আদালত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিরা দেশেই আছে : ডিএমপি
রাজধানীর আদালত চত্বরে পুলিশের চোখে স্প্রে করে ছিনিয়ে নেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি দেশেই রয়েছেন। শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। তাদের গ্রেপ্তারে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আজ শনিবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসির) মো. আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অভিযান চালিয়ে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার মূল সমন্বয়ক ফাতিমা তাসনিম শিখা (৩১) ও তার আশ্রয়দাতা হুসনা আক্তার হুসনাকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে সিটিটিসি। ফাতিমা তাসনিম শিখা পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেলের স্ত্রী।
আসাদুজ্জামান বলেন, গত ২০ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশের চোখে-মুখে স্প্রে করে জঙ্গি সদস্য মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান (২৪) ও আবু সিদ্দিক সোহেলকে (৩৪) ছিনিয়ে নেওয়া হয়। আনসার আল ইসলামের নেতৃত্ব পর্যায়ের সিদ্ধান্তে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ১০-১২ জন সদস্য এ জঙ্গি ছিনতাইয়ে অংশ নেয়। চার জঙ্গিকেই ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও তারা দুজনকে ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়। ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিসহ একটি গ্রুপ চলে যায় সদরঘাটে। সেখান থেকে তারা একটি ‘আনসার হাউজে’ গিয়ে অবস্থান নেয়। আনসার আল ইসলামের সেফ হাউজকে সাংগঠনিক ভাষায় আনসার হাউজ বলা হয়।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, ছিনতাইয়ের ছয় মাস আগে তারা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভুয়া এনআইডি ও ভুয়া পরিচয়ে একটি বাড়ি ভাড়া নেয়। নেতৃপর্যায়ের নির্দেশে সংগঠনের আশকারি বিভাগের প্রধান আয়মানের নেতৃত্বে তারা সেখানে বৈঠক করে। শিখা ময়মনসিংহ থেকে এসে বৈঠকে অংশ নিতেন। বৈঠকের সব সিদ্ধান্ত জেলখানায় থাকা জঙ্গি সোহেলকে দিতেন শিখা। স্ত্রী পরিচয়ে দেখা করার সুযোগেই তিনি সংগঠনের তথ্য ও তাদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা জানাতেন।
আসাদুজ্জামান জানান, ঘটনার আগে ১ নভেম্বর শিখা, আয়মানসহ ছিনতাই অপারেশনে অংশ নেওয়া প্রত্যেকে আদালত প্রাঙ্গণে এসে পুরো এলাকা রেকি করেন। তারা কোন পথে পালাবেন, ছিনতাইয়ে ব্যর্থ হলে কি করবেন সেসব পুরো এলাকা রেকি করে নির্ধারণ করেন।
২০ নভেম্বর ঘটনার দিন আয়মান ও শিখা ঘটনাস্থলে থেকে পুরো ছিনতাই ঘটনা মনিটরিং করেন। ছিনতাই হওয়া দুই জঙ্গিকে নিয়ে প্রথমে সদরঘাট যায়। সেখান থেকে তারা পূর্ব নির্ধারিত আনসার হাউজে গিয়ে অবস্থান নেয়। আয়মান ও শিখাসহ বাকিরা অন্যপথে গিয়ে সেই আনসার হাউজে গিয়ে মিলিত হয়।
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ থেকে শিখার আশ্রয়দাতা হুসনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গভীর রাতে রূপগঞ্জের একটি বাসায় অভিযান চালানো হয়। কিন্তু, সেখানে দুই জঙ্গিকে পাওয়া যায়নি, তবে আমরা সেখান থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পলাতক দুই জঙ্গি দেশেই আছেন। আশা করছি শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।’
শিখার পরিচয় নিয়ে সিটিটিসির প্রধান বলেন, ফাতিমা তাসনিম শিখা ২০১৪ সালে এমআইএসটি থেকে প্রথম শ্রেণিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। একপর্যায়ে তার ভাই মোজ্জাম্মেল হোসেন ওরফে সাইমনের মাধ্যমে সে আনসার আল ইসলামের আদর্শে দীক্ষিত হয়। পরবর্তী সময়ে সায়মনের মাধ্যমে আবু সিদ্দীক সোহেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
সোহেল আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার সদস্য ছিলেন। সোহেলের সঙ্গে বিয়ের পর থেকে সে আরও গভীরভাবে সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
২০১৭ সালে মুক্তমনা ব্লগার অভিজিত রায়, দীপন ও নীলাদ্রি নিলয় হত্যা মামলার আসামি হিসেবে আবু সিদ্দিক সোহেল গ্রেপ্তার হয়। গ্রেপ্তারের পর থেকে বিভিন্ন এনক্রিপ্টেড অ্যাপসের মাধ্যমে শিখা কারাবন্দি সোহলসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখে সংগঠনের কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে আসছিলেন।