করোনায় আরো ১৫ জনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ২৬৬
করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরো ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৫ জন হয়েছে। নতুন করে আরো ২৬৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট এক হাজার ৮৩৮ জন আক্রান্ত হলো। এ ছাড়া নতুন করে নয়জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে সুস্থ রোগীর সংখ্যা ৫৮ জন।
আজ শুক্রবার অনলাইন ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাসে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুটা আজকে একটু বেশি। এ নিয়ে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে আরো ২৬৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট এক হাজার ৮৩৮ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট দুই হাজার ১৯০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরোগ্য লাভ করেছেন নয়জন। মোট আরোগ্য লাভ করেছেন ৫৮ জন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গত ৮ মার্চ থেকে আমরা করোনায় আক্রান্ত পজিটিভ রোগী পেয়েছি এক হাজার ৮৩৮ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৫০০ জন। অর্থাৎ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে প্রায় ৩৩ ভাগ রোগী। বাকিরা বিভিন্নভাবে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছে। সারা দেশে এক দশমিক আট ভাগ রোগী আইসিউ সাপোর্ট নিয়েছে।
জাহিদ মালেক বলেন, দেশের প্রতিটি হাসপাতালে অক্সিজেনের ব্যবস্থা রয়েছে। যা করোনা ভাইরাসের রোগীর জন্য বেশি প্রয়োজন। করোনা আক্রান্তের ৮০ শতাংশের বেশি রোগীর কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। অন্যদের অক্সিজেন সাপোর্ট ও কিছু ওষুধ লাগতে পারে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সারা দেশে এক সপ্তাহের মধ্যে আইসিইউ সাপোর্ট নিয়েছে ২৭ জন। এই হারে ১০ হাজার রোগী যদি আইসিইউ সাপোর্ট যদি নেয়, তাহলে ১৮০টি ভেন্টিলেটর সাপোর্ট লাগবে।’
জাহিদ মালেক সন্দেহভাজন সবাইকে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব আগামীতে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মানুষ পরীক্ষা করতে চান না। এতে করে সংক্রমণের হার বাড়ছে। এ যুদ্ধের মূল হাতিয়ার হলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। করোনা পরীক্ষা করুন। নিজে বাঁচুন ও প্রিয়জনকে বাঁচান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পরেই কথা বলেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, ‘এসব রোগীদের বয়স বিভাজনে দেখা যায় করোনায় সর্বোচ্চ আক্রান্তের হার ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। মোট আক্রান্তের শতকরা ২১ ভাগ রয়েছে এই বয়স সীমার মধ্যে। এর পরেই রয়েছে ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়স। এই বয়সে রয়েছেন শতকরা ১৯ ভাগের মতো। এবং এরপর রয়েছে ৪১ থেকে ৫০ বছর, যেটা ১৫ ভাগের মত। মোটামুটি আমরা দেখতে পাই, ২১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে সংক্রমণের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।’
ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘নারী পুরুষ বিভাজনে দেখা যায় শতকরা ৬৮ ভাগ পুরুষ আর বাকি ৩২ ভাগ নারী। এই আক্রান্তের শতকরা ৪৬ ভাগই ঢাকা শহরে। এরপরেই রয়েছে নারায়ণগঞ্জ। সেখানে মোট আক্রান্তের শতকরা ২০ ভাগ। এবং পরবর্তীতে আমরা গাজীপুর থেকে অনেক নতুন রোগী দেখতে পাচ্ছি। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও মুন্সীগঞ্জে দিনদিন রোগীর হার বাড়তে শুরু করেছে।’
আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, ‘ঢাকা শহরের মধ্যে আমরা আক্রান্তের বা সংক্রমণের সংখ্যা বিশ্লেষণ করেছি দেখেছি, বড়ভাবে যদি তাহলে মিরপুরে রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আগে টোলারবাগে সংক্রমণের সংখ্যা বেশি ছিল। এখন মিরপুরের বিভিন্ন অঞ্চল এবং টোলারবাগের পুরোটা ধরে যদি আমরা বলি, তাহলে শতকরা ১১ ভাগ সংক্রমণের হার সেখানে রয়েছে। এরপরেই রয়েছে মোহাম্মদপুর এলাকা যেখানে শতকরা ৪ ভাগ সংক্রমণের হার। এরপর ওয়ারী ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় ৪ ভাগের মতো রোগী আছে। তারপরে উত্তরা এবং ধানমণ্ডিতে শতকরা ৩ ভাগ করে সংক্রমণের হার দেখা যাচ্ছে।’
ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘যারা সংক্রমিত হচ্ছেন তাদের শতকরা ৬৮ ভাগ বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার মানে ৩২ ভাগের হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হয়েছে। যদিও শতকরা ৩২ ভাগ হাসপাতালে রয়েছে কিন্তু এদের সবার হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না।’