কক্সবাজার পাহাড়ে ১২ হাজার পরিবারের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস
কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে ১২ হাজারের বেশি পরিবার। কক্সবাজার ‘পাহাড়ধস প্রবণ’ জেলা হওয়ায় প্রতিবছর পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ে। গত বছরও জেলায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়। ঝুঁকিপূর্ণ বসতির কারণে এবারও মৃত্যুর আশংকা করছেন পাহাড়ে বসবাসকারীরা। তবে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, ভারি বর্ষণ হলে পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরিয়ে নেওয়া হবে।
উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বাদ দিয়ে কক্সবাজার জেলায় স্থানীয় বাসিন্দাদের ১২ হাজারের বেশি পরিবার পাহাড়ের তলদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। এর মধ্যে অতিঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার।
কক্সবাজার শহর ও শহরতলিতে প্রায় সাত হাজার পরিবার ও জেলায় বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় আরও পাঁচ হাজার পরিবার পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। পাহাড়ে হাজার হাজার ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থাকার কারণে পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে।
কক্সবাজার শহর ও শহরতলির লাইট হাউজ, সৈকত পাড়া, সার্কিট হাউস সংলগ্ন, মোহাজের পাড়া, দক্ষিণ ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, বৈদ্যঘোনা, মধ্যম ঘোনারপাড়া, পাহাড়তলি, কলাতলী আদর্শগ্রাম, ঝরিঝরিকুয়া, সদর উপজেলা অফিস সংলগ্ন, লিংকরোড পাহাড়ি এলাকায় হাজার হাজার পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।
অন্যদিকে, সদর উপজেলার পিএমখালী, খুরুস্কুল, মহেশখালী, রামু, টেকনাফ ও উখিয়ায় ঝুঁকিপূণ বসতির সংখ্যা গত তিন বছরে দ্বিগুণ বেড়েছে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ বনবিভাগের আওতাধীন বনভূমিতে তিন হাজার ৫২৫ পরিবার অতি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে। অন্যদিকে, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৮০০ পরিবারের মধ্যে অতিঝুঁকিপূর্ণ বসতি পরিবারের সংখ্যা ২৫টি।
শহরের লাইট হাউজ পাহাড়ের বসবাসকারি সাইফুল ইসলাম জানান, শহরের বিভিন্ন এলাকায় দিন মজুরি করে জীবন চলে তাদের সংসার। রাতে মাথা গোছানোর জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে পাহাড়ে বসবাস করতে হচ্ছে। কিন্তু, ভারি বর্ষণের কারণে পাহাড়ধসে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. জুনায়েদ জানান, পাহাড়ি অঞ্চল হিসেবে কক্সবাজার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। গত ২০২১ সালে জেলায় ১৪ জনের পাহাড় ধসে মৃত্যু হয়েছে। প্রতিবছর এভাবে পাহাড় ধসে কক্সবাজারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে। প্রতিবছর বিপদের শঙ্কা হলেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তৎপর হয়ে ওঠেন। এর পর কোনো খবর থাকে না। একদিকে পাহাড় ধসে মৃত্যু যেমন হচ্ছে, অন্যদিকে পাহাড়ে বসবাসের কারণে পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে।
জুনায়েদ আরও বলেন, ‘সরকারি হিসেবে যাই থাকুক, বর্তমানে জেলায় ১২ হাজারের বেশি পরিবার পাহাড় পাদদেশে ঝুঁকিতে বসবাস করছেন। এদের দ্রুত সরিয়ে নেওয়া না হলে প্রতি বছরের মতো এবারও পাহাড় ধসের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে।’
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ জানান, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরাতে এবং ঝুঁকিমুক্ত রাখতে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা হয়েছে। তবে, এখনো ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়নি। ভারি বর্ষণ হলে তখন ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হবে।
কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র হেলাল উদ্দিন কবির জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। একইভাবে এবারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাহাড় দখল ও পাহাড় বসবাস ঠেকাতে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এ জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।