অবিরাম হাসি
হাসি তো মোটেই আসে না, কিন্তু লেখার বিষয় নিয়েছি অবিরাম হাসি। খুবই চিন্তায় আছি শেষে না আবার লেখাটা গোঁজামিল হয়ে যায়। হাসি বিষয় লিখব এটা যদি কোনো মেয়েকে বলি তাহলে আমি নিশ্চিত সে প্রথমে হেসে কুটি কুটি হয়ে যাবে। তারপর বলেন কী হাসির কথা লিখবেন। পরে যখন দেখবে বিষয়টা মোটেও হাসির নয়, তখন বলবে এটা কোনো হাসির কথা হলো? বলে আবার হাসতে শুরু করবে। মেয়েরা কখনো কখনো অকারণেও হাসে এটা মেয়েজাতির স্বভাব। তারপর অবিরাম হাসে এরকম মেয়েও আছে। আমি জানতাম। তারপরও অবিরাম হাসির এক অজ্ঞাত নারীর সঙ্গে আজ ফোনে কথা হলো। আমার মোবাইলে একটা কল এলো। রিসিভ করে বললাম- হ্যালো। ওপাশ থেকে উত্তর- আপনি কি নোমান সাহেব বলছেন? আমার পাল্টা প্রশ্ন- কে বলছেন?
- প্রশ্নটা আগে আমি করেছি।
- ফোন করেছেন আপনি, আগে আপনার পরিচয় দিন?
তারপর শুরু হলো অবিরাম হাসি। বোঝা যাচ্ছে অনেক কষ্টে হাসি থামানোর চেষ্টা করছে। একসময় বেশ কষ্ট করেই বলল- আপনি কি ভয় পাচ্ছেন।
- এতে ভয় পাওয়ার কী আছে।
- পরিচয় স্বীকার করছেন না।
- আপনি তো আগে আপনার পরিচয় দিন।
আবারও অবিরাম হাসি। হাসি শেষে- আপনি তো বেশ মজার লোক।
- টক না ঝাল।
এবার শুরু হলো বিরতিহীন হাসি। আমার মনে হচ্ছে দম আটকে কি মরে যায় নাকি। চুপচাপ হাসি শুনতে থাকি। দীর্ঘ সময় পর আমার কোনো শব্দ না পেয়ে- আপনার পরিচয়টা নিশ্চিত করলে অসুবিধা কী?
- আমি ফোনে অপর পাশের পরিচয় না জেনে পরিচয় নিশ্চিত করি না।
- কারণ?
- কারণ আমি অচেনা পথে হাঁটি না।
- তাই?
- জ্বি।
- আমি তো অচেনা পথেই হাঁটতে ভালোবাসি। চেনা পথে বেশিক্ষণ ভালো লাগে না।
- আর আমি চেনা পথ ছেড়ে যেতে পারি না।
- কেন? অচেনা পথে হাঁটবেন। তাহলেই তো অচেনা মজা, নতুন চেনা-জানা হবে, নতুন ফুলের সুবাস, নতুন কাঁটার আঘাত।
- এমনিতেই কাঁটার আঘাতে জর্জরিত।
আবার অবিরাম হাসি। একসময় লাইনটা কেটে গেল।
আমি সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাইরে গিয়ে কিছুক্ষণ বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেই। সেই উদ্দেশ্যেই বের হচ্ছিলাম। যখন ফোনটা এসেছিল তখন আমি আয়নার সামনে। এখন অসমাপ্ত কাজটা করছি। তখনই আবার ফোনটা বাজল- হ্যালো
- ফোন কি কেটে দিলেন?
- না কাটিনি, কেটে গেছে। আমি ফোন ব্যাক করতাম কিন্তু মাথায় চিরুনি দিচ্ছিলাম তো তাই দেরি হচ্ছিল।
- মাথায় চিরুনি দিচ্ছিলেন, তার মানে আপনার মাথায় অনেক চুল।
- এখন যা আছে তা হচ্ছে আমার আগের চুলের ষোল ভাগের চার ভাগ।
- ষোল ভাগের চার ভাগ, তার মানে চার ভাগের এক ভাগও তো বলতে পারতেন।
- তাহলে তো কথার মজা থাকত না।
- হুম তা ঠিক। আপনারা সব কথাই মজা করে বলতে চান।
- মজা করে না বললে তো বেশিক্ষণ কথা বলা যায় না।
- আপনি বেশিক্ষণ কথা বলতে চান।
- না
- কেন?
- ওই যে বলেছি, অচেনা পথে হাঁটি না।
এভাবে কথা চলতে থাকে। অচেনা পথ নিয়ে, মাথার চুল নিয়ে, তারপর আবার অবিরাম হাসি। সেও তার পরিচয় বলে না, আমিও না। এভাবে কথা বলতে বলতে একসময় পরিচয়হীনা ফোন রেখে দিতে চাইল। আমারও আপত্তি নেই। অবিরাম হাসতে হাসতে ফোন রাখা হলো। আমি আমার মোবাইলে নম্বরটি সেভ করলাম ‘অচেনা পথ’ নামে।
অচেনা পথ (এখান থেকে গল্পের নাম পরিবর্তন হলো )
২৪ ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যায় আবার ফোন সেই অচেনা নারীর। আমি তখন মগবাজার মিডিয়া গলিতে আড্ডা দিচ্ছি। ফোনটা ধরে বললাম,
- হ্যালো
শুরুতেই হাসি (এই হাসি জায়গাটা আর লিখব না। পাঠক তো জেনেই গেছেন এই অচেনা নারীটি অবিরাম হাসে। তাই হাসি পাঠক অনুভব করে নেবেন।) তিনি উত্তর দিলেন-
- কেমন আছেন
- জি ভালো, আপনি কেমন আছেন।
- ভালো। আপনি তাহলে স্বীকার করবেন না আপনি মোহাম্মদ নোমান।
- আপনাকে তো বলেছি, আপনার পরিচয় না জেনে আমি আমার পরিচয় বলব না।
- আমি কিন্তু নিশ্চিত আমি যাকে চাইছি আপনি সে।
- আপনি নিশ্চিত হতে পারেন না। কারণ আপনি যাকে চাইছেন, তিনি অত্যন্ত ব্যস্ত একজন মানুষ। তার ফোন, ই-মেইল, ফেসবুক ইত্যাদি সব সময় নিজে আপডেড করার সময় পান না। অধিকাংশ সময় ওনার সহকারীরাই এসব করে থাকেন। আমি আপনার সঙ্গে কথা বলছি, আমি তো তাঁর সহকারীও হতে পারি।
- না আপনি তা নন।
- কী করে বুঝলেন?
- আমি বুঝেছি।
- আচ্ছা আপনি কী চান বলুন তো।
- আসলে আমি কিছু কথা আপনার সঙ্গে আলাপ করব বলে আপনাকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু আপনি তো আমাকে সহযোগিতা করলেন না। আপনি আপনার পরিচয় বললেন না।
- দেখুন, সাধারণত আমি কাউকে ফোন করলে প্রথমে আমি আমার নিজের পরিচয় দেই, তারপর বলি আপনি কি অমুক বলছেন। কিন্তু আপনি তো প্রথমে আপনার পরিচয় দিচ্ছেন না। আমার যুক্তি হচ্ছে ফোন করেছেন আপনি, আপনার প্রয়োজনে। আপনি আগে আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। তারপর আমাকে জানতে চাইবেন।
- কোনো মেয়েই অপর পাশের পরিচয় না জেনে কথা বলে না। এটা ছেলেরা করতে পারে, মেয়েরা পারে না।
- সেদিন আপনি আমাকে ফোন করে বললেন যে আপনাকে একজন আমার ফোন নম্বর দিয়ে বলেছে আমার সঙ্গে কথা বলতে। তাহলে যে আপনাকে আমার ফোন নম্বর দিয়েছে সে আমার পরিচিত? এবং আপনি তার পরিচিত? তাহলে প্রথমে আপনার পরিচয় দিতে অসুবিধা কি।
- না আগে আপনার পরিচয় দেন, তারপর আমারটা।
- আপনার এই প্যাঁচটা আমি মেনে নিতে পারলাম না।
- যাই হোক, যে কথা বলতে চেয়েছিলাম তা আর বলা হলো না।
- আমি পরিচিত না হয়ে কোনো কথা শুনতে রাজি নই। যত প্রয়োজনীয়ই হোক।
- কেন ?
- ওই যে বলেছি অচেনা পথে হাঁটি না।
- তাহলে আজ রাখি।
- ঠিক আছে।
- আবার পরে কথা হবে?
- হবে।
- ভালো থাকবেন।
- আপনিও-
- বাই-
- বাই।
ফোনটা কেটে চা দোকানদার শহীদকে বললাম এক কাপ চা দাও। শহীদ চায়ের কাপটা হাতে দিতে দিতেই ফোন আবার বাজল-
- হ্যালো-
- বিনীতভাবে আপনাকে একটা তথ্য জানাতে চাই। আমি আপনার ফোন নম্বরটা আমার মোবাইল থেকেই পেয়েছি। বলেই ফোন কেটে দিল।
তিনি হয়তো ভেবেছেন আমি অত্যন্ত চমকিত হব এবং ওনাকে আমার পরিচয় দেয়ার জন্য ফোন করব এবং ওনার পরিচয় জানার জন্য ওনাকে অনুরোধ করব। আমি তার কিছুই করলাম না। রাতে বাসায় এসে ব্লগের জন্য এই ফোন আলাপের বিষয়টাকেই বিষয় করে লেখা প্রকাশ করলাম। ফেসবুকে লিখলাম শীত খেতে গ্রামে যাচ্ছি। চলে গেলাম গ্রামে। সেখানে আমার বন্ধু পারভেজ কে গল্পের আড্ডায় বসে কথাটা বললাম। নিজেই মন্তব্যটা করলাম - মেয়েরা যে কী ভাবে? ভেবেছে নম্বর যখন আমার কাছে আছে, তখন হয়তো আমি ফোন করবই। সেই দিন কি আর আছেরে ভাই। সবাই এখন প্যান্ট-শার্ট পরে।
আমি তিন-চারদিনে বিষয়টা ভুলেই গেছি। ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় ফিরলাম। ৩০ ডিসেম্বর আমার জন্মদিন। সারা দিন ঘুমালাম। বিকেল বেলা ফরহাদ ভাই ফোন করে বললেন, আসো নাটক দেখি। দেখলাম থিয়েটারের ‘মিরাজ ফকিরের মা’ নাটকটি। ফরহাদ ভাই বললেন, কালও চলে আসো, ‘রক্তকরবী’ দেখব। ৩১ ডিসেম্বর ছয়টায় আমি পৌঁছালাম কিন্তু ফরহাদ ভাই আসলেন সাড়ে ৭টায়। নাটক আর দেখা হলো না। মোগলাই খেতে বসেছি দুজন। ফোন বাজল। দেখি সেই অচেনা পথ। ফরহাদ ভাইয়ের সামনে বসে এসব কথা বলা যাবে না। ফোন ধরেই বলতে থাকলাম - আমি যদি আপনাকে নয়টা সাড়ে নয়টার দিকে ফোন দেই কোনো অসুবিধা আছে? অপর পাশ থেকে সেই অবিরাম হাসির শব্দ - আমি বললাম - আমি জানতে চাইছি তখন ফোন করলে আপনার কোনো অসুবিধা নেই তো? তিনি তখন উত্তরে বললেন - ঠিক আছে। আমি সাড়ে ৯টায় ফোন দিলাম, তার ফোন বন্ধ। পৌনে দশটায় ফোন দিলাম এবং বললাম আমি আগেও ফোন করেছি। তখন বন্ধ পেয়েছি। তিনি বললেন -
- আপনি নিশ্চয়ই মন থেকে ফোন করেননি।
- হ্যাঁ - মন থেকেই ফোন করেছি। যাই হোক, আজকের আমার এই ফোনটা বাকি রইল। আমি আগামী কাল আপনাকে ফোন করে কথা বলব, এখন বাসায় ঢুকে যাচ্ছি। কাজে বসব। আপনাকে কি যখন তখন ফোন করা যায় ?
- হ্যাঁ যায়।
তারপরই ধরাটা খেলাম। আমি বললাম, আমার আর আপনার এই ফোনে কথোপকথনটা আমি ব্লগে লিখছি। কোন ব্লগ কত তারিখ সব বলে দিয়েছি। ছিঃ কী বোকামিটাই না করলাম। এখন তো আমার পরিচয় জেনে যাবে...
বোকামি হয়নি। কারণ সে ব্লগ ওপেন করতে পারেনি। দুপুর বেলা। পেয়ারাবাগ রেলগেট ধরে রেললাইন দিয়ে কারওয়ান বাজারের দিকে হেঁটে যাচ্ছি। একটি টিভি চ্যানেলে টাকা পাব আমার পরিচালিত প্রচারাধীন ধারাবাহিক নাটকের জন্য। নাটকের নাম ক্যাপসুল ৫০০ এম জি (প্রচারিত হচ্ছে প্রতি শুক্র, শনি, রোববার রাত ৮টা ২০ মিনিটে। খুবই ভালো নাটক। নিজের ঢোল নিজেই পেটালাম। মাঝে মাঝে নিজের ঢোলে একটা করে বাড়ি দিতে হয়,নইলে কেউ তো টের পাবে না যে আমার একটা ঢোল আছে) তখন মনে হলো গত রাতের একটা ফোন কল বাকি আছে। এখন করা যায়। দিলাম ফোন। অপর প্রান্ত থেকে-
- হ্যালো, কেমন আছেন।
- জি ভালো। গতকালের বাকি ফোন কল করলাম।
- বাহ আপনি তো বেশ সিনসিয়ার?
- না বলেছিলাম করব তাই করলাম। আপনি এখন কোথায়?
- বাসায়। আপনি কোথায়?
- রেললাইন ধরে হাঁটছি।
- সঙ্গে কে আছে?
- কেউ নেই
- তাহলে তো মজা হলো না। সঙ্গে কেউ থাকলে কথা বলতে বলতে হাঁটতেন।
- আছে একজন
- কে?
- আপনি
- আমি থেকে তো কোনো লাভ হচ্ছে না।
- কেন? কথাই তো বলছি। পাশে থাকলেও তো কথাই বলতাম। রেললাইন দিয়ে হেঁটে কথা বলা ছাড়া আর কী করা যায়।
অবিরাম হাসি...
- এত সুন্দর সুকণ্ঠীর সঙ্গে কথা বলতে বলতে যদি রেলের নিচে পড়ে মরেও যাই শান্তি।
- (শঙ্কিত সে) আল্লা না করুক এমন কথা বলবেন না।
- আপনি ভয় পাচ্ছেন কেন? আপনার তো অহংকার হওয়ার কথা। আপনাতে মুগ্ধ হায়ে একজন মরে গেল।
- না, এমন হোক আমি চাই না। আমি অতি সামান্য নগণ্য একজন।
- দাঁড়ান দাঁড়ান ট্রেন আসছে। কোনো দিক থেকে আসছে বুঝতে পারছিনা।
- ও আল্লা। সাবধান, বলেছিলাম না?
আমি দেখি ট্রেন সামনের দিক থেকে আসছে।
- অসুবিধা নেই, ট্রেন সামনের দিক থেকে আসছে। একটু অপেক্ষা করুন। ট্রেনটা চলে যাক, তারপর কথা বলি। শব্দের জন্য কিছু শুনতে পাব না।
ট্রেন চলে যাওয়ার পর –
- এবার বলুন।
- গতকাল আপনার ব্লগটা খুঁজে পাইনি।
- আমি বাঁচলাম
- কেন?
- পেলে আপনি আমাকে জেনে ফেলতেন।
- তাতে কী হয়েছে। আমি তো জানি আপনি কে।
- আমি কে?
- আপনি মোহাম্মদ নোমান
- না আমি সে নই।
- না আমি সিউর আপনি সে।
- কী করে সিউর হলেন?
- আমি হয়েছি।
- কিন্তু আমি সে নই। তবুও, তাহলে এবার আপনি আপনার পরিচয় বলুন?
- এখন তো আর বলব না।
- কেন?
- কারণ এখন আমার এভাবেই মজা লাগছে। আপনি কি এখনো হাঁটছেন?
- না এখন একটা দোকানে বসে চা খাচ্ছি।
- কী বলেন, এ দুপুর বেলায়। দুপুরের খাবার খেয়েছেন?
- হ্যাঁ - খেয়েছি। আপনি?
- না এখনো খাইনি। আমি আপনাকে সন্ধ্যায় ফোন দিব ৮টার দিকে।
- কেন, এখন কি রাখতে চাইছেন?
- হুমমমমমমমমম
- ঠিক আছে তাহলে এখন রাখি।
কারওয়ান বাজারের কাজ সেরে আমি আবার বাসায় এলাম। সন্ধ্যার আগে পর্যন্ত তার সঙ্গে কিছু এসএমএস চালাচালি হলো। বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে। কিছুক্ষণ আপন কাজ করলাম। যথারীতি ৫টার দিকে ফরহাদ ভাই ফোন করলেন - নোমান শিল্পকলায় চলে আস। চলে গেলাম হেঁটে শিল্পকলায়। যেতে না যেতেই ফোন অচেনা পথের।
- হ্যালো
- বলেছিলাম ফোন করব তাই করলাম।
- ধন্যবাদ
- তো বলেন কেমন আছেন।
- আছি ভালো।
- শীত কেমন?
- শীত আছে কিন্তু আমার তেমন লাগছে না, কারণ আমি ৩৩ মিনিট হেঁটেছি।
- আপনি কি অনেক হাঁটেন।
- সারাদিন হাঁটি।
- তাই!
- আর এই জন্যই সারা জীবন নিঃসঙ্গ থেকে গেলাম।
- কেন?
- আমি তো সারাদিন হাঁটি, যে আমার সঙ্গি হতে আসে সে ভাবে আমি হয় কৃপণ নয় অভাবী। সে জন্য সে আমাকে ছেড়ে চলে যায়।
অবিরাম হাসি.................। এভাবে কিছুক্ষণ কথা হলো। আধা ঘণ্টা কথা বলার পর আধা ঘণ্টা বিরতি দিয়ে আবার ৮টা থেকে ৯টা এক ঘণ্টা কথা হলো। এত কথার পর জানা গেল তার দুটি মেয়ে ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। স্বামী টিটিসিএম ( টোঁ টোঁ কোম্পানির ম্যানেজার) সে শুধুই গৃহিণী। আমার স্ত্রী-কন্যা আছে এটাও বললাম।
কিন্তু এখন পর্যন্তু তার পরিচয় আমি জানতে পারিনি। আর আমার সম্পর্কে সে যা বলে, তাতে সে আমাকে ভালোভাবেই জেনে ফেলেছে।
অবশেষে আমি নিজেই একটা সিদ্ধান্তে এলাম। আমি অচেনা পথে হাঁটব না। কারণ অচেনা পথ মাথাকে শুধু তার মধ্যেই ব্যস্ত রাখে। এই বয়সে এসে শুধু একটা ব্যাপার নিয়ে ভাবলে আমার চলবে না। আমার প্রফেশনাল কাজ আছে, আমার একটি নাটকের দল আছে, দলে আমার ছেলেমেয়েরা আছে, আমার একটি পত্রিকা আছে, বিভিন্ন ব্লগে আমার লেখালেখি আছে, সর্বোপরি আমার সংসার আছে, আমার চাঁদের মতো একটা মেয়ে আছে, সবচেয়ে প্রিয় আমার সাহিত্যচর্চা আছে। এত কিছুর মাঝে অচেনা এক মানুষের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে কথা বলার সময় বের করা নিজের প্রতি অত্যাচার করার শামিল। তিনি অনেক বেশি রহস্য করছেন আমার সঙ্গে। যা বর্তামান সময়ের বাস্তবতার সঙ্গে যায় না। এখন অনেক নিরাপত্তাহীনতায় থাকে মানুষ। মানুষের বিপদের হিসাব করা দিক-পথ নাই। কথা বলতে বলতে আবেগে কখন কি কথা বলে ফেলি। সে কথার রেশ ধরে কত রকমের বিপদ আসতে পারে তার কোনো ঠিক আছে? যেমন কাল কথা বলতে বলতে তিনি বলেছিলেন- হয়তো একদিন আপনার সঙ্গে আমার দেখা হয়ে যেতেও পারে। আর দেখা হলে সম্পর্কের নতুন মাত্রাও তৈরি হতে পারে। এটা কি আগে থেকে বলা যায়?
এমনিতেই অচেনা পথে আমি হাঁটি না, তারপর আবার যদি রহস্যময় সম্পর্ক হাতছানি দেয় তাহলে মনের চঞ্চলতা বেড়ে যেতে পারে। এই বয়সে চঞ্চল মন ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ বিষয়গুলো জানাতে চাই আমি। তাই ভেবেছি এরপর যখন কথা হবে বুঝিয়ে বলব তাকে। দুপুর ১২টার দিকে একটা এসএমএস পেলাম। তাতে লেখা- কইগো, কেমন আছেন। উত্তরে আমি বললাম- আধ ঘণ্টা পর ফোন করব, অসুবিধা আছে? তার উত্তরে তিনি কিছুক্ষণ পর বললেন- ওকে। আধ ঘণ্টা পর আমি তাকে ফোন করলাম-
- হ্যালো
এই হ্যালোটা মনে হলো অপরিচিত মানুষকে বলা। আমি একটু ধাক্কা খেলাম, বললাম-
- কেমন আছেন?
প্রথমে এক ঝলক হাসি, তারপর বললেন-
- ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন।
- ভালো।
- কাল আপনার ব্লগ আইডি টা চাইলাম দিলেন না কেন?
- দেখুন যে কোনো ব্লগ যে কেউ ভিজিট করতে পারে। আপনি আপনার মেইল আইডিটা দিন আমি আপনাকে লিংক পাঠাচ্ছি। আপনি আপনার মেইল আইডিটা দিলেন না কেন?
- আপনি যে আমাদের এই কথোপকথন লিখছেন, এটা যদি কেউ নাই পড়ে তাহলে লিখে লাভ কি?
- কেউ পড়ে না কে বলেছে। আমিনুল ইসলাম মিঠু পড়ে। পড়ে সে আমাকে ফোনও দেয়।
- আমিনুল ইসলাম মিঠু কে?
- আমার ব্লগ লাইনের ওস্তাদ।
- এ রকম আর কতজন ওস্তাদ আছে আপনার?
- সব বিষয়ে একজন করে।
আবার অবিরাম হাসি। হাসি শেষ হলে আমি বললাম-
- আপনার সঙ্গে একটা বিষয়ে আলাপ করতে চাই।
- আপনি একটা বিষয় আলাপ করবেন, তার জন্য তো আমি অপেক্ষা করে বসেই আছি।
- দেখুন গতকাল আপনার সঙ্গে আমার অনেক কথা হয়েছে। আপনার পরিবার আমার পরিবার বেনামে এসবও আলোচিত হয়েছে। কাল থেকে আজ এই পর্যন্ত আমি বেশ অস্থিরতার মধ্যে ছিলাম।
- কেন? কিসের অস্থিরতা।
- প্রথম প্রথম ভালো লেগেছিল অপরিচিত একজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বিষয়টা ঠিক হচ্ছে না। বর্তমান সময়ের বাস্তবতায় অপরিচিত আলাপচারিতা নিরাপদ নয়। আপনি কাল বলেছিলেন যদি আপনি আপনার পরিচয় বলেন তাহলে আমাদের কথা বলা এখানেই শেষ। আর পরিচয়হীনভাবে কথা বলতে চাইলে কথা চলবে। আজ আমি একটু সরাসরিই বলছি, কথা চলুক আর না চলুক দুজনকে আগে পরিচিত হতে হবে। নইলে আমার চিন্তাভাবনায় ব্যাঘাত ঘটছে। এভাবে আমার চলা সম্ভব না।
- তাহলে আপনি চাচ্ছেন আপনি পরিচয় জানবেন আমাদের এই সম্পর্ক বাতিল করে হলেও।
- আমার নিজের সুস্থতার জন্য আমাকে এটা করতেই হবে। আপনি যদি আমার বন্ধু হন তাহলে আমাকে সহযোগিতা করেন।
- আমি তো আপনাকে বলেছি আমার পরিচয় পেলে আপনি আর আমার সঙ্গে কথা বলবেন না।
- এমন তো নাও হতে পারে। কিন্তু আমি রহস্যের মধ্যে থাকতে চাই না।
- আমার আর আপনার আর যদি কথা না হয় তাহলে কি আপনি আমাকে মিস করবেন? আমি কিন্তু আপনাকে খুব মিস করব।
- এ কয়েক দিন যে আপনার সঙ্গে কথা হয়েছে তা কিন্তু একটা ভালো লাগা থেকেই হয়েছে। এ ভালো লাগাটাকে তো মিস করব। আসলে অপরিচিত কারো সঙ্গে এত কথা কখনোই বলতে চাইনি। কিন্তু কেন যে বললাম জানি না। এই অজানার বিষয়টার জন্যও তো মিস করব।
- ঠিক আছে আমি ভেবে দেখি।
- এখানে ভাবাভাবির কী আছে।
- আমি আপনাকে সন্ধ্যায় ফোন করব।
- এ সময় পর্যন্ত কিন্তু আমাকে অস্থিরতার মধ্যে থাকতে হবে।
- কিন্তু আমি একটু ভেবে নেই?
- আপনার যত ইচ্ছা আপনি ভাবুন। সেই সুযোগ আপনার আছে। আমি আপনাকে কিছুই বলতে পারব না। কিন্তু আপনি যদি না বলেন তাহলে আপনি আমার ওপর অন্যায় করবেন। ঠিক আছে আপনি ভালো থাকবেন।
- এখন কিন্তু আপনি আমাকে কষ্টের মধ্যে ফেললেন।
- এই কষ্টের মধ্যে আমিও আছি জানবেন।
সন্ধ্যায় আমি তার ফোনের অপেক্ষায় আছি। যে সময়ের মধ্যে এতদিন কথা হতো সে সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও যখন তিনি ফোন করলেন না, তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, এভাবে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। আমার অনেক কাজ আছে।
কিন্তু সেদিনও আমি তার কাছ থেকে রক্ষা পাইনি।
তিনি আমাকে ফোন করবেন বলে করেননি। মাথার ভেতর জিলাপির মতো প্যাঁচ খেলছে বিষয়টা। খুবই বিরক্ত লাগছে। এ রকম মনের অবস্থা নিয়ে বাসার দরজায় নক করলাম, মেয়ে দরজা খুলে দিল। ঝাঁপিয়ে পড়ল গায়ের ওপর। এই নিষ্পাপ ভালোবাসা আমাকে ভুলিয়ে দিল আমার মনের অস্থিরতা কে। মেয়ে বলল, বাবা এখন আমার একটা বান্ধবী আসবে বেড়াতে আমাদের বাসায়। আমি বললাম, আসুক মা। মেয়ে আমার খুশিতে লাফাতে লাফাতে অন্য ঘরে চলে গেল। মেয়ে হয়তো ভেবেছিল এত রাতে কোনো বান্ধবী এলে আমি রাগ করব।
৯টারও পরে ফোন বাজল
- হ্যালো
- জি জনাব, কেমন আছেন?
অচেনা পথ। বিরক্তিতে আমার গা জ্বলে গেল। কিন্তু সেটা প্রকাশ করলাম না।
- ভাইজান আমি তো এখন বাসায় চলে এসেছি।
- ও আচ্ছা, তাহলে আজ আর কথা না বলি। কাল ফোন করব। আপনি ভালো থাকবেন।
- জি।
খুব চেষ্টা করছি, এই লোভনীয় হাসি, মোহনীয় কথার, আলেয়ার হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য। মনকে কি কিছুটা টান মারতে পেরেছে ছলনাময়ী? কিছুটা হলেও ক্ষতি সে আমার করেছে। আমাকে সব মুছে ফেলতে হবে। অনেক বড় কোনো বিপদে পড়েছি আমি নিশ্চিত। সারা রাত আমার কোনো ঘুম হলো না। পরের দিন আমার অনেক ব্যস্ততা ছিল। বিকেলে বিশেষ প্রয়োজনে আমাকে শিল্পকলা একাডেমিতে যেতে হবে। আমি চাইছিলাম তিনি আর ফোন না করুক। অজানা-অচেনা মেয়ে মানুষের সঙ্গে ছেলে মানুষের মতো কথা বলতে আমার ভালো লাগছে না। মাত্র শান্তিনগর পর্যন্ত গিয়েছি, ফোন বাজতে শুরু করল-
- হ্যালো
- কেমন আছেন
- ভালো
- কোথায়
- শান্তিনগর মোড়ে।
- ওখানে কী করছেন?
বলে আবার অবিরাম হাসি। মনে মনে ভাবি অকারণে এত হাসে কেন মেয়েটা? গতকাল যে কথা বলবি বলে শেষ করলি তাই বল না। হেসেই চলেছেন তিনি।
- শিল্পকলা একাডেমিতে যাচ্ছি।
- হেঁটেই যাচ্ছেন?
- জ্বি
- বাবারে বাবা- আপনি এত হাঁটতে পারেন।
আমি চুপ করে রইলাম। এ বিষয়ে আমার কোনো কথা নাই। কারণ এ নিয়ে আগে অনেক কথা হয়েছে। আসল কথা শোনার জন্য আমি অপেক্ষা করছি। তিনি আমার কোনো উত্তর না পেয়ে আবার ঢং-এর কথা বললেন-
- জানেন সেগুনবাগিচা আমার অনেক প্রিয় জায়গা।
- কেন, প্রিয় জায়গা কেন?
- অনেক দিনের চেনা তাই।
আমার আর কথা বলতে ভালো লাগছে না। বমি বমি লাগছে এই ঢংগি মহিলার সঙ্গে কথা বলতে। কিন্তু তিনি যেন ইচ্ছে করেই প্রসঙ্গের কথা বলছেন না। যেন চাইছে আমি অনেক অনুরোধ করি। আমি তো তোমাদের জানি মেয়েমানুষ। তোমাদের সঙ্গে কেউ নরম করে কথা বললে মাথায় চড়ে বসো। এই জন্য আর একবারও বলব না ওই প্রসঙ্গে কথা। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর তিনি বোধ হয় কিছুটা আঁচ করতে পেরেছেন বিষয়টা। তাই কথার সুরটা যেন পরিবর্তন করলেন।
- আজ আপনাকে একটু ভার ভার লাগছে। মন খারাপ?
- না।
- মনে হচ্ছে মনটা আজ আপনার খারাপ।
- ভালো লাগছে না এসব রহস্যময় ছেলেমানুষি।
আবার অবিরাম হাসি। এ কথা কাউকে যদি বলি সবাই ভাববে আমি অতিমানুষের ভাব দেখাচ্ছি। কিন্তু আমি তো জানি আমি কী। কিশোর- যৌবন সব গেল কেউ তাকিয়ে একটু হাসল না, আর এই বুড়ো বয়সে একজন আমাকে খিলখিল করে হাসি শোনাচ্ছে। কি উদ্দেশ্য রে বাবা খুলে বল। তিনি আবারও সতর্কবাণী শোনালেন-
- দেখুন আমি কিন্তু আপনাকে আগেই বলেছি আমার পরিচয় জানলে আমাদের কিন্তু আর কথা হবে না। আপনি সেটাই চাচ্ছেন এবং গোমরা মুখে কথা বলছেন আমার সঙ্গে।
আমি চুপ করে আছি, কারণ যে কোনো উপায়ে হোক রহস্যভেদ আমার প্রয়োজন।
- আচ্ছা কি হয় পরিচয়টা না জানলে?
আবারও সেই পুরোনো প্যাঁচাল। কিন্তু আমার আর কথা বলা সম্ভব না। ভালো লাগছে না। একটু
টেনে টেনে যেন তিনি বললেন
- আজ তাহলে আমাদের শেষ কথা। হুম?
এই হুমটা খুব মিষ্টি করে বলা, আদুরের, সোহাগের আকাঙ্ক্ষা। মনের ভেতর কেমন কেমন যেন লাগল। মায়া লাগল। কিন্তু আমাকে শক্ত অবস্থানে থাকতেই হবে। এই নাঁকি কান্নায় মন ভেজালে আমার চলবে না। অপর পাশে একটা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ পেলাম...
গত ৪ তারিখের পর তার সঙ্গে এখন পর্যন্ত আমার অনেক কথা হয়েছে। পরিচয় জানা হলো কি হলো না এটা কোনো বড় বিষয় না। এর মধ্যে অনেক ঘনিষ্ঠ হয়েছি আমরা শুধু কথা বলে। মনে আর ভয় নেই। শুধু তার একটা কথার পর-
- পৃথিবীর সমস্ত মেয়েরাই ধরুন খারাপ। তারা স্বামীকে ঘরের বাইরে পাঠিয়ে অন্যজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে। তারপরও তো আপনি একটা মেয়েকে বিশ্বাস করে বিয়ে করেছেন। এখন তার কোনো অপরাধ থাকুক আর নাই থাকুক আপনি তাকে ভালোবাসেন। তার গর্ভে আপনার সন্তানের জন্ম হয়। ঠিক তেমনি আমাকেও না হয় একটু বিশ্বাস করলেন, শুধু কথা-ই তো বলবেন আর তো কিছু না।
আমি চুপ করে রইলাম।
- আপনি যদি চান আমি আর কখনো আপনাকে ফোন করব না। আপনিও আমার এই নম্বর আর কখনো খোলা পাবেন না। যেমন আমি মরে গেলে আমার ফেসবুক থেকে কোনো স্ট্যাটাস কারো ওয়ালে ভেসে উঠবে না।
আমার শরীর ক্রমান্বয়ে শীতল হয়ে যাচ্ছে।
- কিছু বলুন?
আমি কিছু বলতে পারছি না।
- চুপ করে আছেন কেন? খারাপ লাগছে নিজের অবস্থান থেকে সরে আসতে? নাকি খারাপ লাগছে আমাকে মেনে নিতে? নাকি খারাপ লাগছে আমাকে ছেড়ে যেতে? কোনোটা -হু
আবার সেই আদুরে গলায় হু। খুব অবাক লাগছে আমার, আমি এতটা নিষ্ঠুর হতে। খুব অবাক লাগছে আমার, আমি এতটা উদার হতে। খুব অবাক লাগছে আমার, আমি এতটা বাধ্য হতে। যদি এটা নারীকণ্ঠ না হয়ে পুরুষ কণ্ঠ হতো, তাহলে কি আমি এত কথা বলতাম? আমারও কি ভেতরে ভেতরে একটু লোভ হয়নি-মমতা পাবার, ভালোবাসা পাবার? আচ্ছা যদি তিনি তার পরিচয় প্রকাশ করে আমি কি তার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিব? না - তা করার ইচ্ছা তো আমার একটুও নেই। তাহলে কি আমি নিশ্চিত হয়ে নিচ্ছি তাঁর সঙ্গে আমার একটা গোপন সম্পর্ক গড়া কতটা নিরাপদ? তিনি চাচ্ছেন পরিচয় অপ্রকাশিত থেকেই একটা নির্মল বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আমি কিনা তাঁকে নিশ্চিত হতে চাইছি, খোলামেলা কতটা হওয়া যায় তার নিরাপত্তা। নিজের কাছেই নিজে ধরা খেয়ে গেলাম।
আসলে মানুষ অনেক বুদ্ধিমান হলে পৃথিবীর মানুষের কাছ থেকে নিজের অনেক অসুন্দরকে লুকিয়ে রাখতে পারে, কিন্তু নিজের কাছে কি নিজেকে লুকিয়ে রাখা যায়? যেমন আমি খুব চতুরতার সঙ্গে অন্যকে আমার সামনে খুলে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছি। বস্তুত কী হলো, নিজের উলঙ্গপনাটাই ধরা খেয়ে গেল নিজের কাছে। আমার নিজের ভেতরটাই যে উদ্দেশ্য নিয়ে বসে আছে আমি নিজেই কি জানতাম?
তাঁর ফোন কলটি অনেক পবিত্র ছিল। তাঁর ফোন কলটি অনেক প্রেমের ছিল। তাঁর ফোন কলটি অনেক ভালোবাসার ছিল।
একটি পবিত্র প্রেম-ভালোবাসা যেমন পারে রণক্ষেত্রে মিলনের শান্তি আনতে, তেমনি একটি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার আহ্বান পারে আমাকে আমার মনের সব কলুষতাকে দূর করে দিতে। আমার ভেতর থেকে যেন একটি ভালোবাসার ফুলের জন্ম হচ্ছে। সেই প্রসববেদনা আমার বেদনা মনে হচ্ছে না। আমি প্রচণ্ড সুখ পাচ্ছি। পৃথিবীর আর কিছু জানা হলো কি হলো না তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায় না। আমি শুধু চাই সুদ্ধ হতে, আমি শুধু চাই এমন একটি স্পর্শ, যার মধ্যে কোনো লিপ্সা নেই, লালসা নেই, কামনা-বাসনা নেই। আছে শুধু ভালোবাসা আর ভালোবাসা।
সেদিন অনেকক্ষণ তাঁর সঙ্গে কথা হলা। তিনি আমাকে তাঁকে তুমি বলার অধিকার দিলেন। সব দিক থেকেই আমি যেন তাঁর কাছে পরাজিত হতে থাকলাম। খুব ভালোবাসায় তিনিও আমাকে তুমি বলতে থাকলেন।