ঢাকার কথা ২১

মধুসূদন দত্তের ‘বঙ্গ-অলঙ্কার’

Looks like you've blocked notifications!

মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮৭১ সালে একবার ও ১৮৭৩ সালে আরেকবার ঢাকায় এসেছিলেন বলে জানা যায়। প্রথমবার ঢাকা আসা নিয়ে বিস্তারিত জানা যায় না। সূত্রমতে প্রথমবার একটি মামলার কারণে তাকে ঢাকায় আসতে হয়েছিল। এ সময় তিনি ১০ দিন ঢাকায় অবস্থান করেন। বন্ধু গৌর বসাককে লেখা কবির চিঠি থেকে তথ্যটি নিশ্চিত করা যায়। 

এই পর্বে ঢাকায় মধুসূদন দত্ত একটি সভায় যোগদান করেছিলেন। ১৮৭১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ‘এডুকেশন গেজেটে’ এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট ছিল। এই সভায় বহুবিবাহ বন্ধ বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। সভায় জানানো হয় মনু সংহিতায় বহু বিবাহের পক্ষে মত রয়েছে। একথা শুনে কবি খুব দুঃখ পান এবং ক্ষোভের সাথে বলেন এই ধরনের শাস্ত্র বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করা উচিত।

১৮৭৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বিতীয়বার ঢাকায় আসেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। এ সময় ঢাকার কয়েকটি স্থানে কবিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ‘ঢাকা প্রকাশে’ এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়। তথ্য মতে পোগোজ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পোগজ সাহেবের বাসায় তিনি উঠেছিলেন। এই বাসা ছিল বর্তমান আর্মানিটোলায়। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল ও পোগোজ স্কুলে কবির উদ্দেশে দুটি সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। এই সভাগুলোতে ঢাকার অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।

পোগোজ স্কুলের সংবর্ধনা সভার বক্তব্য নিয়ে আকর্ষণীয় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল সেই সময়ের অমৃতবাজার পত্রিকায়। বলা হয়েছে, একজন যুবক কবির উদ্দেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে তাঁর কাব্য কৃতীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে একপর্যায়ে বলেন ‘আপনি ইংরাজ হইয়া গিয়াছেন শুনিয়া আমরা ভারি দুঃখিত হই। কিন্তু আপনার সঙ্গে আলাপ ব্যবহার করিয়া সে ভ্রম গেল।’ এর উত্তরে মধুসূদন বলেন, ‘আমার সম্বন্ধে আপনাদের আর যেকোনো ভ্রম হউক, আমি সাহেব হইয়াছি এই ভ্রমটি হওয়া ভারি অন্যায়।... আমি শুদ্ধ বাঙালি নহি, আমি বাঙাল, আমার বাটি যশোহর।’ এই সভায় অভিনন্দনপত্রের উত্তরে কবি একটি কবিতা লিখে দিয়েছিলেন। এই কবিতায় কবির অসুস্থতা ও দারিদ্র্যের কথা প্রচ্ছন্নভাবে উল্লিখিত ছিল। মধুসূদনের জীবনী রচয়িতা যোগীন্দ্র নাথ বসু মনে করেন এই কবিতার মধ্য দিয়ে কবি ঢাকাবাসীর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন। শ্রী বসু মনে করেন অনেক বেশি কষ্টে না পড়লে অভিমানী কবি সাধারণের কাছে এভাবে সাহায্যের জন্য ইঙ্গিত করতেন না। 

ঢাকা প্রকাশ কার্যালয়েও কবিকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। এই উপলক্ষে একটি পার্টিরও আয়োজন করা হয়েছিল। এ সময় ঢাকা প্রকাশের সম্পাদক ছিলেন কবি গোবিন্দ রায়। আর সহকারী সম্পাদক ছিলেন অনাথ বন্ধু মৌলিক। অনাথ বন্ধুর একটি লেখা থেকে জানা যায় একদিন কবি মধুসূদন দত্ত তাঁর বাসায় এসেছিলেন। এখানে কবি হরিশচন্দ্রের সঙ্গে সাহিত্যবিষয়ক আলোচনা করেন তিনি। আলোচনার একপর্যায়ে কবি হরিশচন্দ্রের উদ্দেশে একটি কবিতা লেখেন। কবি হরিশচন্দ্র এর উত্তরে আরেকটি কবিতা লিখে দেন। এই দুটি কবিতা ‘হিন্দু হিতৈষিণী’ পত্রিকায় ছাপা হয়।

প্রাপ্ত তথ্য থেকে ধারণা করা যায় কবির ঢাকায় অবস্থানকাল স্বল্পস্থায়ী হলেও তাঁকে ঢাকাবাসী সাধ্যমতো সমাদর করেছিল। ঢাকার সাহিত্যিক ও সুধী সমাজ কবির সান্নিধ্যে এসেছিলেন। ঢাকাবাসীকে উদ্দেশ করে লেখা কবিতায় কবি ঢাকাকে ‘বঙ্গ-অলঙ্কার’ বলেছেন। কবি ঢাকাবাসীকে ধনবান ও জ্ঞানচর্চার অনুরাগী বলে মন্তব্য করেছেন।