করোনায় আক্রান্ত ৮০ ভাগের শরীরে লক্ষণ নাও প্রকাশ পেতে পারে
বাংলাদেশ বর্তমানে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের চতুর্থ ধাপে অবস্থান করছে। এ ধাপকে করোনার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাল বলা হয়। এ ধাপটিকে বলা হয়, ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’। এ ধাপে এসে একজন করোনায় আক্রান্ত রোগী কীভাবে বা কোন অবস্থায় আক্রান্ত হচ্ছে তা, খুঁজে পাওয়া যায় না।
শুধু যে আক্রান্তদের সূত্র খুঁজে পাওয়া যায় না বিষয়টি তা নয়, এ অবস্থায় একজন আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে কোনো ধরনের উপসর্গ বা লক্ষণ প্রকাশ নাও পেতে পারে। আর এ অবস্থাই ভাইরাসটির বেশি বেশি সংক্রমণের পথ তৈরি করে দেয় বলে সংশ্লিষ্টদের মত। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত শতকরা ৮০ ভাগ রোগীর শরীরে কোনো ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ প্রকাশ নাও পেতে পারে। তবে এদের ভেতর কারো কারো শরীরে মৃদু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সে লক্ষণ বুঝে ওঠা মুশকিল। তবে এসব ক্ষেত্রে ওই রোগীদের মৃত্যুর আশঙ্কা নেই বললেই চলে। রোগী কোনো চিকিৎসা ছাড়াই নিজ থেকে সুস্থ হয়ে উঠবেন।
অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত বাকি ২০ ভাগ রোগীর শরীরে লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যাবে। এদের মধ্যে যাদের করোনা বাদে অন্য কোনো রোগ রয়েছে, তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকতে পারে। এ ২০ ভাগের ভেতরে অন্তত পাঁচ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে সে ঝুঁকি বেশি থাকতে পারে। সুতরাং সবচেয়ে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি বয়স্কদের ক্ষেত্রে।’
নাসিমা সুলতানা আরো বলেন, ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের এ অবস্থায় ভেতরে কারোরই ঘরের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। বাইরে গেলেই আপনি আক্রান্ত হতে পারেন। কারণ, আপনি বুঝতেই পারবেন না, কার মধ্যে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটেছে। আপনার শরীরের সামনেই হয়তো প্রাণঘাতী জীবাণু ঘুরে বেড়াচ্ছে, যা আপনি বুঝতেও পারছেন না। দেখা যাবে আপনিই আক্রান্ত, কিন্তু আপনি বা আপনার পরিবার বিষয়টি বুঝতেই পারেনি। আবার আপনার দ্বারা আপনার পুরো পরিবারের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ল। আপনি হয়তো রক্ষা পেলেন, কিন্তু আপনার পরিবারে বয়স্ক বা অন্য রোগ থাকা মানুষগুলোর জন্য সেটি বিপদের কারণ হতে পারে।’
কমিউনিটি ট্রান্সমিশন কী?
কমিউনিটি ট্রান্সমিশন নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাঁরা দুজনই এ বিষয়ে প্রায় একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন।
তাঁরা দুজনই বলেছেন, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন এমন একটি অবস্থাকে নির্দেশ করে, যখন কোনোভাবেই বোঝা যাবে না, মানুষ কোথা থেকে বা কার মাধ্যমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। দেখা গেল, একজন করোনায় আক্রান্ত রোগীর কোনো ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা গেল না, অথচ তিনি আক্রান্ত হয়েছেন। তার মানে, করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি তাঁর নিশ্বাসে বিষ নিয়ে আপনার সামনে ঘুরছেন, আপনাকে আক্রান্ত করছেন, কিন্তু আপনি বুঝতে পারছেন না।। পরিস্থিতিটা এমন হয় যে, আপনি যে কারো কাছ থেকে অথবা যেকোনোভাবে আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু এর উৎস জানা যাবে না। আর যখন উৎস জানা যাবে না, তখন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি হয়ে উঠবে। কারণ, কার শরীরে ভাইরাসটি আছে বা নেই তা আপনি বুঝতেই পারবেন না। এ পরিস্থিতিকেই কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলা হয়ে থাকে।