কোয়াডে যোগ দিলে সম্পর্ক ‘যথেষ্ট খারাপ’ হবে : চীনের রাষ্ট্রদূত
চার দেশীয় জোট কোয়াডে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘যথেষ্ট খারাপ’ করবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার কৌশলগত জোট কোয়াডকে চীনবিরোধী একটি ছোট গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে বেইজিং।
আজ সোমবার কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন। ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, চীনের পাঁচ লাখ করোনা ভ্যাকসিন আগামী বুধবার ঢাকায় পৌঁছাবে।
২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে কোয়াড গঠিত হয়। ২০১৭ সালে এটি পুনর্গঠিত হয়। শুরুতে এই জোট অর্থনৈতিক স্বার্থের কথা বললেও চীন মনে করে এই জোটটি মূলত কৌশলগতভাবে চীনবিরোধী একটি প্ল্যাটফর্ম।
কূটনৈতিক সাংবাদিকদের সঙ্গে এই আলাপে চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরে বলেন, এতে নিরাপত্তার সংক্রান্ত উপাদান যুক্ত রয়েছে এবং তারা লক্ষ্য করছেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুর মিলিয়ে জাপানও এখানে চীনের বিরুদ্ধে বলছে। তাই চীন মনে করে, এই জোটে যেকোনোভাবে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ককে ‘যথেষ্ট খারাপ’ করবে।
লি জিমিং বলেন, বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে না এই ছোট জোটে শরিক হওয়া। এমনটা হলে তা বাংলাদেশ-চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নষ্ট করবে। আমরা চাই না বাংলাদেশ এই জোটে থাকুক।
গত মাসের শেষ সপ্তাহে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গি ঢাকা সফর করেন। এ সময় কোয়াড, আইপিএস বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছিল চীন।
কোয়াডে অংশগ্রহণের বিষয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক করে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, এই প্রেক্ষাপটে বলব, এ ধরনের ছোট গোষ্ঠী বা ক্লাবে যুক্ত হওয়ার ভাবনাটা ভালো নয়।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘কোয়াড গঠন করা হয়েছে চীনের স্বার্থবিরোধী কাজ করতে। শুধু অর্থনীতি নয়, এটা আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। জাপান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুর মিলিয়ে এই জোটে থাকছে।’
লি জিমিং বলেন, কোয়াড একটি ‘সংকীর্ণ উদ্দেশ্যমূলক’ ভূ-রাজনৈতিক চক্র এবং বাংলাদেশের এতে যোগদান করা উচিত নয়, কারণ এই উদ্যোগ থেকে কোনো লাভ হবে না। ‘ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে যে এই ধরনের অংশীদারিত্ব অবশ্যই আমাদের প্রতিবেশীদের নিজস্ব সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নতি এবং জনগণের মঙ্গলকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’
বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে কেউ বলতে পারে না এবং বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা পুনরায় শুরু করতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হবে।
লি জিমিং বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক নয় বলে চীন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।
বিগত কয়েকবছরে মিয়ানমার একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি। রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা ঘাটতি দূর করতে না পারা ও উপযোগী পরিবেশের অভাবে রাখাইনে তাদের প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা দুবার ব্যর্থ হয়েছে।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর প্রত্যাবাসন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ২০১৮ সালের ১৬ জানুায়ারি ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ সম্পর্কিত একটি চুক্তিতেও স্বাক্ষর করে ঢাকা-নেপিদো, যা রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ বলছে রোহিঙ্গারা তাদের সরকারকে বিশ্বাস করছে না এবং এজন্য বাংলাদেশ তাদের কাছে কয়েকটি প্রস্তাবনা দিয়েছে। মিয়ানমার কোনো প্রস্তাবনাকেই না করেনি কিন্তু কোনো প্রস্তাবনা এখনো কার্যকরও হয়নি।
রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য বাংলাদেশ একাধিক উপায়ে- দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয়, ত্রিপক্ষীয় এবং বিচার ব্যবস্থা মাধ্যমে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, তিস্তা নদীর ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে চীন আন্তরিকভাবে বিবেচনা করবে যদি সে ব্যাপারে সম্ভাব্য কোনো প্রতিবেদন তারা পায়।
লি জিমিং বলেন, প্রস্তাবনা পাঠানোর আগে বাংলাদেশ সরকারের এ ব্যাপারে একটি গবেষণা পরিচালনা করা উচিত।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ডিকাবের সভাপতি পান্থ রহমান ও সাধারণ সম্পাদক একেএম মঈনুদ্দিন।