কলেজছাত্রকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ জেলা ছাত্রলীগের সম্পাদকের বিরুদ্ধে
ব্যক্তিগত সহকারী হতে না চাওয়ায় এক কলেজছাত্রকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা মো. আলমগীর পুঠিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, নির্যাতনের পর ঘটনা ধামাচাপা দিতে ৫০ হাজার টাকা চুরির মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছে ওই ছাত্রকে। তাঁর এই স্বীকারোক্তির ভিডিওচিত্র ধারণ করে রাখা হয়েছে।
পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহরাওয়ার্দী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তদন্ত করে এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ওসি বলেন, নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্র মিলন হোসেন এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তার বাড়ি পুঠিয়া উপজেলার শিবপুরহাটে। তিনি বর্তমানে পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
থানায় দেওয়া অভিযোগে দাবি করা হয়েছে, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে চাকরি দেওয়ার কথা বলে গত বৃহস্পতিবার মিলন হোসেনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কাজী নুরুন্নবী হোস্টেলে নিয়ে যান পুঠিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। রাতে ওই হোস্টেলে মদপান ও উচ্ছৃঙ্খল পরিবেশ দেখে মিলন চাকরি করবেন না জানিয়ে সকালে বাড়ি ফিরে যান।
নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্র মিলন হোসেনের বাবা জানান, শুক্রবার রাতে আবার মিলনকে ওই হোস্টেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি কক্ষে আটকে অমি বলেন, মিলন হোস্টেল থেকে ৫০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে গেছেন। এই টাকা তাঁকে দিতে হবে। এ সময় মিলন টাকা চুরির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তখন অমিসহ ১০-১২ জন মিলনকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। পেটানো হয় ব্যাট দিয়ে। রাতভর এমন নির্যাতন চলতে থাকে। একপর্যায়ে বালিশের নিচ থেকে অস্ত্র বের করে মিলনকে দেখানো হয়। তার পরও মিলন টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বেল্ট খুলে তাঁর গলায় প্যাঁচানো হয়। অমি মিলনকে ভয় দেখিয়ে বলেন, তোকে মেরে ফেললে কেউ দেখবে না। প্রাণে বাঁচতে চাইলে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার কর। প্রাণ বাঁচাতে মিলন স্বীকারোক্তি দেন। তখন তাঁর বক্তব্য ভিডিও করা হয়। এরপর ভোর ৪টার দিকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ছেলের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী আলমগীর হোসেন জানান, অমি মিলনকে ভয় দেখিয়ে বলেন, কেউ জিজ্ঞেস করলে সে যেন বলে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। গত শনিবার সকালে মিলন বাড়িতে গিয়ে সেই শেখানো কথাই বলেন। তবে শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে গেলে পরের দিন রোববার তিনি নির্যাতনের কথা তাঁর পরিবারকে খুলে বলেন। এর পরই তাঁকে পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। মিলনের বাবা এ ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করেন। বিচার চান নির্যাতনকারীদেরও।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমি বলেন, ‘চাকরি-বাকরি না। মিলনকে আনা হয়েছিল যে সে আমার সঙ্গে থাকবে। কাজটাজ করবে। রাতে ছিল। সকালে আমরা ঘুম থেকে ওঠার আগেই ও চলে গেছে। বালিশের নিচে এক ফ্রেন্ডের ৫০ হাজার টাকা ছিল। ওটা নিয়ে চলে যায়। তাই তাকে ডেকে আনা হয়। ছোট ভাইরা ছিল, চড়-থাপ্পড় দিয়েছে। তাকে বলা হয়েছে, এসব আর করো না ভাইয়া। ছোট ভাইকে বড় ভাই হিসেবে যেভাবে শাসন করা হয়, সেটাই করা হয়েছে।’