গণফোরামের সব বহিষ্কার ‘অকার্যকর’ : ড. কামাল
গণফোরামকে ঐক্যবদ্ধ রাখার পদক্ষেপ হিসেবে বিগত কয়েক মাসে অভ্যন্তরীণ ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঘটে যাওয়া সব বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কার ‘অকার্যকর’ বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন। আজ রোববার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে সমাধান করা হবে।’
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘গণফোরামের অভ্যন্তরে ভুল বোঝাবুঝির কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে সব সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গণফোরামের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।’
ইতোমধ্যে দলের অভ্যন্তরে যে সব বহিষ্কার ও পাল্টা বহিষ্কার হয়েছে, তা অকার্যকর বলে গণ্য হবে, জানান ড. কামাল হোসেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে গিয়ে ১৯৯৩ সালে গণফোরাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
গত বছরের ২৬ এপ্রিল দলের পঞ্চম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার পরে দলীয় নেতাদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। ওই কাউন্সিলে দলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টুসহ অনেক দলীয় শীর্ষ নেতাকে বাদ দিয়ে ওই কমিটি গঠন করা হয়।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়াকে বহিষ্কার করার পাশাপাশি আগামী ২৬ ডিসেম্বর দলের জাতীয় কাউন্সিলের ঘোষণা দিয়েছে গণফোরামের একাংশ। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির একাংশের বর্ধিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়াকে এ সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
বর্ধিত সভা শেষে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি আবু সাইয়িদ বলেন, ‘সংগঠনকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী ও গণমুখী করার লক্ষ্যে আগামী ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
আবু সাইয়িদ বলেন, জাতীয় কাউন্সিলকে সফল করার লক্ষ্যে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে আহ্বায়ক করে ২০১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আবু সাইয়িদ বলেন, ‘সংগঠনের শৃঙ্খলা ও গণতন্ত্র অমান্য করে দলের ঐক্য ও স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, প্রেসিডিয়াম সদস্য আ ও ম শফিকউল্লাহ, অ্যাডভোকেট মহসীন রশিদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোশতাক আহমেদকে তাদের পদ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
আবু সাইয়িদের দাবি, বর্ধিত সভায় ৫২ জেলার ২৮৩ জন প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।
ড. কামাল তাঁদের সঙ্গে থাকবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, দলের কাউন্সিলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ড. রেজা কিবরিয়া অবশ্য বলেছিলেন, দলের নিয়ম অনুযায়ী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ সভার আহ্বান না করায় গণফোরামের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে মোস্তফা মোহসীন মন্টু, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও সুব্রত চৌধুরীসহ আটজনকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গণফোরামের ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন অংশ।
গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে মোস্তফা মোহসীন মন্টু, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী ও জগলুল হায়দার আফ্রিক দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পাঠানো শোকজ নোটিশের জবাব না দেওয়ায় তাদের দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে সাময়িক বহিষ্কার হওয়া হেলালুদ্দীন, লতিফুল বারী হামিম, খান সিদ্দিকুর রহমান ও আবদুল হাসিব চৌধুরীকেও দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।
সভায় বর্তমান রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বাস্তবতার আলোকে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী, গতিশীল ও সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে ১২ ডিসেম্বর দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।