অপরিকল্পিত ঘের, অন্ধারকোটা বিলে জলাবদ্ধতা
নড়াইলের আন্দারকোটা বিলে অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের করায় প্রায় এক হাজার একর জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিলে এখন পানি আর পানি। এ পানি বের হতে না পারায় ফসল বিনষ্টের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা গত বুধবার বিভিন্ন স্থানে বিলের চারটি মুখ কেটে দিলেও প্রভাবশালী ঘেরমালিক মিন্টু মিয়া গতকাল বৃহস্পতিবার জোরপূর্বক দুটি বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ও কাশীপুর ইউনিয়ন, সদরের বাঁশগ্রাম এবং কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ি ইউনিয়নের মাঝখানে মাছের অভয়াশ্রম বলে খ্যাত আন্ধারকোটা বিল। এক বছর আগে সদরের বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের কামাল প্রতাপ গ্রামের এনায়েত কাজী ১৫ একর, লোহাগড়া উপজেলার আমাদা গ্রামের কামরুল খান ৪০ একর এবং কামঠানা গ্রামের মিন্টু মিয়া ৭৫ একর জমিতে অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের করেন। সে সময় স্থানীয় অনেক জমির মালিক ও কৃষক জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দেন। তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে, জমির টাকা না দিয়ে এবং অপরিকল্পিতভাবে এসব ঘের করা হয়েছে। তখন প্রশাসন সরেজমিন তদন্ত করে অভিযুক্ত তিন ঘেরমালিককে গ্রেপ্তার করে। পরে তারা আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও ঘেরের কাজ শুরু করেন।
জানা যায়, বর্ষকালে বৃষ্টি হলে এ বিলের পানি স্থানীয় হাজরাখালী বিল দিয়ে বের হয়ে লাইনের খাল হয়ে নদীতে যায়। কিন্তু গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বিলের পানি সরতে না পারায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এর থেকে মুক্তি পেতে ভুক্তভোগীরা ১৩০ একর বিশাল ঘেরের বিভিন্ন স্থানের বিলের চারটি মুখ কেটে দেয়। এ সময় আমাদা গ্রামের ঘেরের মালিক বাধা দিতে এলে তাদের সঙ্গে ভুক্তভোগী জমির মালিকদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
জমির মালিক সদরের কামাল প্রতাপ গ্রামের সাবেক মেম্বর ইমরুল শেখ, ইনজাহের কাজী, লোহাগড়ার অমাদা গ্রামের মুকুল শেখ, জামাল শেখ ও হামারোল গ্রামের হান্নান শেখ জানান, চারটি ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামের অনেকের ফসল নষ্ট করে, কাউকে না জানিয়ে কারও জমিতে জোরপূর্বক ঘের করা হয়েছে। আবার এমনভাবে ঘের করা হয়েছে তাতে জমিতে যাওয়ারও কোনো পথ নেই।
অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের করায় কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে তাদের আউশ, আমন এবং পাট পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া শীতকালেও জমিতে পানি জমে থাকায় এবার ঠিকমতো বোরা আবাদও করতে পারেনি।
তারা জানান, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় সংঘর্ষ শুরু হতে পারে। গত বুধবার পুলিশ এলেও বর্তমানে কোনো পুলিশ এলাকায় নেই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ঘেরমালিক মিন্টু মিয়া জানান, গ্রামের কয়েকজন ঘেরের মুখ কেটে দেওয়ায় তার অনেক টাকার মাছ ভেসে গেছে। আন্দারকোটা বিলের জলাবদ্ধতার জন্য আরও অনেক প্রভাবশালীর ঘের রয়েছে, তারাই বেশি দায়ী বলে তিনি দাবি করেন।
নড়াইল জেলা পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় জানান, বিষয়টি জানার পর পুলিশ সেখানে গেছে এবং খোঁজখবর রাখছে। যাতে কোনো গোলমাল না হয়, সেজন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত বলে দাবি করেন তিনি।