কুমিল্লায় বাসে গণধর্ষণ: চালক-হেলপার রিমান্ডে
কুমিল্লায় তিশা প্লাস পরিবহনের একটি বাসের ভেতরে এক তরুণীকে (১৮) গণধর্ষণের ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার বাসচালক আরিফ হোসেন সোহেল ও সহকারী বাবু শেখের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার ওই দুজনকে আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত গতকাল শুনানি করে তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে ঘটনার আটদিনেও ধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি বাসের সুপারভাইজার আলমকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
ওই তরুণীর মা বলেন, তাঁর মেয়ে গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করত। করোনাভাইরাসের কারণে সে পাঁচ মাস আগে বাড়ি চলে আসে। গত শুক্রবার চাকরির সন্ধানে বাড়ি থেকে ঢাকায় গিয়ে চাচাতো বোনের বাসায় ওঠে। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে এমন নিষ্ঠুর ঘটনার শিকার হয়।
‘দুদিন চিকিৎসার পর তাকে (ভিকটিম) বাড়ি নিয়ে এসেছি। তবে এখনো সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। সে ভয়ে ভয়ে দিন পার করছে।’ জানিয়ে বাসের সুপারভাইজার আলমকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন তরুণীর মা।
তরুণীর পরিবার ও মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ওই তরুণী গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাড়ি ফেরার উদ্দেশে চাচাতো বোনের বাসা থেকে বের হন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে তিশা প্লাস পরিবহনের একটি বাসে উঠে কুমিল্লা শহরের শাসনগাছার উদ্দেশে রওনা দেন ওই তরুণী। পথে বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারকে শাসনগাছা বাস স্টেশনে পৌঁছার পর তাঁকে নামিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। তাঁকে সেখানে নামিয়ে দেবে এবং এ বিষয়ে তাঁকে চিন্তা করতে নিষেধ করেন। কিন্তু বাসের চালক ওই তরুণীকে শাসনগাছা বাস স্টেশনে না নামিয়ে কৌশলে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় আল-শাকিল হোটেলের সামনে নিয়ে যান।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ১৫ সেপ্টেম্বর ভোর ৪টার দিকে বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল, হেলপার বাবু শেখ ও সুপারভাইজার আলম বাসটির দরজা-জানালা বন্ধ করে তরুণীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল বাস থেকে নেমে চলে যান।
এরপর হেলপার বাবু শেখ ও সুপারভাইজার আলম তরুণীকে বাস থেকে নামিয়ে পদুয়ার বাজার এলাকায় বাবু শেখের ঘরে নিয়ে পুনরায় তাঁকে ধর্ষণ করেন। সকাল ৬টার দিকে তরুণীকে অসুস্থ অবস্থায় ঘর থেকে বের করে দিয়ে তাঁকে চলে যেতে বলেন। পরে তরুণী মোবাইল ফোনে তাঁর মাকে ঘটনা জানান।
১৫ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টার দিকে তরুণীর মা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় পৌঁছে ঘটনার বিস্তারিত জেনে অভিযুক্তদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করেন। এরপর তিনি বাদী হয়ে ওইদিন রাতে তিনজনের বিরুদ্ধে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় গণধর্ষণের মামলা করেন।
পুলিশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই তরুণীর চিকিৎসা ও ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। এরপর আদালতে জবানবন্দি শেষে ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে তাঁকে তাঁর মায়ের হেফাজতে দেওয়া হয়।
১৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে তিশা প্লাস পরিবহনের পরিচালক বিমল দে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেই বাসটিতে ঘটনা ঘটেছে সেই বাসটির মালিক এই পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দুলাল হোসেন অপু। তবে এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে আমরা তাদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
ওই পরিবহনের এমডি দুলাল হোসেন অপু সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৩৯৮ নম্বর গাড়ির চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার এ ঘটনা করেছে জানার পর আমরা গাড়ির চালক ও হেলপারসহ দুইজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছি।’
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কমল কৃষ্ণ ধর সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল ও বাবু শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার অপর আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। অপর আসামি আলমকে গ্রেপ্তার করতে বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে।’