ইকবাল ভবঘুরে বা ভারসাম্যহীন নয়, সুচতুর ও সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন : সিআইডি
কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ে পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রেখে অবমাননার মামলার আসামি ইকবাল হোসেন মোটেই মানসিক ভারসাম্যহীন নয়, বরং সুচতুর ও সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন ব্যক্তি। এমন মন্তব্য করেছেন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ-সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজোয়ান।
দ্বিতীয় দফায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে খান মুহাম্মদ রেজোয়ান জানান, ইকবাল অত্যন্ত সুচতুর ও দৃঢ় বিশ্বাসের একজন সুস্থ মস্তিষ্কের লোক। ঘটনার পর আত্মগোপন করতে বিভিন্ন সময় ইকবাল স্থান পরিবর্তন করেছে বলে জানান সিআইডি’র এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার মামলায় গ্রেপ্তার ইকবালসহ চার জনের দ্বিতীয় দফায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে তোলা হচ্ছে আজ বুধবার।
এরই মধ্যে ইকবাল হোসেনের মানসিক ভারসাম্যতা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ইকবালের পরিবারের সদস্যেরাও দাবি করেছেন—ইকবাল মানসিকভাবে সুস্থ নয়। কিন্তু, দ্বিতীয় দফায় জিঞ্জাসাবাদ শেষে সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার জানান, ইকবাল মোটেই ভারসাম্যহীন নয়, তিনি অত্যন্ত সুচতুর।
খান মুহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, ‘তাকে (ইকবাল) আমরা ১১ দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। শুধু আমরা নই, আমাদের বিভিন্ন টিম—সিআইডি পুলিশ, জেলা পুলিশ, পিবিআই’র একটি টিম, অ্যান্টি-টেরোরিজমের একটি টিম—জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সবাই একাধিক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। পাশাপাশি ডিজিএফের একটি টিম তিন দফায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।’
‘তো, আমাদের সবার ধারণা—সে খুব সুচতুর এবং ‘স্ট্রং বিলিফ’ সম্পন্ন সুস্থ মস্তিষ্কের একজন লোক। তার কথা শুনলে আপনারা নিজেরাও অবাক হবেন এবং তাকে ভবঘুরে বা ভারসাম্যহীন বলার কোনো সুযোগ নেই’, বলেন খান মুহাম্মদ রেজোয়ান।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে খান মুহাম্মদ রেজোয়ান আরও জানান, ইকবাল নানুয়া দিঘির পাড়ে পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার আগে পুরো এলাকাটি রেকি করে। এরপর দারোগা বাড়ী মাজারসংলগ্ন মসজিদ থেকে পবিত্র কোরআন নিয়ে সেখানে রাখে। পরে আত্মগোপনের জন্য বারবার স্থান পরিবর্তন করে।
সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, ‘ঘটনার সূত্রপাত ১২ অক্টোবর দিবাগত রাতে; গভীর রাতই বলতে হবে, ৩টার পরে। তারপর থেকে ইকবাল কিন্তু ঘটনা ঘটিয়ে পুনরায় একই মসজিদে ফিরে যায়। সেখানে সে বিশ্রাম নিয়ে সকালে আবার পূজামণ্ডপের ওখানে আসে, মিছিলে অংশগ্রহণ করে। মিছিলে অংশ নেওয়ার আগে সে একবার এসে রেকি করে যায় যে, কোনো প্রতিক্রিয়া হয়েছে কি না। প্রতিক্রিয়া দেখে এসে সে আবার ঘণ্টা দুয়েক পরে মিছিলে অংশগ্রহণ করে। এবং পূজামণ্ডপের বিরুদ্ধেও স্লোগান দেয়।’
‘এর পরবর্তী ঘটনায় সে সুকৌশলে কুমিল্লা থেকে পালিয়ে আত্মরক্ষার্থে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম চলে যায়। এবং চট্টগ্রাম থেকে সে পরবর্তীকালে কক্সবাজারের উদ্দেশে গমন করে’, যোগ করেন খান মুহাম্মদ রেজোয়ান।
গত ২১ অক্টোবর কক্সবাজার থেকে ইকবালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ২৩ অক্টোবর কুমিল্লা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ইকবালসহ অভিযুক্ত চার জনকে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে দ্বিতীয় দফায় আদালত আবারও পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।