‘এসআই আকবরকে আমাদের দরকার’, ইমিগ্রেশনে বার্তা পিবিআইয়ের
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান, উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার বলেছেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে আমাদের মনে হয়েছে, সিলেট কোতোয়ালি থানার বন্দর বাজার ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে আমাদের দরকার। সেজন্য আমরা সমগ্র ইমিগ্রেশনে জানিয়ে দিয়েছি, যাতে তিনি পাসপোর্ট নিয়ে পালাতে না পারেন।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানমণ্ডিতে অবস্থিত পিবিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বনজ কুমার মজুমদার এ কথা বলেন।
পিবিআইয়ের প্রধান বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও সীমান্তের বিভিন্ন ইমিগ্রেশন সেন্টারে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আকবর যেন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারেন। এখন আমাদের মূল কাজ হলো, আকবরকে আমাদের ধরতে হবে। আমরা টিম রেডি করেছি।’
সিলেট কোতোয়ালি থানার বন্দর বাজার ফাঁড়ি হেফাজতে রায়হান (৩৩) হত্যার ঘটনার তদন্ত কাজ শুরু করেছে পিবিআই। ঘটনার পর হঠাৎ করেই পুলিশের নজরদারির বাইরে চলে যান ফাঁড়ির এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া। তাঁর অবস্থান চিহ্নিত করতে পারছে না পুলিশ।
বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘সিলেটের ঘটনার ডকেট ((সাক্ষ্য-প্রমাণ ও তথ্যের নথি)) আমরা গত পরশুদিন রাতে পেয়েছি। ঘটনাস্থলে সিলেটের পিবিআই টিম তিন থেকে চার ঘণ্টা ছিল। আমরা আমাদের তদন্ত শুরু করে দিয়েছি। তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের মনে হয়েছে, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া উপপরিদর্শক আকবরকে আমাদের দরকার।’
পিবিআইয়ের প্রধান বলেন, ‘আমাদের আইজিপি স্যার সবসময় বলেন, করোনার মধ্যে পুলিশ যে সুনাম কামিয়েছে, তা যেন নষ্ট না হয়। আকবর এই অপকর্ম করে বাহিনীর সুনাম নষ্ট করেছে, আমাদের কথা চিন্তা করেননি। সুতরাং, তার বিষয়ে আমাদের চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই।’
১০ হাজার টাকার জন্যই কী রায়হানকে হত্যা করা হলো- এমন প্রশ্নে বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘আমরা বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখছি। একদিনেই সবকিছু বলা যাবে না। তবে আমরা একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কবর থেকে তার মরদেহ আবার উঠাব এবং তদন্ত করব।’
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরের বিরুদ্ধে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার তদন্তও করছে পিবিআই। এই বিষয়ে জানতে চাইলে পিবিআইয়ের প্রধান বলেন, ‘আমরা এখনো মামলার ফাইল পাইনি। পেলে তদন্তকাজ শুরু করব। এ ক্ষেত্রে তদন্তভার সিনিয়র কোনো অফিসারকে দেওয়া হবে।’
সিলেট নগরীর আখালিয়া এলাকার নেহারিপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান উদ্দিন আহমদকে (৩৩) গত শনিবার রাতে বন্দর বাজার ফাঁড়িতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় বলে পুলিশের তদন্তেই বেরিয়ে এসেছে। পরের দিন রোববার সকালে তাঁর লাশ পায় পরিবার। পরে ওই দিন রাতে নিহত রায়হানের স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
স্বজনদের অভিযোগ, ১০ হাজার টাকা না পেয়ে রায়হানকে পুলিশ হেফাজতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আর পুলিশ দাবি করেছে, নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাষ্টঘর এলাকায় ছিনতাইয়ের সময় গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন রায়হান। তবে স্থানীয় কাউন্সিলর বলছেন, যে এলাকায় গণপিটুনির কথা বলা হচ্ছে সেখানকার সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে এ ধরনের কোনো কিছু দেখা যায়নি।
এ ঘটনার পর গতকাল সোমবার ওই ফাঁড়ির দায়িত্বরত কর্মকর্তা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া প্রত্যাহার করা হয়- সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে।
থানাতেই রায়হানের মৃত্যু : তদন্ত কমিটি
সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কোতোয়ালি থানাধীন বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে তিন ঘণ্টা ১০ মিনিট ৪০ সেকেন্ড অবস্থানকালেই পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যু হয় রায়হান উদ্দিন আহমদের। এসএমপি গঠিত তদন্ত কমিটির প্রথম দিনের তদন্তে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান উপকমিশনার (ডিসি) আজবাহার আলী শেখ।
শনিবার দিবাগত রাত ২টা ৩৮ মিনিটে নগরীর কাষ্টঘর এলাকা থেকে রায়হানকে বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা আটক করেন বলে জানান এসএমপির উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ। তিনি জানান, ওই এলাকারও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ মিলেছে। সেখানে রায়হানকে গণপিটুনি দেওয়ার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। সিসিটিভির ফুটেজ, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষী এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে এটা প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হয়েছে, বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে জখম হয়েছেন রায়হান। পরে তাঁকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মামলা পিবিআইয়ে
রায়হান উদ্দিন আহমদের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গতকাল বিকেলে এসএমপির মুখপাত্র জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, ‘সকালে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে রায়হান আহমদ হত্যা মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তরের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
পলাতক এসআই আকবর
সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কোতোয়ালি থানাধীন বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির প্রধান উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভুঁইয়া হঠাৎ করেই পুলিশের নজরদারির বাইরে চলে গেছেন। তাঁর কোনো খোঁজ পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসআই আকবর যাতে পালিয়ে ভারতে চলে যেতে না পারেন- এজন্য সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী সব থানা এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, গত সোমবার রাত ১১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত এসআই আকবর পুলিশের নজরদারিতে ছিলেন। তখন তিনি নগরীর জিন্দা বাজার এলাকায় অবস্থান করছিলেন। এরপর থেকে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ এবং ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডি-অ্যাকটিভ দেখাচ্ছে। তার অবস্থান চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।
মরদেহ তুলে পুনঃতদন্ত
রায়হান উদ্দিন আহমদের লাশ আজ বৃহস্পতিবার নগরীর নেহারীপাড়ায় আখালিয়া নবাবী মসজিদ কবরস্থান থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সজিবুর রহমান ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেজবাহ উদ্দিনের উপস্থিতিতে তোলা হয়। পরে তা পুলিশ পাহারায় পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়।