নারীমুক্তির প্রশ্নে মুখোমুখি ‘দুই’ রবীন্দ্রনাথ
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লেখক হিসেবে অনেক বেশি সোচ্চার ছিলেন বাঙালি মধ্যবিত্ত নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠায়। কথাসাহিত্যজুড়েই, বিশেষ করে ছোটগল্পে, নারী-নির্মিতিতে কাজ করেছেন তিনি। স্বকালে নারীদের ব্যথা-যন্ত্রণা ও অবহেলিত জীবনের গল্প যেমন তিনি বাস্তববাদী (রিয়েলিস্ট) দৃষ্টিকোণ থেকে উঠিয়ে এনেছেন, তেমনি ভবিষ্যৎ-আধুনিক বাঙালি নারীর স্বরূপ কেমন হবে, তার আগাম চিত্রও নির্মাণ করেছেন। তিনি নারীশিক্ষার কথা বলেছেন। যৌতুক বা পণপ্রথাবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। বাল্যবিবাহের বিপক্ষে গিয়ে বিধবা বিবাহের পক্ষ নিয়েছেন। নারী-ইস্যুতে এই হলো সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথের মোটামুটি অবস্থান। কিন্তু এই রবীন্দ্রনাথই আবার ব্যক্তিজীবনে নারী-ইস্যুতে উল্টো চরিত্র ধারণ করেছেন। কাগজে-কলমে সমগ্র ভারতের নারীমুক্তির কথা বললেন বটে, কিন্তু সেটি নিজের ঘরের নারীদের অন্ধকারে রেখে। যেন প্রদীপের মতো তিনি নিজের পায়ের কাছের অন্ধকারটুকু দূর করার কথা বিলক্ষণ ভুলে গেলেন! যে কারণে আমরা তাঁকে সমাজ-সংস্কারক বলতে পারি বটে, কিন্তু যথার্থরূপে নারী-সংস্কারক বলতে পারি না।
রবীন্দ্রসাহিত্যে নারী
রবীন্দ্রনাথের বেশির ভাগ ছোটগল্প নারীপ্রধান। কোনো কোনো উপন্যাসেও নারী-নির্মিতি প্রধান হয়ে উঠেছে। এখানে রবীন্দ্রনাথের নারীপ্রীতি দৃশ্যত। এই প্রীতি যে প্রেমবোধ থেকে নয়, দায়বোধ থেকে, সেটা বোঝা যায় রবীন্দ্র-নির্মিত নারীদের সামাজিক অবস্থান পর্যবেক্ষণ করলে। রবীন্দ্রনাথ নিজে সেই সময়ে এলিট বাঙালি শ্রেণির একজন হয়েও লিখলেন মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত বাঙালি নারীদের কথা। বঙ্কিমসহ সমসাময়িক সাহিত্যিকদের মতো সমাজে নারীদের যেভাবে পেলেন, হুবহু সেভাবে লিখলেন না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীদের তিনি আরো এক ধাপ এগিয়ে রেখে চিন্তা করলেন। অর্থাৎ নারীদের একটি ভবিষ্যৎ রূপ তিনি নির্মাণ করলেন। তিনি বাঙালি নারীদের একটা সম্ভাব্য প্রজন্ম খাড়া করলেন, যারা বুদ্ধিমতী, সৎ-নির্ভীক, আত্মত্যাগী ও প্রতিবাদী।
যেমন—‘স্ত্রীর পত্র’ গল্পের নায়িকা মৃণাল তার সময়ের বাঙালি নারী নয়। রবীন্দ্রযুগে বাঙালি নারীরা দাম্পত্য ও সাংসারিক জীবনে সুখ না পেয়ে সংসার ছাড়ত না। কিন্তু মৃণাল ছেড়েছে। সে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ঘরত্যাগী হয়েছে। পণ করেছে, যা কিছুই ঘটুক আর ফিরবে না স্বামীর সংসারে। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন গ্রামীণ এই নারী যাওয়ার আগে তার স্বামীকে লিখে গেছে : 'আজ পনেরো বছরের পরে এই সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে জানতে পেরেছি, আমার জগত এবং জগদীশ্বরের সঙ্গে আমার সম্বন্ধও আছে। তাই আজ সাহস করে এই চিঠিখানি লিখছি, এ তোমাদের মেজো বউয়ের চিঠি নয়।’ এই যে মৃণাল বলল, ‘আমার জগত এবং জগদীশ্বরের সঙ্গে আমার সম্বন্ধও আছে’, এ যেন ইবসেনের সেই নোরার কণ্ঠের প্রতিধ্বনি—I must stand on my own two feet if I'm to get to know myself and the world outside. That's why I can't stay here with you any longer—একজন বাঙালির নারীর কণ্ঠে।
মৃণাল যখন লিখছে, 'আমার একটা জিনিস তোমাদের ঘরকন্নার বাইরে ছিল, সেটা কেউ তোমরা জানোনি। আমি লুকিয়ে কবিতা লিখতুম। সে ছাইপাশ যাই হোক না, সেখানে তোমাদের অন্দরমহলের পাঁচিল ওঠেনি। সেইখানে আমার মুক্তি; সেইখানে আমি আমি। আমার মধ্যে যা-কিছু তোমাদের মেজো বউকে ছাড়িয়ে রয়েছে সে তোমরা পছন্দ করোনি, চিনতেও পারোনি; আমি যে কবি সে এই পনেরো বছরেও তোমাদের কাছে ধরা পড়েনি।’ তখন পরিষ্কার হয়ে ওঠে, এই যে বাঙালি নারীকে রবীন্দ্রনাথ নির্মাণ করলেন, সে গড়পরতা সাধারণ নারী না। রবীন্দ্রনাথ তাকে একেবারে নিজের আলোয় রেখে নির্মাণ করেছেন।
একই প্রবণতা মিশে আছে ‘যোগাযোগ’ উপন্যাসের কুমু চরিত্রের ভেতর। কুমু যে ব্যক্তিস্বাধীনতাকে ইঙ্গিত দিয়ে বলে, ‘এমন কিছু আছে যা ছেলের জন্যও খোয়ানো যায় না’, তার সেই কথা নোরারও কথা বটে—I have another duty, just as sacred…duty to myself’। 'মানভঞ্জন' গল্পে গিরিবালাও মৃণাল ও কুমুর মতো নির্মিত চরিত্র। অভিনব পন্থায় স্বামীর অবহেলার প্রতিদান দিয়ে গিরিবালা এক অনন্য প্রতিবাদী নারী হয়ে উঠেছে রবীন্দ্র-কথাসাহিত্যে। 'শাস্তি' গল্পে ছোটবউ চন্দরাও পুরুষতন্ত্রের পোষমানা নারী না। হৈমন্তী গল্পের নাম-চরিত্র হৈমন্তীও কি কম প্রতিবাদী? তার চেয়ে এই গল্পে হৈমন্তীর পুরুষ বাবার মধ্য দিয়ে পুরুষতন্ত্রের বিপক্ষে যেভাবে রবীন্দ্রনাথ দাঁড়ালেন, সেটিও তো কম কথা নয়। হ্যাঁ, রবীন্দ্রনাথ চাইলেই আরো প্রতিবাদী করে তুলতে পারতেন হৈমন্তীর বাবা গৌরীশঙ্কর বাবু কিংবা স্বামী অপুকে। কিন্তু সেটা করলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত না। হৈমন্তীকে না হয় ওই পরিবার থেকে মুক্ত করে আনা যেত, কিন্তু বাইরে পুরো সমাজ যে পড়ে! এ কারণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গৌরীশঙ্কর ও অপুর পাহাড়সহ নীরবতার ভেতর দিয়ে যে প্রতিবাদ ফুটিয়ে তুললেন, সেটিই যেন আরো তীব্রভাবে আঘাত করল পাঠকের মনে।
‘কঙ্কাল’ গল্পটি বাল্যবিবাহের করুণ দিকটি তুলে ধরে। গল্পে অকালবিধবা কনকচাঁপা যৌবনবতী হয়েছে বৈধব্যের পরে। ভাইয়ের বন্ধু শশী শেখরের প্রতি প্রণয়াসক্ত হলেও বিধবা হওয়ার কারণেই সমাজ-সংসারের প্রচলিত নিয়মের জাঁতাকলে চাপা পড়ে ব্যর্থ হয়ে তাদের বিয়ে হয়নি। অর্থাৎ এখানে রবীন্দ্রনাথ বিধবা বিয়ের নীরব সমর্থন জানিয়ে ইতি টেনেছেন। তার পর ‘খাতা’ গল্পটির প্রসঙ্গও টানা যেতে পারে। বালিকা বধূ উমার বাপের বাড়ি থেকে আনা লেখার খাতা কেড়ে নেয় তারই যুবক স্বামী। উমার স্বামী প্যারীমোহন লেখক। স্ত্রীশিক্ষা সম্পর্কে সে বলে, ‘স্ত্রীশিক্ষা ও পুংশক্তি উভয় শক্তির সম্মিলনে পবিত্র দাম্পত্যশক্তির উদ্ভব হয়, কিন্তু লেখাপড়া শিক্ষার দ্বারা যদি স্ত্রীশক্তি পরাভূত হইয়া একান্ত পুংশক্তির প্রাদুর্ভাব হয়, তবে পুংশক্তির সহিত পুংশক্তির প্রতিঘাতে এমন একটি প্রলয় শক্তির উৎপত্তি হয় যার দ্বারা দাম্পত্যশক্তি বিনাশশক্তির মধ্যে বিলীন সত্তা লাভ করে, সুতরাং রমণী বিধবা হয়’।
আবার 'নষ্ট নীড়' গল্পে রবীন্দ্রনাথ নারী-নির্মিতির দিকে গেলেন না। না গিয়ে তিনি নারীর সামাজিক নির্যাতিত-অবহেলিত জীবনের চিত্র তুলে ধরলেন রিয়েলিস্ট শিল্পীর ভঙ্গিতে। একইভাবে 'মহামায়া' গল্পের নামচরিত্র মহামায়া কুলীন ঘরের এক রহস্যময় নারী। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় তার ‘দৃষ্টি দিবালোকের ন্যায় উন্মুক্ত এবং নির্ভীক’। এ চরিত্রের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ পুরুষতন্ত্রের একেবারে বিপক্ষে অবস্থান নিলেন। একইভাবে ‘দেনাপাওনা’ গল্পেও আমরা নিরুপমার মধ্য দিয়ে হৈমন্তীর মতো শ্বশুরবাড়ি পরিবারের অমানুষিক অত্যাচারে ক্ষয়ে যাওয়া এক নারীচরিত্রকে দেখি। এখানেও স্নেহশীল পিতা রামসুন্দর নিরুপমার বিয়ে দেন বনেদি ঘরের রায় বাহাদুরের একমাত্র পুত্রের সঙ্গে। কিন্তু পনেরো টাকা শোধ করতে না পারায় শাশুড়ির অত্যাচারে নিরুপমা প্রাণহীন হয়ে পড়ে। তবে এখানে হৈমন্তীর চেয়ে প্রতিবাদী হিসেবে উঠে আসে নিরুপমা। বলা হয়ে থাকে, বাংলাসাহিত্যে যৌতুক বা পণপ্রথা নিয়ে লেখা প্রথম ছোটগল্প এটি। গল্পে নিরুপমার পিতা পণের টাকা শোধ করতে গেলে সে বাধা দিয়ে বলে ওঠে, ‘আমি কি শুধু টাকার থলি; যতক্ষণ টাকা আছে ততক্ষণ আমার দাম।’ এই কথা তো বন্দুকের গুলি ছোড়ার চেয়ে কম শক্তিশালী নয়। নিরুপমায় যেন আরেকটু তীব্রভাবে ধরা দেয় ‘অপরিচিতা’ গল্পে কল্যাণী হয়ে। পণপ্রথার প্রতিবাদস্বরূপ কল্যাণীর পিতা শম্ভুনাথ নিজেই কল্যাণীর বিয়ে ভেঙে দেয়। পাত্র অনুপম একসময় পণ বাদেই কল্যাণীকে বিয়ে করার জন্য হাত জোড় করে। কিন্তু কল্যাণী রাজি হয়নি। 'মধ্যবর্তিনী' গল্পের হরসুন্দরী বাঙালি নারীর যেন আর্কেটাইপ চরিত্র—একাধারে সংযমী, ত্যাগী এবং কল্যাণী। একইভাবে 'দিদি' গল্পের শশী চরিত্রটিও বাঙালি নারীর নারীত্ব আর মাতৃত্বের প্রতিনিধি হয়ে উঠে এসেছে।
এ রকম নানাভাবে গল্প-উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ তাঁর সৃষ্টচরিত্র দিয়ে সমাজে নারী সমাজের অবহেলিত চিত্র তুলে ধরেছেন। নারীদের তিনি একটি আদর্শিক-মানবিক সমাজব্যবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছেন।
রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিজীবনে নারী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কথাসাহিত্য-প্রবন্ধজুড়ে ভারতীয়, বিশেষ করে বাঙালি নারীর বিকাশের কথা তুলে ধরলেও তিনি নিজের পারিবারিক জীবনে তাঁর চর্চা করেননি। যে কারণে রবীন্দ্রজীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় লিখেছেন : ‘রবীন্দ্রনাথ এতকাল বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে গদ্যে-পদ্যে বহু রচনা লিখিয়া অবশেষে স্বয়ং সেই জিনিসটা সমর্থন করিলেন কী করিয়া—বাণী ও জীবনের মধ্যে এ অসংগতি কেন, তাহার সদুত্তর নাই।’ রবিজীবনীকার প্রশন্তকুমার পাল লিখেছেন : ‘চৌদ্দ বছরেরও কমবয়সী মাধুরীলতার বিবাহের জন্য রবীন্দ্রনাথের ব্যস্ত হওয়াতে আশ্চর্যবোধ না করে পারা যায় না।... কেবল কবি নয়, বাঙালি সমাজে তাঁর ভূমিকা ছিল চিন্তানায়কের। তাই ব্যক্তিস্বার্থে তাঁর সামাজিক ভূমিকা বিস্মরণের ইতিবৃত্তটি কিঞ্চিৎ অস্বস্তিকর।’
যেখানে ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা রীতিমতো দেশের বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করেছেন, সেখানে রবীন্দ্রনাথের মেয়েদের কপালে ভারতীয় শিক্ষাই জোটেনি। তিনি নিজে বাল্যবিবাহ করেছেন। তবে সেটা উনিশ শতকের বিষয় বলে এড়িয়ে চলা যায়। বাঙালি সমাজে নারী যখন বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছে—শিক্ষায়-দীক্ষায়-মননে—তখন তিনি তাঁর তিন মেয়ের বাল্যবিবাহ করালেন, তার কী যুক্তি হতে পারে? সবচেয়ে বড় কথা, তিনিও তখন ভীষণ উঠেপড়ে পণপ্রথা, বাল্যাবিবাহ এসবের বিরুদ্ধে লিখছেন। লিখছেন নারীশিক্ষা ও বিধবা বিবাহের পক্ষে। ঠিক তখনই আবার নিজ ঘরে পণ দিয়ে মেয়েদের বাল্যবিবাহ দিচ্ছেন। নিজগৃহে বিধবা বিবাহের বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। এ যেন রহস্যের মোড়কে মোড়ানো রবীন্দ্রনাথ!
বড় মেয়ে মাধুরীলতার যখন বিয়ে হয়, তখন তার বয়স মাত্র চৌদ্দ বছর। মেজো মেয়ে রেণুকার বিয়ে হয় আরো কমে—মাত্র সাড়ে দশ বছর বয়সে। ছোট মেয়ে অতসীলতার বিয়ে হয় চৌদ্দতে। এই রবীন্দ্রনাথই বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে গিয়ে ‘হিন্দুবিবাহ’ নামে এক সুদীর্ঘ প্রবন্ধ লিখে সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন হলে পাঠ করলেন। ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ’র চেষ্টায় সরকার ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে আইন পাস করে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করে। এই ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে বাল্যবিবাহ আইনত নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও রবীন্দ্রনাথ ১৯০১ সালে বড় ও মেজো মেয়ের এবং ১৯০৭ সালে ছোট মেয়ের বাল্যবিবাহ দিলেন। তিনি যে তাঁর ব্রাহ্মসমাজের মানরক্ষায় তা করেননি তার প্রমাণ, ঠাকুরবাড়ির অন্য মেয়েদের ক্ষেত্রে ইতিহাস ভিন্ন কথা বলে। সুশিক্ষাপ্রাপ্তা ভাতিজি ইন্দিরা দেবীর বিয়ে হয় ২৬ বছর বয়সে। ভাগনি সরলা দেবীর বিয়ে হয় আরো পরে—৩৩ বছর বয়সে। তিনি ১৮৯০ সালে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ পাশ করে রীতিমতো স্বর্ণপদক পান। এই বাড়ির মেয়ে হয়েও রবীন্দ্রনাথের মেয়েরা যে শিক্ষাবঞ্চিত হলেন, তার কারণ স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। অনেকে বলেন, রবীন্দ্রনাথ অর্থকষ্টে ছিলেন বলে মেয়েদের বিয়েতে তাড়াহুড়ো করেছেন। অর্থকষ্টে ছিলেন, সেটা কিছুটা সত্যি। কিন্তু যখন মেয়েদের না পড়িয়ে পুত্র রথীন্দ্রনাথকে পড়াশোনার জন্য বিদেশে পাঠালেন। জামাতাকেও কৃষি নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডনে পাঠালেন, তখন আর এই অজুহাত ঠিক টেকে না।
নারী-ইস্যুতে রবীন্দ্রনাথের এমন স্ববিরোধী আচরণের দৃষ্টান্ত আরো কিছু দেওয়া যাবে। সমাজসংস্কারক নিশিকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের মেজদাদা বিশিষ্ট শিক্ষক ও সমাজসেবী ব্রাহ্ম নবকান্তর পুত্র নলিনীকান্তর সঙ্গে এক বিধবার বিয়ে হয়। সেটি ছিল আদি ব্রাহ্মসমাজের প্রথম বিধবা বিয়ে। রবীন্দ্রনাথই আচার্য হয়ে শুভ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। আবার এই রবীন্দ্রনাথই ভ্রাতুষ্পুত্র বলেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বধূ ১৪ বছর বয়সের বিধবা সুশীলার পুনর্বিবাহ ঠেকিয়ে তার জীবনকে চিরদুখী করে তোলেন।