‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে’
লালন ফকিরের গানের বাণীতে এমন দর্শনের সন্ধান মেলে, যার মাঝে ভাব আছে, মনে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিয়ে যায় যে বাণী। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা প্লাজার দিকে যেতেই কানে ভেসে এলো এমনই শান্তির পরশমাখা বাউলি সুর। প্লাজার দোতলার খোলা জায়গায় প্রবেশ করতেই মনে হলো এ যেন একখণ্ড কুষ্টিয়ার সেই ছেঁউড়িয়া।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির মাসব্যাপী আয়োজনের অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে চার দিনের এই মরমি গানের আসর। চার দিনের এই আসরে আছে লালন সাঁইজির ভাবশিষ্যদের গুরু-শিষ্য সম্মিলনী ও ভাবগীত পরিবেশনা।
লালনের ভাবশিষ্যরা তাঁর গান গেয়ে দর্শকদের মজালেন লালনের সুরে। শিল্পী ফকির নইর সাহ, ফকির হৃদয় সাহা, বাউলগুরু পাগলা বাবলুসহ অনেকেই গাইলেন। দেড় শতাধিক ফকির এসেছেন কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, বগুড়া, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।
এই বাউলদের গানের টানে চলে এসেছেন ঢাকাসহ আশপাশের অঞ্চলের ভক্তরা। সবার সম্মিলিত গানে আর কথায় পুরো এলাকা মেতে উঠেছে লালন-বন্দনায়, জীবন-সাধনায়। বাউল গানের মধ্য দিয়েই সৃষ্টি হয়েছে ভিন্ন আঙ্গিকে মরমি সাধনার পথ। তবে বাংলার বাউল সাধনার সর্বোচ্চ বিকাশ হয়েছে ফকির লালন শাহের মধ্য দিয়ে।
লালনই বাউল-সাধনার শ্রেষ্ঠ ভাষ্যকার। মানুষের প্রচলিত বিশ্বাসকে ভেঙে দিয়ে সহজিয়া ঈশ্বর-ভজনার পথ দেখিয়েছেন। উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণ, জাত-পাতের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষকে মূল্য দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথম দিনে অনুষ্ঠিত হলো ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে’ শীর্ষক পরিবেশনা। উদ্বোধনী পর্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও ফকির হৃদয় সাধু।
লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘বাউলরা গান করবেন, সে সঙ্গে জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশে যোগ দেবেন তাঁরা। সব ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে মানবধর্মে উদ্বুদ্ধ করেন ফকির লালন। সে কারণেই বাউলদের এই জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।’
আলোচনা শেষে একে একে বাউলরা গেয়ে শোনান ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে’, ‘জাত গেল জাত গেল বলে’, ‘চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে’, ‘আমি অপার হয়ে বসে আছি’, ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’, ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’সহ লালনের জনপ্রিয় সব গান।
বাউলদের নিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও সব জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে দেশব্যাপী ‘জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক জাগরণ’ শীর্ষক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।