করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কী পদক্ষেপ, তা জানাতে নির্দেশ
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।
করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে কী ধরনের পরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কী ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে আগামী সোমবারের মধ্যে তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জাতীয় মনিটরিং সেল গঠনের নির্দেশনা চেয়ে গত রোববার হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব।
এর আগে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারা দেশে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ল অ্যান্ড লাইফ ফাইন্ডেশনের পক্ষে এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।
নোটিশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মনিটরিং সেল গঠন, সারা দেশে পর্যাপ্ত মাস্ক সরবরাহ নিশ্চিত করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
স্বাস্থ্য সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বিমান ও পর্যটন সচিবসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট আটজনকে এই নোটিশ পাঠানো হয়।
করোনাভাইরাসের জন্য বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস ঠেকাতে শুধু বিমানবন্দর, স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও হাসপাতালগুলোতে বিশেষ পদক্ষেপের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সারা দেশে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যকীয়। পাশাপাশি করোনাভাইরাস রোধে ডাক্তার, প্যারামেডিকস, বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মনিটরিং সেল গঠনের সময় এসেছে। সব জেলায় এই সেলের শাখা অফিস থাকতে হবে। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সারা দেশে পর্যাপ্ত মাস্কসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে। পাশাপাশি দেশের জনগণকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
নোটিশের জবাব না পাওয়ায় এ রিট করা হয়।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সারা বিশ্বে তিন হাজার ২৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৫ হাজার ৩৮২ জন। এর মধ্যে চীনে মোট মৃত্যুর সংখ্যা তিন হাজার পেরিয়েছে। নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের। এ ছাড়া দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৪০৯ জনে। এর মধ্যে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৯ জন। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিএনও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
এরই মধ্যে ৭০টির বেশি দেশে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাস শুধু প্রাণই কেড়ে নিচ্ছে না, দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকেও দুর্বল করে দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনার কারণে সংকুচিত হয়ে আসছে ব্যবসায়িক পরিধিও।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদ শেট গ্রিন বলেন, ‘করোনার কারণে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রদর্শনী বাতিল হচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে। সরাসরি আলোচনা বা বৈঠকের সুযোগ কমে আসার ফলে বিনিয়োগ ও বিপণন থমকে আছে।’
এদিকে, ইতালিতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনার প্রকোপ। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৭ জনে। চীনের পর গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ইতালিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির সরকার।
অন্যদিকে, ইরানেও করোনা পরিস্থিতি নাজুক। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৯২ জনের। এ ছাড়া সমান হারে বাড়ছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা। সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য হচ্ছে, দেশটির আট ভাগ পার্লামেন্ট সদস্য এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমণ ঠেকাতে ৫৪ হাজার বন্দিকে সাময়িক মুক্তি দিয়েছে দেশটির সরকার।
এ ছাড়া করোনায় তিন দিনে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে। ওয়াশিংটন ছাড়াও ১৬টি অঙ্গরাজ্যে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। প্রতিদিনই মৃত ও আক্রান্তের সারিতে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাড়ে সাতশ কোটি ডলার অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেস।
করোনা নির্মূলে গবেষণা আরো জোরদার করতে দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ল্যাব পরিদর্শন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্প বলেন, ‘যখন থেকে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, তখন থেকেই আমরা প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছি। যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, সেখানে বিশেষ মেডিকেল টিম কাজ করছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় এই রোগের সংক্রমণ ঠেকানোর কাজে আমরা অনেকটা এগিয়ে আছি।’
এদিকে, আর্জেন্টিনা ও চিলিতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। ভাইরাসটির পরিধি বাড়তে থাকায় অনেক দেশের অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং সরঞ্জাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তাই গ্লাভস ও মাস্ক মজুদ না করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
এরই মধ্যে করোনাজনিত কোভিড-১৯ রোগ মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এক হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে বিশ্বব্যাংক।