‘ওই নারীকে আমি চিনি না, তিনিও আমাকে চেনেন না’
অপহরণ ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলামসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৩-এর বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দারের আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার যাত্রাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ওই মহিলাকে আমি চিনি না। তিনিও আমাকে চেনেন না। তিনি কখনো আমার থানায় আসেননি। ফোনেও কখনো মামলা করার কথা বলেননি। তাহলে আমি কখন ধর্ষণের চেষ্টা করলাম? কখন মামলা নিলাম না?’
মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘মামলার ঘটনা শোনার পর আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজে তদন্ত করে দেখলাম, এরা একটি প্রতারক চক্র। এদের কাজই হচ্ছে ভুয়া মামলা দিয়ে কাজ হাসিল করা। এর আগেও এই চক্রটি যাত্রাবাড়ী থানার তিন সাবেক ওসির নামে মামলা করেছিল। তারা হলেন, অবনি শঙ্কর কর, আনিসুর রহমান এবং ওয়াজেদ আলী। তাঁরা সবাই এই চক্রের ভিক্টিম হয়েছিলেন।’
ওসি আরো বলেন, ‘যে বাড়িতে ওই নারী ভাড়া নিয়েছিল সেই বাড়িতে প্রথম তিন মাস তিনি এক টাকাও ভাড়া দেননি। এই ভাড়া না দেওয়ার কারণে বাড়িওয়ালা তাকে বাসা ছেড়ে দিতে বলেন। এরপর বাড়িওয়ালার সঙ্গে ঝামেলা শুরু করেন। সেজন্য বাড়িওয়ালাকেও জড়িয়েছে।’
এ মামলায় যাত্রবাড়ী থানার ওসি ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- মো. সোহেল, মো. মিরাজ আলী, মো. জিহাদ ও উপপরিদর্শক (এসআই) ওসমান আলী। এদের বিরুদ্ধে বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে একদিন রাতে সোহেল ও মিরাজ বাদীর স্বামীকে খুঁজতে বাদীর বাসায় আসেন। এরপর তাঁরা স্বামীকে না পেয়ে বাদীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় বাদী আত্মরক্ষার জন্য চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন আসে। সে সময় আসামিরা বাসা থেকে চলে যায়।
যাওয়ার সময় সিঁড়িতে বাদীর স্বামীকে দেখামাত্র আসামি সোহেল, মিরাজ ও জিহাদ মারধর এবং অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। বাদী এবং তাঁর সন্তানদের বাসায় আটকে রাখা হয়। পরের দিন সকালে আসামিরা বাদীকে বলে, তাঁর স্বামী অজ্ঞাত স্থানে আছে। সেখান থেকে যেন নিয়ে আসে।
নথি থেকে আরো জানা যায়, বাদী আসামিদের কথা অনুযায়ী অজ্ঞাত স্থান থেকে তাঁর স্বামীকে নিয়ে আসেন। এরপর এসে দেখেন বাদীর সন্তানদেরও আটকে রাখেন আসামিরা। পরবর্তী সময়ে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ এসে বাদীর সন্তানদের উদ্ধার করে। তবে আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও উপপরিদর্শক (এসআই) মামলা না নিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করেন। পরে তাঁদের কথা অনুযায়ী পাঁচ হাজার টাকা দেন বাদী।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, তখন ওসি ও এসআই বলেন, বাকি ৯৫ হাজার টাকা দিলে মামলা নেওয়া হবে। তখন, বাদী আর টাকা দিতে পারবেন না বলে জানান। এরপর বাদীর মামলাটি সংশ্লিষ্ট থানা আর নেয়নি।