ইসি নিরপেক্ষতা হারিয়েছে : কাদের সিদ্দিকী
নির্বাচন কমিশনকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী (বীরউত্তম) বলেছেন, ‘আপনারা (ইসি) আপনাদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন।’ তিনি বলেছেন, ‘সংলাপে বিএনপির জন্য দুই ঘণ্টা, আওয়ামী লীগের জন্য দুই ঘণ্টা বরাদ্দ, বাকিদের জন্য এক ঘণ্টা। এটা আপনাদের সিদ্ধান্ত কি না? যদি আপনাদের সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, তবে, আপনারা আপনাদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন।’
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসে এ মন্তব্য করেন কাদের সিদ্দিকী।
কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যদি আগে থেকেই বড় দল, ছোট দল এটা বিভাজন করে, তাহলে শুধু ভোটারদের প্রতি কেন, আমাদের প্রতিও একটা বিমাতাসুলভ আচরণ হয়। সব দলকে এক মাপে বিচার করুন।’
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বলেন, ‘ক্ষমতা আজ আছে, কাল নেই। ক্ষমতা খুবই ক্ষণস্থায়ী। ক্ষমতার চাইতে ক্ষণস্থায়ী আর কিচ্ছু নেই।’
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আগের সিইসির মতো আপনাকেও আমি কদিন যাবত দেখছি, আপনি কথাবার্তায় ভাসছেন—বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন নষ্ট হবে, গণতন্ত্র নষ্ট হবে, এই ধরনের কিছু কথা শুনতে পাচ্ছি। আমরা বলবো—এইখানে বিএনপি কিছু না, আওয়ামী লীগও কিছু না, এখানে সবকিছু হচ্ছে জনগণ এবং দেশের ভোটার। যদি ৬৫-৭০ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে যায় এবং ভোট দেয়, তাহলে আপনার চাইতে চমৎকার নির্বাচন কমিশন আর হতে পারে না।’
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন যাচাই করার জন্য ইসির আমন্ত্রণে সাড়া না দেওয়ার বিষয়ে কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে আমাদের পরিচয়ও হয়নি, আলোচনাও হয়নি। আপনাদের বাড়িতে আসলাম, কন্যা দেখলাম, গভীর আলোচনা হলো, এটা আমাদের কাছে ঠিক সুন্দর মনে হয়নি। তাই আমরা ওখানে (ইভিএম নিয়ে এর আগের সংলাপে) অংশগ্রহণ করিনি।’
কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘আমরা আশা বা নিরাশা কোনোটার দলেই না। আমরা অত্যন্ত খোলা মন নিয়ে আপনাদের কাছে এসেছি। কিন্তু, আপনাদের কর্মকাণ্ড যতটা সময় পার হয়েছে, ততটা সময় আমাদের মধ্যে একটা দ্বিধা, একটা দ্বন্দ্ব, একটা দৈন্য কাজ করছে।’
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘গত নির্বাচনে কমিশন সমস্ত দেশকে ডুবিয়েছে। তার আগের জনও তাই করেছেন। তার আগের জনও কম বেশি তাই করেছেন। আমার দেখা মতে, আবু হেনার মতো শক্তিশালী মেরুদণ্ডওয়ালা নির্বাচন কমিশনার দ্বিতীয় কেউ হননি।’
ইভিএমে ভুল ধরিয়ে দিলে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা প্রসঙ্গে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘কমিশনের পদে থেকে এই ধরনের বক্তব্য দেওয়া ঠিক নয়।’
তখন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘এটা ভুলে একজন নির্বাচন কমিশনার দিয়ে ফেলেছেন। আমার মুখ থেকে এমন শব্দ আমি উচ্চারণও করিনি। এটা বিভ্রান্তি।’
কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে এমপি বাহার নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়েন সিইসি। কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘ক্ষমতা থাকলে কেন নির্দেশনা মানাতে পারলেন না। আর ক্ষমতা না থাকলে তাঁকে সেই নির্দেশনা দিলেন কেন?’
জবাবে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘ব্যাখ্যাটা সে সময় দিয়েছি।’
নীতির সঙ্গে কখনো বিরোধী হলে সিইসিকে পদত্যাগ করার পরামর্শও দেন কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘এতে আপনি মাথার মনি হয়ে থাকবেন। দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে পৌরুষের লক্ষণ, মানুষের লক্ষণ। এ ছাড়া দলগুলোর জন্য যত দরজা খোলা রাখবেন তত মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন। পানি ছাড়া যেমন মাছ বাঁচে না, তেমনি রাজনৈতিক দল ছাড়া ইসির কোনো অস্তিত্ব নেই। কোনো ভুলের জন্য ছাগলের খুঁটি ধরে থাকবেন না। ভুল বুঝতে পারলে স্বীকার করবেন, দেখবেন আপনার মর্যাদা বাড়ছে, ক্ষমতা বাড়ছে, আল্লাহও খুশি হচ্ছেন। আল্লাহ খুশি না হলে আপনি সম্মান পাবেন না।’
কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘অনেকে বলেন তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচন করব না। নির্বাচনের সময় সরকার কে? আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন, আমি বলব তফসিল ঘোষণা করার পর সরকার কে? যিনি প্রধানমন্ত্রী তিনি প্রধানমন্ত্রী, যিনি রাষ্ট্রপতি তিনি রাষ্ট্রপতি। কিন্তু, আমি মনে করি নির্বাচন কমিশনই রাষ্ট্রপতি, নির্বাচন কমিশনই প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু, আপনি সেই ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারবেন কি পারবেন না, সেটা মেরুদণ্ডের ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রী তার গেটের বাইরে বের হবেন কি হবেন না, সেটাও ইসিকে জিজ্ঞেস করতে হবে।’
সংলাপে অন্যদের মধ্যে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।