আমি দেশ, সরকার ও বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কথা বলেছি, বিচারককে মুফতি ইব্রাহীম
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া আলোচিত ইসলামী বক্তা হাফেজ মুফতি কাজী মুহাম্মদ ইব্রাহীমকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় দুই দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ নোমান এই আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আজ আসামি মুফতি ইব্রাহীমকে মোহাম্মদপুর থানার মামলায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।
এর আগে আজ দুপুরে কড়া নিরাপত্তায় মুফতি ইব্রাহীমকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপরে রিমান্ড শুনানি উপলক্ষে ৩১ নম্বর আদালতের এজলাসে তাঁকে তোলা হয়। তাঁর উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানি শুরু হয়।
রিমান্ড শুনানির সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, হাফেজ মুফতি কাজী মুহাম্মদ ইব্রাহীম একজন স্বনামধন্য আলেম। তিনি হাদিসের বিশারদ। তিনি দেশ ও সরকারের নামে কোনো উসকানিমূলক কথা বলেননি। তাঁর কথায় সরকারের পতন হয়ে যাবে, সরকার এতটা দুর্বল নয়। তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
আইনজীবী আরও বলেন, গত ২৭ সেপ্টেম্বর মুফতি ইব্রাহীমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই সময় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রিমান্ডের ফরওয়ার্ডিং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সব লিখে দেওয়া হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে আর কোনো তথ্য উদঘাটন করা হবে না। রিমান্ডে নিলে শুধু নির্যাতনই করা হয়। এ ছাড়া আর কিছুই না। দয়া করে রিমান্ড নামঞ্জুর করা হোক।
তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন শুনানিতে বলেন, মুফতি কাজী ইব্রাহীম দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কথাবার্তা বলেছেন, যা দেশের ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। তিনি দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছিলেন। তাঁর সর্বোচ্চ রিমান্ড দেওয়া হোক।
এরপরে মুফতি কাজী ইব্রাহীম বিচারকের উদ্দেশে বলেন, আমি দেশ, সরকার ও বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কথা বলেছি। আমি তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলিনি। এই সোনার বাংলাদেশ ৩০ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি। এ দেশের ক্ষতি আমরা চাই না।
শুনানি শেষে বিচারক দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে মুফতি কাজী ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ডিবি পুলিশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এবং একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেছেন।’
ওসি আব্দুল লতিফ বলেন, ‘মুফতি কাজী ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য এবং ফেসবুক লাইভে এসে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্তি করার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি বিভাগ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে।’
এ ছাড়া রাতেই মোহাম্মদপুরের জেড এম রানা নামের এক ব্যক্তি ৩৮৫, ৪০৬, ৪২০ এবং ৫০৬ পেনাল কোডের ধারায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে আরেকটি মামলা করেছেন বলে জানান ওসি।
মুফতি কাজী ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে করা দুটি মামলারই তদন্ত করবে ডিবি পুলিশ। আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমরা শুধু তাঁর বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করেছি। এ দুটি মামলার তদন্তভার এরই মধ্যে ডিবির কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
গত সোমবার দিবাগত রাতে মুফতি কাজী মুহাম্মদ ইব্রাহীমকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডের একটি বাসা থেকে আটক করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য এবং নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে বলে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছিলেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম।
মাহবুব আলম বলেন, ‘মুফতি কাজী ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেসব বিষয়ে জানতে তাঁকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। মুফতি ইব্রাহীম ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিতেন। বিগত সময়ে ঘটা হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবে তাঁর সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
ইসলামী বক্তা মুফতি কাজী ইব্রাহীম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহুল আলোচিত-সমালোচিত। করোনা মহামারি নিয়ে নানা বক্তব্য দিয়ে তিনি ভাইরাল হন। বিভিন্ন সভায় তিনি দাবি করতে থাকেন যে, ইতালিপ্রবাসী মামুন মারুফ নামের কথিত এক ব্যক্তির স্বপ্নযোগে ভাইরাসের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কথা বলেন। বিজ্ঞান সম্পর্কেও তিনি ভিত্তিহীন কথা বলে ট্রলের শিকার হন। নারীদের নিয়ে তাঁর বিদ্রুপ মন্তব্যেরও সমালোচনা করেন অনেকে। সম্প্রতি ইংরেজ কবি ও নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের নাম শেখ যুবায়ের ছিল বলেও মন্তব্য করেন মুফতি ইব্রাহীম।