ক্ষমতাসীনরা জিয়াউর রহমানকে খাটো করার অপচেষ্টায় লিপ্ত
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/08/18/fakhrul-1.jpg)
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বিতর্কিত করার হীন উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অপপ্রচারের একটি সংগঠিত ঘৃণ্য অপতৎপরতা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এই অপচেষ্টার প্রতিবাদ করে আরো বলেন, ‘বহু দিন ধরেই এ ষড়যন্ত্র প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু কখনোই তা হালে পানি পায়নি।‘
আজ মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে জিয়াউর রহমান সম্পর্কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যাচারের প্রতিবাদে বিএনপি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যরাতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির মাধ্যমে স্বঘোষিত আওয়ামী লীগ সরকার নির্লজ্জভাবে আইনের শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে। সীমাহীন নৈরাজ্য, দুর্নীতি, অরাজকতা, করোনা মোকাবিলায় চরম ব্যর্থতা ও চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দেশকে নিপতিত করে সরকার আজ দিশেহারা। রাজনৈতিকভাবে চরম দেউলিয়া হয়ে জনগণের ওপর আস্থা হারিয়ে একমাত্র রাষ্ট্রশক্তির উপরেই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এই সরকার। এখন আর বর্তমান সরকারের কোনো রাজনীতি নেই। তাই সরকারের টিকে থাকার জন্য তারা অপরাজনীতিতে নেমেছে।’
বিচার-বহির্ভূত প্রক্রিয়ায় হাজার হাজার মানুষকে হত্যা, গুম ও খুন করা আজ সরকারের দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘যা জাতিসংঘ সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের নামে সব গণমাধ্যম ও স্বাধীন মতামতের কণ্ঠরোধ করার জন্য তৈরি হয়েছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো জঘন্য আইনের। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে দলীয় ক্ষমতার হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। স্বাধীনতার চেতনাকে বিনষ্ট করে দিয়ে তারা একটি ফ্যাসিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করছে। ক্ষমতাসীনরা এখন মিথ্যাচার করে ইতিহাস বিকৃত করার প্রক্রিয়ায় জিয়াউর রহমানকে খাটো করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘১৯৭১ সালে জাতি যখন নেতৃত্বহীন, কাণ্ডারিশূন্য হয়ে দিশেহারা, ঠিক তখনই ২৬ মার্চ জীবনের তোয়াক্কা না করে মেজর জিয়াউর রহমান অকুতোভয় কণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন এবং সম্মুখযুদ্ধে নেতৃত্ব দিলেন। তিনি পরে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন করে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিলেন, বিশৃঙ্খল সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনলেন, স্টেটম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের আসন সুপ্রতিষ্ঠিত করলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় ও রাজনীতিতে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে জনগণের মণিকোঠায় স্থান করে নিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর লাখ লাখ মানুষ জানাজায় অংশ নিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেছিল। সেই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকেই এখন ১৫ আগস্ট হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।’
বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, ‘জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ এত সমালোচনা কেন করে? কারণ, জানেন শহীদ জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া তাদের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী। জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে ৪০ বছর আগে। তারপরও তাদের অপ্রতিরোধ্য জনপ্রিয়তাকে ক্ষমতাসীনদের এতই ভয় যে আজও একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার সাহস রাখে না তারা।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের আইন-আদালত শাসনব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বন্দি অবস্থায় থাকা ১৫ আগস্ট হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে দিয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ধারণকৃত ভিডিও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করা এবং একইসঙ্গে বেতনভুক্ত সাইবারকর্মী নিয়োগ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করা হয়েছে। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ১৫ আগস্ট হত্যা মামলার সব আসামিকে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করা এবং রায় কার্যকর করা প্রায় সম্পন্ন হতে চলেছে। এমতাবস্থায় আইনিভাবে এ ধরনের বক্তব্যের কোনো সাক্ষ্যর মূল্য নেই।’
“বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে যাদের সম্যক ধারণা আছে তারা সবাই জানেন, ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষ নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে। মরহুম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের লাশের ওপর দিয়েই সেদিন ওই মন্ত্রিসভার প্রায় সব সদস্যই শপথ নিয়েছিল মোশতাক সরকারের মন্ত্রী হিসেবে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট এবং ৩ অক্টোবরে তৎকালীন আওয়ামী-বাকশাল নেতা খন্দকার মোশতাকের জাতির উদ্দেশে দেওয়া দুটি ভাষণ সুস্পষ্ট দালিলিক প্রমাণ বহন করে। ওই ভাষণে তিনি মুজিব হত্যাকাণ্ডকে ‘এক ঐতিহাসিক প্রয়োজন’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। হত্যাকারীদের তিনি প্রশংসা করেন ‘অসম সাহসী সূর্য সন্তান’ হিসেবে। ওই সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার আব্দুল মালেক উকিল লন্ডনে বসে কী মন্তব্য করছেলিনে তা সবারই জানা আছে। এটি ঐতিহাসিকভাবে সুস্পষ্ট যে, ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সুবিধাভোগী ছিল খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নেতারাই।‘’
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, “কথিত মাজেদের জবানবন্দিতে বয়ান করা হয়েছে, ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও ১৯৭৫ সালের ঘটনার নায়কদের ইনডেমনিটি রেফারেন্স দিয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন। অথচ জাতি জানে, প্রকৃতপক্ষে সরকারপ্রধান নিজেও জানেন, ওই সময়ের ঘটনার নায়কদের ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক কর্তৃক, জিয়াউর রহমান নহে। এই অধ্যাদেশটি ১৯৭৫ সালের অধ্যাদেশ ৫০ নামে অভিহিত। ‘দ্য বাংলাদেশ গেজেটে’ প্রকাশিত অধ্যাদেশটিতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এইচ রহমানের স্বাক্ষরে।”
'আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, শহীদ জিয়াউর রহমানকে ঘিরে এই অপপ্রচার সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার। মাজেদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সত্যকে মিথ্যা করা যাবে না', যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, ‘বিএনপি ও জিয়া পরিবারের প্রতি জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনকে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় মোকাবিলা না করে বর্তমান সরকার শুরু করেছে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত। সে কারণেই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে ক্ষমতাসীন সরকার।’