‘গরম মসলার বাজার পুরাই ঠাণ্ডা’
মো. আজিমুল ইসলাম (৫৬) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ২৫ বছর ধরে গরম মসলার ব্যবসা করছেন। দীর্ঘ এ ব্যবসাজীবনে তিনি কোরবানি ঈদের আগে এমন দুঃসময় আর কখনো পার করেননি। তিনি বলছিলেন, ‘বাজারে মানুষ নাই, পুরাই ক্রেতাশূন্য, গরম মসলার বাজার এখনো পুরাই ঠাণ্ডা।’
আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মসলার আড়তে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের বাজার সরগরম হয়ে উঠলেও মসলার বাজারে এখনও উত্তাপ ছড়ায়নি। লকডাউনের কারণে গত ১৫ দিনের মতো দোকানপাট বন্ধ ছিল। এখন ঈদের আগে আগে বাজার খুলে গেছে। তবে ভিড় নেই গরম মসলার দোকানে। গরম মসলার দাম বাড়েনি বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। উল্টো দাম কিছুটা কমেছে। আর তাতে ক্রেতারা সন্তুষ্ট।
ব্যবসায়ীরা জানান, এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, জিরা, ধনে, তেজপাতাসহ সব মসলার দাম কমেছে। প্রতি বছর ক্রেতাদের চাহিদা বেশি থাকায় সুযোগ বুঝে মসলার দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন, গরম মসলার বাজার এখনো ক্রেতাশূন্য।
মসলার পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন অনেক কমে গেছে। কঠোর বিধিনিষেধের কারণে গত দুই সপ্তাহ এ ধরনের অনুষ্ঠান প্রায় বন্ধই ছিল। কমিউনিটি সেন্টার, হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ। এসব কারণে বছরজুড়ে মসলার বিক্রি কম হয়েছে। বাজারে মসলার মজুত পর্যাপ্ত। তাই দাম বাড়েনি।’
জানা গেছে, কারওয়ান বাজারে জিরা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা কেজিতে। মাসখানেক আগে জিরার দাম ছিল ৩৫০ টাকা। এলাচ দুই হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা কেজি, আগে ছিল দুই হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত। দারুচিনি ৩৩০ টাকা থেকে ৩৪০ টাকা কেজি। আগে বিক্রি হয়েছে ৩৭৫ টাকা। গোলমরিচ সাদা আগে বিক্রি হয়েছে ৯০০ টাকায়, এখন ৮৪০ টাকা এবং কালো গোলমরিচ বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকায়, এখন দাম ৪৬০ টাকা কেজি। কিসমিস ২০০ টাকা কেজি। আগে ছিল ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা।
কাজুবাদাম আগে বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকা, এখন ৭০০ টাকা কেজি। কাঠবাদাম এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি। আগে ছিল ৭৫০ টাকা। লবঙ্গ কেজি ৮৫০ টাকা থেকে কমে ৭০০ টাকা হয়েছে। জায়য়ফল এক হাজার ৪৫০ টাকা থেকে কমে এক হাজার ৩০০ টাকা কেজি হয়েছে। মিষ্টি জিরা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজিতে। এর দাম আগে এমনই ছিল।
মসলার দাম না বাড়লেও পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা ও আদার দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে। কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে এক পাল্লা (পাঁচ কেজি) দেশি পেঁয়াজ ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় প্রতি কেজির ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা মোক্তার হোসেন বলেন, গত কয়েক বছরে এমন সময়ে মসলার বাজারে অনেক ভিড় ছিল। কিন্তু এ বছর মানুষ গ্রামে চলে গেছে, অনেকে ঢাকায় কোরবানি দিচ্ছে না। এতে করে মসলার বাজারে কোনো মানুষ নেই।
রবিউল আলম নিজের বাসার জন্য মসলা কিনতে এসেছেন। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। বেতন অনিয়মিত তাই এ বছর কোরবানি দিতে পারছি না। তবে, বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে ঈদের দিন গোশত কিনব। তাই মসলা নিতে আসলাম। আগে হাজার টাকার মসলা নিতাম। এ বছর সব মিলিয়ে ২০০ টাকার মসলা কিনলাম।