ই-অরেঞ্জে যুক্ত বনানীর পরিদর্শক ভারতে আটক
গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান ই–অরেঞ্জ। প্রতিষ্ঠানটির কথিত পৃষ্ঠপোষক বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানাকে অবৈধ প্রবেশের অভিযোগে ভারত-নেপাল সীমান্ত থেকে আটক করা হয়েছে। ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা থেকে গতকাল শুক্রবার সোহেল রানাকে আটক করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স-বিএসএফ।
তবে সোহেল রানার আটকের ব্যাপারে নিশ্চিত নয় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগ। বনানী থানা এই বিভাগের অধীন। পরিদর্শক সোহেল রানাকে আটকের ব্যাপারটি নিশ্চিত হতে ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে পুলিশ।
পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশানার (ডিসি) মো. আসাদুজ্জামান বিকেলে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা সোহেল রানাকে গতকাল থেকেই খুঁজছি। বিএসএফের কাছে সোহেল রানা আটক হয়েছেন, গণমাধ্যমে এমন খবর আসার পর থেকে আমরা ভারতীয় অ্যাম্বাসির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু, তারা এখনও আমাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে আটকের বিষয়টি জানায়নি।’
বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশও (বিজিবি) বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
বিজিবির পরিচালক (অপারেশনস) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান বিকেলে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরাও গণমাধ্যমে দেখছি, ভারত-নেপাল সীমান্তে সোহেল রানা নামে এক বাংলাদেশি আটক হয়েছেন। কিন্তু, বিএসএফের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত এ রকম কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য পাইনি। আটক হয়ে থাকলে এ ব্যাপারে সঠিক নিয়ম অনুযায়ী যোগাযোগ করা হবে।’
এদিকে পুলিশের ডিসি মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, পরিদর্শক সোহেল রানা গত বৃহস্পতিবার অফিস করেছিলেন। কিন্তু, গতকাল শুক্রবার তিনি অফিসে যাননি।
ডিসি বলেন, ‘আমরা সোহেল রানাকে গতকাল থেকেই খুঁজছি। কিন্তু, তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তার ফোনে কল ঢুকলেও তিনি ধরছেন না। সোহেল রানা আমাদের কাছে ছুটির দরখাস্ত করেননি। কোথাও যাবেন কী যাবেন না, তাও আমাদের জানাননি।’
জানা গেছে, বিএসএফের হাতে আটক সোহেল রানা গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা ‘আত্মসাৎকারী’ বহুল আলোচিত ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান ই–অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের বনানী থানায় পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ পরিদর্শকের বোন ও ভগ্নিপতি ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘ই–অরেঞ্জ’ পরিচালনা করতেন।
গত ১৭ আগস্ট অগ্রিম অর্থ পরিশোধের পরও মাসের পর মাস পণ্য না পাওয়ায় ই–অরেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রতারণার শিকার গ্রাহক মো. তাহেরুল ইসলাম। ওই সময় তার সঙ্গে প্রতারণার শিকার আরও ৩৭ জন উপস্থিত ছিলেন। গ্রাহকের এক হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ওই মামলা হয়। আসামিরা হলেন ই–অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, আমানউল্ল্যাহ, বিথী আক্তার, কাউসার আহমেদ ও পুলিশের বনানী থানার পরিদর্শক সোহেল রানা।
তবে, শুরু থেকেই ই–অরেঞ্জের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন পরিদর্শক সোহেল রানা। যদিও অরেঞ্জ বাংলাদেশ নামে প্রতিষ্ঠান খুলতে নেওয়া টিআইএন সনদে পরিচালক হিসেবে সোহেল রানার নাম দেখা যায়। প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিভিন্ন সময়ে আড়াই কোটি টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।