কুমিল্লায় পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত হবেন সাংবাদিক হাবীব
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তরুণ সাংবাদিক ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৈনিক সময়ের আলোর সিনিয়র রিপোর্টার হাবীবুর রহমানের মরদেহ নেওয়া হচ্ছে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তার কর্মস্থল সময়ের আলোতে তিনটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। রাতে কুমিল্লায় তার নিজ গ্রামে সমাহিত করা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
হাবীবুর রহমান হাবীবের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন।
আজ বুধবার দুপুর আড়াইটায় ডিআরইউ প্রাঙ্গণে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় হাবীবের। জানাজা শেষে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংবাদিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
সেখান থেকে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার সাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় জানাজা। এরপর হাবীবের কর্মস্থল দৈনিক সময়ের আলোর কার্যালয়ে তার মরদেহ নিয়ে গেলে সেখানে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এখন গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় তার মরদেহ দাফন করা হবে।
এর আগে, হাবীবের মহরদেহ পৌঁছালে ডিআরইউ প্রাঙ্গণে নিরবতা নেমে এসে। তার অকালমৃত্যুতে শোকস্তব্ধ সহকর্মীরা চোখের জল ফেলেন। তারা স্মৃতিচারণ করেন সদা হাস্যোজ্জ্বল এই তরুণ সাংবাদিকের। শোকস্তব্ধ পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
ডিআরইউ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে হাবীবের মরদেহে প্রথমে শ্রদ্ধা জানায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সংগঠনটির পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান।
এরপর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস ইউংয়ের পক্ষ থেকে উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার, কে এম শাখাওয়াত মুন ও সারওয়ার-ই-আলম সরকার (জীবন) ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকনও উপস্থিত ছিলেন। পরে তথ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে হাবীবের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর বিএফইউজে, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ডিআরইউ ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) শ্রদ্ধা জানায়।
হাবীবুর আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীর বিটে কাজ করতেন। আওয়ামী লীগ বিটের সাংবাদিকদের পক্ষ থেকেও তার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এছাড়াও কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরাম, রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতি, দিনাজপুর সাংবাদিক সমিতি ও চট্টগ্রাম বিভাগ সাংবাদিক ফোরাম ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
ডিআরইউ সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু বলেন, হাবীবুর রহমানের মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। হাবীবের যে জনপ্রিয়তা দেখেছি, কম মানুষই আছে এত বয়সে এমন জনপ্রিয় হয়। তবে তার মৃত্যু থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আমরা যারা মোটরবাইক চালাই, তাদের আরও সতর্ক হতে হবে। কারণ এই শহরে কোথায় কোন মৃত্যুকূপ আছে, তা আমরা জানি না। সেই মৃত্যুকূপে যেন আমরা আর পতিত না হই, সেটাই কমিউনিটির সবার কাছে আমার প্রত্যাশা। আমরা আর চাই না সড়ক দুর্ঘটনায় কিংবা অকালে কোনো প্রাণ এভাবে ঝরে যাক। ডিআরইউয়ের পক্ষে থেকে হাবীবের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো হবে।
ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব বলেন, আমরা কল্পনাও করিনি হাবীব এভাবে চলে যাবে। হাবীবের সঙ্গে সবার ভালো সম্পর্ক ছিল। তার মধ্যের নেতৃত্বের একটি ভালো প্রত্যাশা ছিল। সাংগঠনিকভাবেও সে ভালো কাজ করেছে। নেতৃত্বের প্রতি সে কমিটেড ও সৎ ছিল। যেকোনো কিছু খুব সিরিয়াসলি করত। তার মৃত্যু খুবই দুঃখজনক।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জানাজা শেষে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলওয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওমর শরিফ, যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সহ-সভাপতি রাকিব হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুল কবির প্রমুখ তাকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, মঙ্গলবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে হাতিরঝিলের বেগুনবাড়ি প্রান্তের সিদ্দিক মাস্টারের ঢাল এলাকায় একটি মসজিদের সামনে থেকে হাবীবকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান এক পথচারী। সেখানে কর্তব্যরত এক চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর হাবীব রহমান দৈনিক সময়ের আলোতে যোগদানের আগে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। দৈনিক সময়ের আলোর হয়ে সদ্যসমাপ্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন নিয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন করেছিলেন তিনি। ব্যক্তিগতজীবনে তিনি বিবাহিত এবং এক সন্তানের জনক। হাবীবুর রহমানের জন্ম কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায়।