দুই বিড়ালের মহানুভবতা
মনোমুগ্ধকর ছোট্ট গ্রাম। সেই গ্রামে ছিল মিনু ও গড়িয়া নামে দুষ্টু বিড়াল। দুজন বন্ধু তাদের কৌতুকপূর্ণ বৈশিষ্টের জন্য সুপরিচিত ছিল।
এক সকালে মিনু এবং গড়িয়া গ্রামের রাস্তা ধরে হাঁটছিল। তারা যখন আরও এগোলো, তখন একদল জেলেকে কাঁধে ঝাঁকায় করে মাছ নিয়ে বাড়ি-বাড়ি বিক্রি করতে দেখল। মাছের গন্ধে তাদের লোভ ধরে গেল। মিনু ও গড়িয়া লোভ সামলাতে পারছিল না। তারা জেলেদের পিছু নিল। নিঃশব্দে জেলেদের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে উত্তেজনায় লেজ নাড়ছিল।
এমন সময় মিনু এবং গড়িয়া এক বাড়ির উঠোনে পৌঁছাল। সেখানে রোদে মাছ শুকানো দেওয়া ছিল। পাশের বাড়ির উঠোনেও একই অবস্থা। তার পরেরটিও। মিনু আর গড়িয়া উৎফুল্ল হয়ে উঠল। তারা বিশ্বাস করতে পারছিল না। এটা তাদের কাছে স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ছিল!
তবে কিছু বাড়িতে তারা মাছের কোনো গন্ধই পেল না। জ্যান্ত মাছ তো নয়ই, আশপাশে শুকিয়ে থাকা কোনো মাছের আশও দেখতে পেল না।
মিনু এবং গড়িয়া সহৃদয়ের অধিকারী। তারা মনে মনে দারুণ এক পরিকল্পনা করল। মাছ চুরি করবে, কিন্তু নিজেদের জন্য না। তারা তো মাঝেমধ্যে মাছের স্বাদ পায়। এবার গরিব মানুষকেও মাছের স্বাদ দেবে।
একটি ঝুড়িতে করে মিনু আর গড়িয়া বাড়ি বাড়ি ঘুরে মাছ কুড়াল। তার আগে তারা ছদ্মবেশ নিল। তাদের পেশাদার জেলের মতো দেখাচ্ছিল।
বিড়াল দুটি গ্রামে ছোট্ট খাবারের দোকান দিল। দোকানের সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, ‘মিনু এবং গড়িয়ার মৎস্যভোজনালয় শুধুই অভাবিদের জন্য।’ এই উদার বিড়াল বন্ধুদের কথা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল। মাছের স্বাদ নিতে লাইন ধরে এলো অনেকেই। লোকেরা মিনু ও গড়িয়ার সৌজন্যে নামমাত্র দামে সুস্বাদু মাছের খাবার খেয়ে প্রশংসা করতে শুরু করল।
গ্রামবাসী তাদের এই উদ্যোগে খুশি হয়ে নাম দিল ‘দ্য ফিশ ফিলানথ্রপিস্টস।’ এমনকি, তাদের জন্য পছন্দের মাছের কাটা দিয়ে নানা খাবার নিয়ে আসতে শুরু করল।
এমন পুরস্কারে মিনু আর গড়িয়া আনন্দিত হলো। তারা বুঝল—তাদের এমন ভালো কাজ মৃত্যুর পরও মানুষের হৃদেয় তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখবে।
সত্যি সত্যি এক সময় মিনু-গড়িয়ার হৃদয়গ্রাহী গল্প মুখে মুখে ছিল, যা কয়েকশ বছর ধরে চলে আসছে।