‘আমি যেখানে শেষ করেছি, নতুন আইজিপি সেখান থেকে শুরু করবেন‘
সদ্যনিয়োগ পাওয়া পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদকে অভিনন্দন জানিয়ে বিদায়ী পুলিশপ্রধান ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, ‘আমি যেখানে শেষ করেছি, তিনি (বেনজীর আহমেদ) সেখান থেকে শুরু করবেন। এটা ছাড়া তাঁর একটি পরিকল্পনা আছে এবং পুলিশকে তিনি আরো উচ্চতায় নিয়ে যাবেন। প্রত্যাশা করছি, তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাবেন এবং নতুন আইজিপি শুভ কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যাবেন।'
আজ মঙ্গলবার পুলিশ সদরদপ্তর থেকে অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জাবেদ পাটোয়ারী এসব কথা বলেন। নতুন আইজিপি বেনজীর আহমেদ আগামীকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে জাবেদ পাটোয়ারীর স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন। বিদায়ী আইজিপিকে এরই মধ্যে সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
নতুন পুলিশপ্রধানকে শুভ কামনা জানিয়ে জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ও র্যাবের দায়িত্বে থাকাকালীন অনেক ভালো ভালো কাজ করেছেন। নতুন আইজিপি হিসেবে যোগদানের পর থেকে তিনি আরো ভালো ভালো কাজ করবেন বলে আমি প্রত্যাশা করি।'
করোনাভাইরাসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আইজিপি বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় প্রথম থেকেই মাঠে ছিল পুলিশ। যারা বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছে সেসব প্রবাষীকে ঘরে রাখতে তাদের খোঁজ-খবর নিতে কাজ করেছে পুলিশ। এমনকি সারা দেশে হাটে, মাঠে, ঘাটে, মসজিদে এবং মন্দিরে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে। মানুষ সচেতন না হলে বিশ্বের কোনো দেশ নভেল করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাবে না, পায়নি। করোনা বিস্তার রোধের একটি উপায় ঘরে থাকা। দেশবাসীর উদ্দেশে আমি বলতে চাই, আপনারা ঘরে থাকুন, আমরা আপনাদের জন্য মাঠে রয়েছি।'
জাবেদ পাটোয়ারী আরো বলেন, ‘জনগণের ফোন পেয়ে পুলিশ এখন দ্বারে দ্বারে গিয়ে খাবার ও ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছে। অনেকে মারা যাচ্ছেন, যাদের স্বজনরা মরদেহের কাছে আসছে না। পুলিশ তাদের দায়িত্ব নিয়ে দাফন করছে। এ ছাড়া অনেক এলাকা, অনেক সড়ক লকডাউন হয়েছে। করোনার ঝুঁকিতে সেখানে কাউকে চলাফেরা করতে দেওয়া হয় না। অথচ সেখানেও রাস্তায় দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ।'
পুলিশের ইমেজ বাড়ানোর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘দায়িত্ব এবং ক্ষমতা একটি আমানত। দুই বছর দুই মাস ১৫ দিন পুলিশপ্রধান হিসেবে কাজ করেছি। এ ছাড়া ৩৫ বছরের কর্মজীবনে সর্বোত্তম সেবা দিতে চেষ্টা করেছি। আইজিপি হওয়ার পর নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতি এই তিনটি বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আর যেটা মূল উদ্দেশ্য ছিল তা হলো পুলিশের ইমেজকে বিল্ডআপ করা। আইজিপি হওয়ার পর সাতশ ওসির সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান কথা বলেছি এবং তাদের মোটিভেট করেছি। পরে জনগণই জানিয়েছে যে, এই ওসি আগের ওসি নেই, অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে।'
পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থার জায়গাটি মজবুত হয়েছে উল্লেখ করে পুলিশপ্রধান বলেন, ‘গত দুই বছরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন এসেছে প্রায় দুই কোটি আর সেবা দেওয়া হয়েছে ৫৮ হাজারটি। করোনাভাইরাসের সময় দ্বিগুণ ফোন আসছে এবং খাদ্য সাহায্যও চাওয়া হচ্ছে।'
‘জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে আমরা কতটুকু স্বার্থক তা এখন সারা দেশের জনগণ বুঝতে পারবেন। জনবান্ধব পুলিশ, জনতার পুলিশ হিসেবে দুবছরে কতটুকু গড়ে তুলেছি তা আপনারাই...। আগের ইমেজ আর বর্তমান ইমেজ... ওসি সাইন বোর্ড লাগিয়ে লিখিয়েছেন, জনতার পুলিশ। ওসি জনতাকে বলছেন, আমাকে স্যার’ বলতে হবে না।'
জাবেদ পাটোয়ারী আরো বলেন, ‘আগেই থেকেই বলেছি, ব্যক্তির দায় বাহিনী নেবে না। কেউ ব্যক্তিগতভাবে কোনো অন্যায় করলে তাঁর সাজা পেতেই হবে। এখানে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি।'