ডিংগুলোর পুরো ভিউটা মনোরম দেখতে লাগবে। এই জায়গাটি ভ্রমণপিপাসু একজন মানুষকে চরমভাবে মুগ্ধ করে। উঁচু পাহাড়ের মাঝামাঝি অংশে রয়েছে প্রাচীন রাজপ্রাসাদের দুর্গ।
ক্যাসেলের ধ্বংসাবশেষের জন্য হাইডেলবার্গের বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। দেখলাম পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শক এখানে এসেছে সৌন্দর্য উপভোগের জন্য। পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত ভাঙা প্রাসাদ কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও দেখা যায়, মাঝেমধ্যে মনে হয় শহরটির ঠিক ওপরে কোনো এক রাজা সিংহাসনে বসে আছেন। অন্য একটি আকর্ষণীয় জায়গা হচ্ছে Saints' Mountain-এর ফিলোজফারস ওয়াক (the Philosophers' Walk )। সেই পথটিও দেখাতে নিয়ে গেছেন চৈতী। এই পাহাড় থেকে শহরের সমস্তটাই চোখে পড়ে। গ্রীষ্মের দুপুরে Philosophenweg-এর পাহাড়ে বসে সমস্ত শহরের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হলাম। বিশেষ করে সূর্যের আলো নদীর শরীরকে অদৃশ্য মায়ায় জড়িয়ে ধরেছে। পাহাড়ে অজানা পাখির ডাক। ঝোপঝাড়ে রহস্যময় গাছের পাতাঝরার শব্দ। এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা।
হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক শহরের প্রতিটি জায়গায় সাইকেলে বা হেঁটে ভ্রমণ করেন। নিজের গাড়ি থাকা সত্ত্বেও তাঁরা পছন্দ করেন সাইকেলের জন্য নির্দিষ্ট লেন ধরে প্যাডেল করতে। শহরের পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জায়গাগুলো খুব উঁচু-নিচু। চারদিকে ছড়ানো পাহাড়গুলো হাইডেলবার্গ শহর এবং এর আশপাশের এলাকাগুলোকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। নেকার নদীর আশপাশে সন্ধ্যায় ঘুরে বেড়ানোর সময় শহর এবং দুর্গের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা দারুণ একটি অভিজ্ঞতা। এই শহরটিতে বেশ কিছু ইংরেজি ভাষা চলে এমন জেলা রয়েছে, এর কারণ হলো বহু বছর ধরে মার্কিন সেনাবাহিনী এখানে অবস্থান করেছিল। জেলাগুলোর নাম দেখলে সহজেই তাদের বসবাসের জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে পারা যায়, যেমন : The Patrick Henry Village, হাইডেলবার্গ শহরের Bismarckplaty-এর জায়গাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেখানেই একটি হোটেলে আমার থাকার রুম ছিল। বের হলেই বাস ও ট্রামের দরোজা, যেকোনো জায়গার বাস বা ট্রাম এখান থেকে পাওয়া যায়। এখান থেকে Hauptsrasse যাওয়া যায়। এটি প্রায় ১.৬ কিলোমিটার লম্বা ও ইউরোপের সবচেয়ে বড় পথচারী এলাকা এবং এখানে সব ধরনের দোকান এবং রেস্টুরেন্ট রয়েছে।
আমি গিয়ে পৌঁছেছিলাম গ্রীষ্মকালের দুপুরে। কিন্তু বিকেলের রোদে হাঁটার সময় ঘামতে হয়নি। ৫ জুলাই দ্বিতীয় বক্তৃতার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি পিএইচডি গবেষক মিয়া মোস্তাফিজ নেকার নদীর তীরে সন্ধ্যা যাপনের জন্য নিয়ে যান। ও নদীর ধারে বিয়ার খেয়ে সময় কাটাতে পছন্দ করে। আর আমি নরম ঘাসের বুকে বসে থাকি, মানুষ দেখি, সেখানকার নর-নারীর আচরণ পর্যবেক্ষণ করি। দেখলাম নদীর তীরে ভলিবল খেলার জায়গাও রয়েছে, আবার কেউ কেউ ফুটবলও খেলছে। নদীর পাশে রাস্তায় জগিং করার জন্য খুবই চমৎকার। কোনো এক দম্পতিকে দেখলাম গিটার ও বেহালা নিয়ে নিজেদের মনের সুখে গান গাইছে। ভাষা না বুঝলেও ভালো লাগল তাদের সুর-লহরি। আমি নেকার নদী খুবই পছন্দ করে ফেলি। নদীঘেঁষে প্রচুর পরিমাণে ফুল রয়েছে। নদীর তীরে প্রাচীন ভবনগুলো স্বপ্নময় হয়ে জেগে আছে। পুরানো ব্রিজটি খুবই সুন্দর তাই ওখানে আমি চার রাতই হেঁটেছি।
৩.
৪ জুলাই ছিল আমার প্রথম বক্তৃতা। এটি ছিল ইউরোপের কোনো দেশে ইংরেজিতে প্রথম উপস্থাপনা। সকালে চৈতী বসু হোটেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে নিয়ে গেলেন আমাকে। হাইডেলবার্গ শহরের Bismarckplaty থেকে সহজেই সেখানে আমরা পৌঁছে গেলাম। ঘুরে দেখছিলাম ‘সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটে’র পুরো ভবনটি। ওদের ওয়েবপেজে আমার বক্তৃতার বিষয় ও সময় জানিয়ে পোস্টার দেওয়া হয়েছে। পরিচয় হলো রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. রাহুল মুখার্জির সঙ্গে। অবশ্যই মিয়া মুস্তাফিজের মাধ্যমে। কলকাতার রাহুল মুখার্জির বাংলাদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি আমেরিকা, সিঙ্গাপুর ও দিল্লিতে শিক্ষকতা শেষে এখানে এসে শেষ ঠিকানা গড়েছেন। আমার বক্তৃতায় উপস্থিত থাকতে না পারলেও ৬ জুলাই আমাকে দুপুরের আহার করাতে ক্যান্টিনে নিয়ে গেছেন এবং অনেকটা সময় দেশ-বিদেশের নানা প্রসঙ্গ আলোচনা করেছি তাঁর সঙ্গে। অবশ্য প্রথম দিন আরো অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। বিশেষত হিন্দি, উর্দু ভাষায় অভিজ্ঞ শিক্ষকদের সঙ্গে কিংবা ছাত্রছাত্রী যারা নিবেদিত জ্ঞান চর্চায়, তাদের সঙ্গে সময় কেটেছে। অবশ্যই সকলের মধ্যমণি ছিলেন ড. হ্যান্স হার্ডার। প্রথম দিন বক্তৃতার আগে দুপুরে তিনি বেশ কয়েকজন শিক্ষকসহ আমাকে দুপুরের খাবার খাইয়েছেন। দেখিয়েছেন তাঁদের অফিস ও ক্লাসরুম। বিকেল ৪টায় চৈতী বসু ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাদল সরকারের একটি নাটকের রিহার্সেল করছিলেন সেখানেও কিছুক্ষণ থেকেছি। বাংলা ছোটগল্পে ডাইনি চরিত্র নিয়ে ইংরেজিতে বক্তৃতার পর সেখানকার কয়েকজন শিক্ষকের প্রশ্ন আমাকে উদ্দীপিত করেছে। বুঝলাম এখানকার প্রত্যেকেই মনোযোগী শ্রোতা।
৫ তারিখে বাংলাদেশে জার্মান সাহিত্য চর্চা নিয়ে কথা বললাম। হ্যান্স বললেন, তাঁদের কাছে অনেক নতুন বিষয় উন্মোচিত হলো। কারণ তাঁরা জানলেও সব খবর রাখতে পারেননি। অনেককিছুই অজানা ছিল। আমি স্বীকার করলাম, জার্মান ভাষা জানা থাকলে এই কাজটি পরিপূর্ণ হতো আরো। দুদিনের দুটি বক্তৃতা আমার শিক্ষকতা জীবনের অনেক বড় সঞ্চয়। তা ছাড়া জার্মানিতে বাংলা ভাষা শেখার জন্য নিবেদিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচয় হওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আলাপচারিতাই জানলাম, অধ্যাপক হ্যান্স বাংলা সাহিত্যে অতিপ্রাকৃতের ব্যবহার নিয়ে কাজ করছেন। অন্যদিকে চৈতী বসুও নতুন কাজে হাত দিয়েছেন। তাঁরা দুজন পরিশ্রম করে শিক্ষার্থীদের তৈরি করছেন। বাংলা ভাষী অঞ্চলে বা দেশে পাঠিয়ে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে সচেষ্ট রয়েছেন। দেখলাম সেখানকার ছেলেমেয়েরা চাকরির জন্য কিংবা সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য লেখাপড়া করে না। বরং শিখতে হবে, জ্ঞান অর্জন করতে হবে এটাই তাদের মূল লক্ষ্য।
৪.
জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটে বক্তৃতা দেওয়া এবং সেখানকার বাংলা ভাষা চর্চার পরিবেশ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন অবশ্যই আমার জীবনে অনেক বড় ঘটনা। বিশেষত হাইডেলবার্গে ভ্রমণ করে নতুন সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছি। এ জন্য আমি প্রথমেই অধ্যাপক ড. হ্যান্স হার্ডারকে ধন্যবাদ জানাই। তিনিই আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান স্যার। আর সেখানে পৌঁছানোর পর চৈতী বসু যে সময় দিয়েছেন তার মূল্যও অনেক। অবশ্যই মনে থাকবে ৬ জুলাই ড. হ্যান্সের সঙ্গে ল্যাডেনবার্গে নেকার নদীর তীরে মধ্যযুগের অপূর্ব শহরটিতে ঘুরে বেড়ানোর স্মৃতি। সেখানে বসে রোমান সাম্রাজ্যের নির্মাণশৈলীতে তৈরি ভবনগুলোর স্মৃতিকথা ভেসে ওঠার সময় আর বিয়ারের গেলাসে চুমুক দিতে দিতে মার্কেট স্কয়ারের চারপাশের পরিবেশের কথা কখনো ভুলব না। যে জার্মানিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তিনবার ভ্রমণ করেছিলেন সেই দেশটিতে আমি একবার গিয়েই মুগ্ধ হয়েছি। সুযোগ পেলে ওখানে যাওয়ার ইচ্ছে রইল আবার। কারণ ড. হ্যান্স হার্ডারের মতো নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিরা সেখানে বাংলাভাষার চর্চা ও গবেষণা করছেন।