‘এই সরকারের কাছে জনগণের কল্যাণের দাবি জানানো অর্থহীন’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে জনগণের কল্যাণের জন্য কোনো দাবি জানানো অর্থহীন। বোধগম্য কারণেই জ্বালানি তেলের দাম কিংবা বাস ভাড়া কমানোর দাবি আমরা করছি না। দেশবাসীর কাছে আমরা বলতে চাই, এমন সরকার ক্ষমতায় থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর পর্যায়ে চলে যাবে। এমন লুটেরা একটি সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য শপথ এবং চেষ্টা করাই হোক আমাদের যাবতীয় ক্ষোভের সবচেয়ে কার্যকর বহিঃপ্রকাশ।’
আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মান্না এসব কথা বলেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘করোনার ভয়ঙ্কর সংকটে দীর্ঘকাল কাটিয়েছে এই দেশের মানুষ। এই চরম সংকটে মানুষ সরকারকে পাশে পায়নি। করোনার সংকট শেষ হয়েছে তা বলা যায় না। কিন্তু এই মুহূর্তে কিছুটা সহনশীল পরিবেশ থাকার কারণে চরম সংকটাপন্ন মানুষ তার নিজের মতো করে আবার বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে শুরু করেছিল। কিন্তু সেটার পথেও বিরাট বাধা তৈরি করলো সরকার, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করার মাধ্যমে। হ্যাঁ, এটা ভাত দেবার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই সরকার।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক আরও বলেন, ‘এই দেশের কিছু লুটেরা ব্যবসায়ী সরকারের যোগসাজশে জনগণের পকেট কেটেছে সব সময়। ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে মুহূর্তেই দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যদিও নতুন মূল্যের পণ্য বাংলাদেশে আমদানি করে বাজারজাত হতে দুই মাসের বেশি সময় লাগে। আবার সেই পণ্যের দাম যখন কমে যায়, তখন কমানো হয় না সেই দাম কিংবা খুব সামান্যই সমন্বয় করা হয়। এই দেশের সেসব লুটেরা ব্যবসায়ীদের মতো আচরণ করছে সরকার। যারা বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে মুহূর্তেই দাম বাড়াচ্ছে, কিন্তু যখন দাম কম থাকে বছরের পর বছর তখন তারা দাম কমায়নি। সুতরাং আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম বাড়ানো কমানো অর্থাৎ তেলের দাম এই দেশে কখনো ভাসমান ছিল না। তাহলে এখন কেন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাত দেওয়া হচ্ছে?’
মান্না বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর জন্য ভারতে জ্বালানি তেল পাচার হবে এই অজুহাত দেওয়া হচ্ছে। সরকারের মতে, সেখানকার দাম আমাদের চাইতে বেশি, তাই এটা হবে। জ্বালানির মতো একটি তরল বস্তু একটি দেশে পাচার হতে পারে এরকম উদ্ভট কথা মন্ত্রীরা বলছেন। তর্কের খাতিরে তাদের কথা সঠিক বলে যদি ধরেও নেই তবুও জরুরি প্রশ্ন হচ্ছে— কেন তাহলে আমরা জনগণের অর্থ খরচ করে একটি সীমান্তরক্ষী বাহিনী, বিজিবি কেন পুষছি?’
মান্না আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সব সময় যা হয়, হয়েছে সেটাই। যে পরিমাণ ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, ভাড়া বেড়ে গেছে তার চাইতে অনেক বেশি। ঢাকা শহরের ভেতরে এবং আন্তঃজেলা পরিবহণগুলোতে ভাড়া বাড়ানোর হার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। এই ভাড়া বাড়ানোর মাধ্যমে সরকার জনগণের উপরে প্রচণ্ড আর্থিক চাপ তৈরি করেছে। সরকার কিংবা মালিক সংগঠন কেউ তার কথা রাখেনি, এই সরকার এবং সংগঠনগুলোর চরিত্র এবং অতীত কর্মকাণ্ড দেখে জনগণ অবশ্য জানে, এদের কথা ভাবার কথা না। জ্বালানির দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভারতের তুলনা দেওয়া হলেও দেখা যায় ভারতে ডিজেলের দাম বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। কিন্তু সেখানে পরিবহণের খরচ বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, ‘টিসিবির ২০২০ সালের ১ মার্চ ও গত বৃহস্পতিবারের বাজারদরের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সে সময়ের তুলনায় এখন মোটা চালের গড় দাম সাড়ে ৩১ শতাংশ, খোলা আটার ২০ শতাংশ, খোলা ময়দার ৩০ শতাংশ, এক লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল ৪৩ শতাংশ, চিনি ১৬ শতাংশ, মোটা দানার মসুর ডাল ৩০ শতাংশ ও গুঁড়ো দুধ ১৩ শতাংশ বেশি। এসব নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। দ্রুত ব্যবস্থার জন্য শুল্ক কমানোর পরামর্শ এসেছিল, কিন্তু করা হয়নি। মজুতদারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হয়নি।’
ডাকসুর এই সাবেক ভিপি বলেন, ‘সরকারি ভর্তুকি দিয়ে সংকট সমাধান করা যেত। আমরা জেনে গেছি গত সাত বছরে জ্বালানি তেলের দামের নিম্নমুখী প্রবণতা আর করোনার সময়ে প্রায় শূন্যে নেমে যাওয়ায় সরকার এই বাবদ ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। সরকার এখন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) নগদ টাকা দিতে পারত ঘাটতি পুষিয়ে নিতে অথবা পারত বিপিসির ওপরে করভার (প্রতি লিটার ডিজেলে কর ১৯ টাকা) কমিয়ে দিতে। অর্থাৎ যে কোনো ফর্মেই হোক, ভর্তুকি দেওয়া জরুরি ছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় নেতা শহীদুল্লাহ্ কায়সার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মমিনুল ইসলাম, ডা. জাহেদুর রহমান প্রমুখ।