করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে রাজশাহী
ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে রাজশাহীও। পাশের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনার সংক্রমণ আশঙ্কাজনকহারে বেড়েই চলেছে। একইসঙ্গে করোনার রোগী বাড়ছে রাজশাহীতেও। এই দুই জেলার আক্রান্তদের বেশির ভাগ চিকিৎসা নিচ্ছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ।
আজ মঙ্গলবার রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৫৪ জন করোনা রোগীর মধ্যে ৮৬ জনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের এবং ৪৮ জন রাজশাহীর। এদের মধ্যে ১৪ জন আইসিইউতে রয়েছে। যাদের বেশির ভাগই চাঁপাইনবাবগঞ্জের। রোগীদের শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতি হচ্ছে বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী।
পরিচালক জানান, রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত) আরও চারজন করোনায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে দুজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের, একজন রাজশাহীর, অপরজন পাবনার। এ নিয়ে গত তিন দিনে এই হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর গত ১ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭১ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী ও ১১২ জন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘করোনার প্রথম ধাপে হাসপাতালে সর্বোচ্চ রোগী ছিল ৯৬ জন। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে সর্বোচ্চ রোগী বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৬ জনে। ঈদের আগে সেটি কমে এসেছিল ৭১ জনে। কিন্তু ঈদের পর থেকে করোনার রোগী বাড়তে থাকে। যা একদিনে ১৬৮ জনে দাঁড়ায়। তবে রোগীদের বেশির ভাগই চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা।’
পরিচালক আরও বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জে শনাক্তের হার ৫৫ ভাগ। তবে কম নয় রাজশাহীতেও। বর্তমানে রাজশাহীতে শনাক্তের হার ৪৫ ভাগ। করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতালে আরও একটি ওয়ার্ড বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে পাঁচটি ওয়ার্ডে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আরও একটি ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হচ্ছে।’
পরিচালক বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গতকাল সোমবার মধ্যরাত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাত দিনব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। লকডাউনের জন্য সাত দিন আগেই আমরা সুপারিশ করেছিলাম।’
রাজশাহীতেও লকডাউন প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে রামেক হাসপাতালের পরিচালক শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘এখানে বর্তমানে লকডাউন দেওয়া না গেলেও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। কারণ যে হারে হাসপাতালে রোগী ভর্তি হচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের ক্যাপাসিটির বাইরে চলে যাবে। সেক্ষেত্রে সদর হাসপাতাল চালুর জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। যেহেতু সেখানে অক্সিজেন লাইন নেই, সেক্ষেত্রে সেখানে সাধারণ রোগীগুলো রাখার ব্যবস্থা করা যাবে।’
শামীম ইয়াজদানী আরও বলেন, ‘রাজশাহীর রোগীদের চেয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগীদের অবস্থা দ্রুত অবনতি হচ্ছে। ফলে করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ভারতীয় ধরন আছে কি না, তা পরীক্ষা করতে ৪৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। তবে ফলাফল এখনো পাওয়া যায়নি। তাদের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল হাতে পেলে এ বিষয়ে পরিবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, ‘রাজশাহীর সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোনো মানুষ রাজশাহী আসবে না। রাজশাহীর কেউ চাঁপাইনবাবগঞ্জে যেতে পারবে না। এ ছাড়া করোনার সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে প্রতিটি উপজেলাতেই মাইকিং করে প্রচার চালানো হচ্ছে। এরপরও যদি করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসে, তখন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
সিভিল সার্জন আরও বলেন, ‘রাজশাহী সদর হাসপাতাল এখন বন্ধ রয়েছে। সেটি চালু করে করোনা ইউনিট করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’