কুষ্টিয়ায় যুবক হত্যা : এক জনের মৃত্যুদণ্ড, ৩ জনের যাবজ্জীবন
কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার ইমরান শেখ (২২) নামের এক যুবককে অপহরণ ও গলা কেটে হত্যা করে লাশ গুমসহ মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের মামলায় এক জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে দুজনের আমৃত্যু ও তিন জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ প্রত্যেকের পৃথকভাবে জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ অতিরিক্ত আদালত-১ এর বিচারক তাজুল ইসলাম মঙ্গলবার দুপুরে সকল আসামির উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন। অন্যদিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সাবেক এমপিকে বোমা হামলা মামলায় দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ বিশেষ আদালতের বিচারক আশরাফুল ইসলাম আসামিদ্বয়ের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হলেন কুমারখালী উপজেলার কোমরপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মান্নানের ছেলে শহিদুর রহমান পিরু ওরফে মিঠুন, আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- একই উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের বাসিন্দা ফরিদুল ইসলাম লতিফের ছেলে মেহেদী হাসান(২৫) ও কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এস্টেটের ফজলুল বিশ্বাসের ছেলে মেহেদী হাসান জয়(২৬)। এছাড়া যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- কুমারখালী উপজেলার সানদাহ গ্রামের শহীদ বিশ্বাসের ছেলে নাহিদ হাসান, খোকসা উপজেলার চক হরিপুর গ্রামের মুন্সি নাসির উদ্দিনের ছেলে মুন্সি অনিক হাসান ও ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার তুলশিতলা গ্রামের আফাজ উদ্দিনের ছেলে ওয়াদুদ ইসলাম। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আর দৌলতপুর থানার বোমা হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- দৌলতপুর উপজেলার জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ও জামিরুল ইসলাম ওরফে মরু।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৬ মার্চ দুপুরে কুমারখালী উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের বাদশা সেখের ছেলে স্বর্ণের কারিগর ইমরান শেখ আত্মীয় বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশে মোটরসাইকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। দুদিন পর এ্কই উপজেলার পার্শ্ববর্তী গ্রামের ভুট্টাক্ষেত থেকে একটি মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করে কুমারখালী থানা পুলিশ। সংবাদ পেয়ে নিহতের বাবা বাদশা সেখ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশটি তার ছেলে ইমরানের বলে শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে অপহরণ ও গলা কেটে দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে হত্যা ও লাশ গুমসহ মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে কুমারখালী থানায় মামলা করেন।
অন্যদিকে ২০১০ সালের ২৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংসদ সদস্য আফাজ উদ্দিন আহম্মেদ তার নিজ বাড়িতে স্থানীয় জনগণ ও নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময়কালে অতর্কিতে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় বোমা বহনকারী দুজন এবং সাক্ষাৎপ্রার্থী এক স্কুলশিক্ষকসহ তিনজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন গুরুতর আহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সংসদ সদস্যের ছেলে এজাজ আহমেদ বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মামলা করেন।
মামলাটি তদন্ত শেষে অপহরণ ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনে ২০১৯ সালের ১৯ মে এবং বোমা হামলা মামলায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে কুমারখালী ও দৌলতপুর থানা পুলিশ।
আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট অনুপ কুমার নন্দী বলেন, কুমারখালী থানার ইমরান নামের যুবককে অপহরণ করে তার মোটরসাইকেল ছিনতাই ও দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে লাশ গুমের চেষ্টা মামলায় দীর্ঘ সাক্ষ্য শুনানি শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের মধ্যে একজনের ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড, দুজনের আমৃত্যু ও তিন জনের যাবজ্জীবন সাজাসহ জরিমানার আদেশ দেন বিজ্ঞ আদালত। ধার্যকৃত জরিমানার অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে প্রত্যেকে অতিরিক্ত আরও এক বছর করে সাজা ভোগ করতে হবে। একই মামলায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজনৈতিক হীনস্বার্থ চরিতার্থের লক্ষ্যে অতর্কিতে বোমা হামলা করে নিরীহ মানুষকে হত্যার দায়ে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত।