খাগড়াছড়িতে গণধর্ষণ : আদালতে ৬ জনের স্বীকারোক্তি
খাগড়াছড়িতে ডাকাতি ও গণধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার সাত আসামির মধ্যে ছয়জন আজ রোববার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রধান আসামি মো. আল আমিন ওরফে নুরুল আলম (৪০) স্বীকারোক্তি দিতে রাজি না হওয়ায় আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর তাঁর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে সব আসামিকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।
সাত আসামিকে আজ দুপুর আড়াইটায় খাগড়াছড়ির আমলি আদালতে হাজির করা হয়। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আমলি আদালতের তিন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ডাকাতি ও গণধর্ষণের পৃথক দুই মামলায় আসামিদের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি রেকর্ড করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মশিউর রহমান, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সামিউল আলম ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাখাওয়াত হোসেন চৌধুরী রিয়াদ।
রোমহর্ষক এ মামলার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ অপরাধীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে শনাক্ত হওয়া নয়জনের মধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, আসামিরা সবাই ডাকাত এবং সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্রের সদস্য। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ডাকাতি, ধর্ষণসহ একাধিক মামলা রয়েছে। জেলখানায় তাদের মধ্যে পরিচয় ও সখ্যতা গড়ে ওঠে।
আজ রোববার সকালে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির উপস্থিতিতে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য তুলে ধরেন পুলিশ সুপার মো. আব্দুল আজিজ।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, রোমহর্ষক ও ন্যক্কারজনক এ ঘটনার পর অপপ্রচার চালিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতিগত এবং সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করা হলেও পুলিশ সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব দিয়ে মামলার তদন্ত করেছে এবং অপরাধীদের অপরাধী হিসেবে শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনেছে।
ব্রিফিংকালে চট্টগ্রামের রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. মনিরুজ্জামানসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা হলেন খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার তৈচালার মো. আমিন (৪০), জেলা সদরের কুমিল্লা টিলার মো. বেলাল হোসেন (২৩), জালিয়াপাড়ার বড়পিলাকের ইকবাল হোসেন (২১), একই গ্রামের মো. শাহিন মিয়া (২৮), মাটিরাঙ্গা উপজেলার আমতলীর আব্দুল হালিম (২৮), মাটিরাঙ্গা পৌর এলাকার মো. আব্দুর রশিদ (৩৭) ও রামগড়ের দারগাপাড়ার মো. অন্তর (২০)। তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকার, বিক্রয়লব্ধ ৪৮ হাজার টাকা, লুণ্ঠিত টাকার মধ্যে চার হাজার ৯০০ টাকা, মোবাইল ফোনসেট এবং ডাকাতিকাজে ব্যবহৃত সিএনজিচালিত অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়েছে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে জেলা শহরের গোলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে একটি বাড়িতে ডাকাতি ও গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। দরজা ভেঙে ডাকাতদলের সদস্যরা বাড়িতে প্রবেশ করে সবার হাত-পা বেঁধে ফেলে এবং বাড়িতে লুটপাট শুরু করে। ডাকাতদলের সদস্যরা একটি কক্ষে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণীর (২৬) হাত, পা ও মুখ ওড়না দিয়ে বেঁধে রেখে গণধর্ষণ করে। এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি থানায় ডাকাতি ও নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে।