রম্যগল্প
শেকড় সন্ধানী
রবিউল ভাই ঠিক করলেন তিনি লেখক হবেন।
আমাদের চোখ কপালে।
ক্যামনে!
ক্যামনে মানে!!
ডাবল অবাক হন রবিউল ভাই।
না মানে, পরিকল্পনা করে কি লেখক হওয়া যায়? ওটা তো স্বতঃস্ফূর্ত।
কইছে তোরে। শোন, পরিকল্পনা ছাড়া জীবনে কিছুই হয় না। প্রতিটি সফলতার পেছনে আছে একটি সুন্দর ও সঠিক পরিকল্পনা। পরিবার পরিকল্পনার কথাই ভাব। আগে আমাদের দেশে বিয়া করলেই চাইর-পাঁচটা কইরা পোলাপান। আর এখন? ‘দুটির বেশি সন্তান নয়, একটি হলে ভালো হয়’। কি, ঠিক না বেঠিক?
ঠিক।
আমরা মাথা নেড়ে সায় দিই।
কীভাবে সম্ভব হইল? একটা সুন্দর পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে।
উদাহরণসহ পরিকল্পনার গুরুত্ব বুঝিয়ে দেন রবিউল ভাই।
কিন্তু আমরা তো শুনছি লেখালেখি ‘নাজিল’ হয়। ভর করে।
তো কী হইছে? আমার ওপরও হবে। প্লেন তো এয়ারপোর্টেই ল্যান্ড করে। যেখানে এয়ারপোর্ট নাই সেখানে প্লেনও নাই। ঠিক না বেঠিক?
ঠিক।
আমরা আবারও মাথা নাড়ি।
এখন আমি ঠিক করছি, এয়ারপোর্ট বানাব। লেখালেখির এয়ারপোর্ট। তখন আমার ওপরও লেখা ল্যান্ড করবে। ঠিক না বেঠিক?
রবিউল ভাই যখন নাজিল পর্যন্ত চলে গেছেন, আমরা কথা বাড়িয়ে ফাজিল হতে চাই না। মাথা নেড়ে তাঁর কথায় সায় দিই।
শোন, প্রথমেই নামটা ঠিকঠাক করতে হবে বুঝলি। মোহাম্মদ রবিউল হাসান সরদার। এই নাম চলবে না। যুগ এখন সংক্ষেপের। স্লিম ইজ স্মার্ট। লেখকের নাম পড়েই যদি পাঠক টায়ার্ড হয়ে যায়, গল্পের ভবিষ্যৎ তখন আর বলে দিতে হয় না। তা ছাড়া লেখকের নামের শেষে সরদার ঠিক যায় না। লেখকের নামের মধ্যে পাঠক কোমলতা চায়। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র। কিংবা হলের হুমায়ূন, মিলন। সবার নামেই একটা ব্যাপার আছে। ব্যাপারটা ধরতে হবে।
সরদার তো খারাপ না। তা ছাড়া নতুনত্বও থাকবে।
আরে না। সরদারের মধ্যে একটা গরম আছে। গরম ভাব নিয়া লেখক হওন যায় না। পলিটিশিয়ান কিংবা ওসির নাম হিসেবে সরদার ভালো। তাদের গরম দরকার। লেখকের নাম হওয়া চাই কোমল।
তাইলে পেপসি রাখেন। ওইটাও তো কোমল।
সিরিয়াস কথার মইধ্যে ফান করবি না।
রবিউল ভাই বিরক্ত হন।
ভাই, এক কাজ করেন। নামের আগে ‘উদ্ভ্রান্ত’ কিংবা ‘দিকভ্রান্ত’ এই টাইপ কিছু বসাইয়া দেন। অনেকেই তো দেখি দেয়।
সিরিয়াস ভঙ্গিতে এবার আমি প্রস্তাবনা পেশ করি।
উহু।
রবিউল ভাই দুদিকে মাথা নাড়ান।
এসব আলগা ভাব পাঠক আর খায় না। তা ছাড়া লেখক নিজেই যদি দিকভ্রান্ত হয়। তাইলে তার লেখার লাইনে থাকার কোনো কারণ নাই। লাইন হইয়া যায় আঁকাবাঁকার দিন শ্যাষ। এখন হচ্ছে রেললাইনের যুগ। বহে সমান্তরাল।
আচ্ছা শোন, নাম নিয়ে তোরা ভাবিস না। ওটা বলতে গেলে মোটামুটি রেডি।
রেডি!
হুমম।
বলো না শুনি। কী নাম রাখলে।
তৃষ্ণার্ত চোখে কোমলতার অপেক্ষা করি আমরা।
রবিউল ভাই আশপাশে একবার তাকান। তারপর গলা খাকাড়ি দেন।
রবি হাসান।
রবি হাসান!!
হুমম।
শুধু রবি! ‘উল’ বাদ?
আরে বেটা, আমি কি শীতকালের কবি নাকি যে গায়ের মধ্যে ‘উল’ পইরা ঘুরব।
রবিউল ভাই ক্ষেপে যান।
আমরা চেপে চাই।
তা অবশ্য ঠিক। তা অবশ্য ঠিক।
কিন্তু . . .
আবার কিন্তু কী?
মুখ পোড়া মামুন সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।
কিন্তু ভাই, কিছু মনে না করলে একটা কথা বলতাম।
ফাইজলামি করবি না।
না না ভাই, কী বলেন। সাহিত্য কি ফাইজলামির জিনিস।
হুমম বল।
আচ্ছা ভাই, আপনি বললেন লেখকগো নাম কোমল হইতে হয়। তা, রবির মধ্যে আপনি কোমলতা কই পাইলেন! চাঁদ হইলেও না হয় একটা কথা ছিল।
উফ! তোদের নিয়া আর পারি না। এইটা কি বৈশাখ মাসের ঠাডা রইদ? এটা হচ্ছে বসন্তের শেষ বিকেলের মিঠে রোদ। আমার রবি হচ্ছে সেই রবি। তা ছাড়া আমি তো নামের মধ্যে একটা ফিউশন করছি।
ফিউশন?
হুমম।
কিন্তু ফিউশনের মধ্যে কনফিউশন থাকলে তো সমস্যা।
কোনো কনফিউশন নাই। এটা হচ্ছে সেকাল আর একালের একটা ফিউশন। সেকালের রবীন্দ্রনাথ থেকে নিয়েছি ‘রবি’। আর একালের হাসান আজিজুল হক থেকে নিলাম ‘হাসান’। দুজনের থেকে নিয়ে ‘রবি হাসান’।
আর মা-বাবার থেকে কিছু নিলেন না?
সেটাও আছে। মা-বাবার ইজ্জতও রেখেছি। অন্য অনেকের মতো আসল নাম পুরাটা উড়ায়া দিই নাই। রবি ও হাসান দুইটাই কিন্তু আমার আসল নামের মধ্যে আছে। শেকড়কে ছাড়লে তো চলবে না।
একজন প্রকৃত লেখক মানেই হচ্ছেন শেকড় সন্ধানী। আর তোদের বলে রাখি, আমার লেখার মধ্যেও কিন্তু শেকড়ের গন্ধ থাকবে। সে জন্যই প্রথম বইয়ের নাম ঠিক করেছি ‘শেকড় উপড়ানো ভালোবাসা’।
দুর্দান্ত প্রেমের গল্প।