কমেছে দুধের দাম, বেড়েছে গো-খাদ্যের সংকট
সিরাজগঞ্জে গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে, কমেছে দুধের দাম। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে খামারিরা। দুধ ও গরু বিক্রি করে খরচ উঠছে না বলে দাবি খামারিদের। অপরদিকে, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কেটে দেওয়ায় বন্যার পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ গোচারণ ভূমি। তলিয়ে যাওয়া এলাকাগুলোতে লাগানো নেপিয়ার ঘাস পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
খামারিদের সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৩ সালে মিল্কভিটার একটি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাঘাবাড়িতে স্থাপিত হয়। এই মিল্কভিটাকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠে হাজার হাজার গরুর খামার। বর্তমানে এ অঞ্চলে প্রায় আট শতাধিক খামার রয়েছে। এসব খামারে দেড় থেকে দুই লাখ গবাদিপশু প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়।
এই দুধের প্রায় এক লাখ লিটার দুধ মিল্কভিটা ও ৫০ হাজার লিটার দুধ অন্যান্য বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানি সংগ্রহ করে থাকে। অবশিষ্ট প্রায় দুই লাখ লিটার দুধই সিরাজগঞ্জসহ আশপাশের জেলার দোকান, মিষ্টির দোকান ও স্থানীয় বাজারগুলোতে বিক্রি করে খামারিরা।
খামারিরা জানান, প্রতিনিয়ত গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে খামারিরা। ৯০০ টাকার ভূসি এখন এক হাজার ৩০০ টাকা, ৭০০ টাকার খেসারী ভূসি এখন এক হাজার ২০০ টাকা, ৮০০ টাকার মসুর ডালের ভূসি এখন এক হাজার ৩০০ টাকা, দুই হাজার ৫০০ টাকার তিলের খৈল এখন চার হাজার ৫০০ টাকা।
চলতি মাসে শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের দুই কোটি টাকার রাওতারা স্লুইস গেট সংলগ্ন রিংক বাঁধ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ফলে সিরাজগঞ্জসহ তিন জেলার চলনবিল অঞ্চলের অন্তত নয় উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কাঁচা ঘাস বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এতে গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছে খামারিরা।
বাঁধটি কেটে দেওয়ায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, পাবনা জেলার চাটমোহর, ফরিদপুর, ভাঙ্গুরা, নাটোর জেলার গুরুদাসপুর, সিংড়া, বড়াই গ্রামসহ চলনবলি অঞ্চলের কমপক্ষে আটটি উপজলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
একদিকে গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে উৎপাদিত দুধের দাম কমে যাওয়া। তার ওপরে উন্মুক্ত ঘাস তলিয়ে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে খামারিদের।
শাহজাদপুর উপজেলার রেশমবাড়ি গ্রামের খামারি আইয়ুব হাজী বলেন, ‘বর্তমানে গো-খাদ্যের যে দাম তাতে গরু পালন কঠিন হয়ে পড়েছে। একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দুধের দামও কম। দুধের ন্যায্য দাম পাইলে কিছুটা পুষিয়ে যেত। এখন গরু বিক্রি করে গো-খাদ্যের দামই উঠছে না। গরু পালন বাদ দিতে হবে, না হয় লোকসান দিতে হবে।’
খামারি হোসেন আলী ফকির বলেন, ‘খামারে উৎপাদিত দুধ মিল্কভিটাও নিচ্ছে না বাজারেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। প্রতি লিটার দুধ ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করে খরচ উঠছে না। বর্তমান বাজারে গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি। ফলে লোকসান যাচ্ছে।’
খামারি আবুল কালাম বলেন, ‘গরু বাথানে থাকলে সবুজ ঘাস খাইতো বেশি দুধ হইতো। এখন বাঁধ কেটে দেওয়ায় বাথান পানিতে তলিয়ে গেছে। গরু বাড়িতে রাখা হয়েছে। ঘাস না খাওয়ার কারণে দুধ হচ্ছে কম। গরু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।’
খামারি আজিজল হক বলেন, ‘বর্তমানে দুধের দাম ২৫ টাকা লিটার। ৫০ টাকা লিটার দুধ হলে খামারিরা লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পেত।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ জেলায় বছরে আট থেকে নয় লাখ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদন হয়। প্রতিদিন ২০ থেকে ২১ লাখ লিটার দুধ সিরাজগঞ্জ জেলায় উৎপাদন হয়। উৎপাদন দুধ প্রাণ, আড়ংসহ বিভিন্ন কোম্পানি সংগ্রহ করে। বাকি দুধ বিভিন্ন মিষ্টির দোকান ও সাধারণ মানুষের ক্রয় করে। মহামারি করোনার কারণে দুধের দাম কিছুটা কমেছে। বিষয়টি প্রাণীসম্পদ বিভাগ অবগত আছে। সরকারিভাবে এরই মধ্যে সাত হাজার ৯০০ খামারিকে তিন কোটি ১৯ লাখ ৭৯ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। যেসব খামারি অনুদান পায়নি তাদের দ্বিতীয় ধাপে অনুদান দেওয়া হবে।’