আড়াই বছরেও বয়স্কভাতার চেক ভাঙাতে পারেননি নুরুল ইসলাম
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় অসহায় এক বৃদ্ধ প্রায় আড়াই বছর ব্যাংক ও সমাজসেবা অফিসে ধরনা দিয়েও তাঁর বয়স্ক ভাতার চেক ভাঙাতে পারেননি। উল্টো সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাজে আচরণ করেন বলে অভিযোগ করেন বৃদ্ধ নুরুল ইসলাম (৭০)।
বৃদ্ধ নুরুল ইসলাম জানান, ২০১৮ সালের ৯ আগস্ট এবং ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল শ্রীপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে ইস্যুকৃত বয়স্কভাতার দুটি চেক পেয়েছেন তিনি। তাঁর ওই চেকের টাকা তুলতে তিনি সাত বার সমাজসেবা অফিস ও স্থানীয় সোনালী ব্যাংকে যোগাযোগ করেন। কিন্তু চেকের টাকা তিনি তুলতে পারেননি।
‘ব্যাংকে গেলে কর্মকর্তারা বলেন, সমাজসেবা অফিসের তালিকার সঙ্গে আমার পাস বইয়ের তথ্যের গড়মিল থাকায় টাকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সমাজসেবা অফিসে গিয়ে ওই তথ্য ঠিক করে দিতে বললে ওই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন’, যোগ করেন নুরুল ইসলাম।
অপর সুবিধাভোগী স্থানীয় আমেনা বেগম প্রায় একই ধরনের অভিযোগ করে বলেন, ‘সমাজসেবা অফিসের দেওয়া পাসবইয়ের সঙ্গে ব্যাংকে পাঠানো তালিকায় লেখা আমার স্বামী এবং বাবার নামের তথ্যে গড়মিল রয়েছে। ফলে ব্যাংকে গেলেও টাকা তুলতে পারছি না।’
একই ধরনের সমস্যার অভিযোগ করেন স্থানীয় দক্ষিণ ভাংনাহাটি এলাকার মোন্তাজ উদ্দিন। তিনি অভিযোগ করেন, ওই অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে প্রচণ্ড গাফিলতি রয়েছে। তারা ঠিকমতো অফিস করেন না। তাই প্রতিনিয়তই নানা রকমের ভুল হচ্ছে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের বৃদ্ধদের। নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন বয়স্করা।
রোববার শ্রীপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নানা সমস্যার কারণে প্রায় অর্ধশত বয়স্ক লোক ভিড় জমিয়েছেন। হৈচৈ করছেন এসব ভুক্তভোগী। স্থানীয় কেওয়া (পূর্ব) এলাকার রমিজা, রহিমাসহ দূর-দূরান্ত থেকে বয়স্ক ব্যক্তিরা সকালে গিয়ে তাদের সমস্যা সমাধান করার কথা বললে তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছেন ওই অফিসে কর্মরত কয়েকজন সমাজকর্মী। তারা কয়েকজনকে অফিস থেকে জোর করে বের করে দেন। এ সময় শ্রীপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাও অফিসে ছিলেন না।
শ্রীপুরের সমাজসেবা অফিসে আগত বয়স্ক লোকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কথা অস্বীকার করে সমাজকর্মী নাসির উদ্দিন বলেন, ‘অফিসের কাগজপত্রে (তালিকার) বয়স্কদের তথ্যের ত্রুটি চিহ্নিত করা হচ্ছে। ওইসব সমস্যা দ্রুত সমাধান করা হবে।’
দুই থেকে তিন বছর আগের ত্রুটিও ঠিক না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এস এম আনোয়ারুল করিম বলেন, ‘শ্রীপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মঞ্জুরুল ইসলাম রোববার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমি আগামীকাল সোমবার নিজে সেখানে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। এ ব্যাপারে কারো গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’