গোপালগঞ্জে জনপ্রিয় হচ্ছে ব্রি হাইব্রিড ধান
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/04/25/dhaan.jpg)
গোপালগঞ্জে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত ব্রি হাইব্রিড ধান জনপ্রিয় হচ্ছে। এ ধান সর্বোচ্চ ফলন দেয়। ধানে রোগ বালাই নেই। এ ধান চাষাবাদ করে কৃষক লাভবান হয়। তাই প্রতি বছর গোপালগঞ্জে ব্রি হাইব্রিড ধান জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপপরিচালক কৃষিবিদ আ. কাদের সরদার জানান, চলতি বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জ জেলায় এক হাজার ৫৩ হেক্টর জমিতে ব্রি হাইব্রিড ধানের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ব্রি হাইব্রিড ধান-৩ এ জেলার ৪৮৩ হেক্টরে ও ব্রি হাইব্রিড ধান-৫ কৃষক ৫৭০ হেক্টরে চাষাবাদ করেছেন।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ব্রি হাইব্রিড ধান-৩ গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ২৭ হেক্টরে, মুকসুদপুরে ১১০ হেক্টরে ও কোটালীপাড়া উপজেলায় ৩৪৬ হেক্টরে চাষাবাদ হয়েছে। ব্রি হাইব্রিড ধান-৫ গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩৫ হেক্টরে, মুকসুদপুরে ১১০ হেক্টরে, কাশিয়ানীতে ১১৫ হেক্টরে ও কোটালীপাড়া উপজেলায় ৩১০ হেক্টরে আবাদ হয়েছে। বীজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারলে এ ধান আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
কোটালীপাড়া উপজেলার হরিণাহাটি গ্রামের কৃষক ঠান্ডা শেখ বলেন, ‘ব্রি গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে বীজ, সার, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ পেয়ে আমার এক একর ১৫ শতাংশ জমিতে ব্রি হাইব্রিড ধান-৩ ও ব্রি হাইব্রিড ধান-৫ জাতের আবাদ করি। এ ধানে সার কম লেগেছে। রোগ ও পোকার আক্রমণও হয়নি। তাই কম খরচে বেশি ধান উৎপাদন করে আমি লাভবান হয়েছি। আমার ক্ষেতে ব্রি হাইব্রিড ধান-৫ হেক্টর প্রতি ১০ দশমিক ৮৬ মেট্রিক টন ফলন দিয়েছে। এছাড়া ব্রি হাইব্রিড ধান-৩ হেক্টরে সাড়ে ৯ মেট্রিক টন ফলেছে। এ ফলন দেখে প্রতিবেশি কৃষকরা আগামী বছর এ ধান চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমি গত চার বছর ধরে এ ধানের চাষাবাদ করে লাভবান হয়েছি।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিটুল রায় বলেন, ‘ধান গবেষণার এ দুই জাতের হাইব্রিড ধান গত চার বছর ধরে কোটালীপাড়ায় সর্বোচ্চ ফলন দিয়ে আসছে। তাই এ জাত জনপ্রিয় হচ্ছে। এ জাত ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশে ধান উৎপাদনে বিপ্লব ঘটবে। এ ক্ষেত্রে আগামীতে এ ধানের বীজ সহজলভ্য করতে হবে।’
ব্রি গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৃজন দাস বলেন, ‘এ জাতের ধান চিকন। বাজারে এ ধান একটু বেশি দামে বিক্রি হয়। ধানের ফলন প্রচলিত জাতের তুলনায় বেশ ভালো। বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএডিসি এ ধানের বীজ উৎপাদন শুরু করলে কৃষকের বীজের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।’
ব্রি, আঞ্চলিক কার্যালয় গোপালগঞ্জের প্রধান ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘২০২০ সালে আমরা গোপালগঞ্জে মাত্র ১৫ একর জমিতে ব্রি হাইব্রিড ধানের দুটি জাতের ৫০টি প্রদর্শনী প্লট করি। ওই বছর ব্রি হাইব্রিড ধান-৫ প্রতি হেক্টরে ১০ দশমিক ৮৬ মেট্রিক টন (১৪ শতাংশ আদ্রতায়) ও ব্রি হাইব্রিড ধান-৩ হেক্টর প্রতি ৯ দশমিক ৬৭ মেট্রিক টন (১৪ শতাংশ আর্দ্রতায়) ফলন দেয়। প্রচলিত হাইব্রিড ধান হেক্টরে সাত থেকে আট টন ফলন দেয়। সেখানে আমাদের উদ্ভাবিত হাইব্রিড রেকর্ড ফলন দিয়ে আসছে। এ জন্য বিগত চার বছরে গোপালগঞ্জে ব্রি হাইব্রিড ধানের আবাদ ১৫ একর থেকে বেড়ে এক হাজার ৫৩ হেক্টরে সম্প্রসারিত হয়েছে। এ বছর গোপালগঞ্জে আমরা বিনামূল্যে ১০ মেট্রিক টন দুই জাতের ব্রি হাইব্রিড ধান বীজ বিতরণ করেছি। সেই সঙ্গে বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় সার, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়েছি। এ বছরও কৃষকরা ব্রি হাইব্রিড ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছেন। এছাড়া বিদেশি হাইব্রিড ধান বীজ বাজারে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।’
ব্রি হাইব্রিড ধানের বাণিজ্যিক বীজ উৎপাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বীজ উৎপাদন করলে ব্রি হাইব্রিড ধান বীজ প্রতি কেজি কৃষক ৬০ থেকে ৭০ টাকায় কিনতে পারবেন। এতে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়। ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্য নিরাপত্তা ও এসডিজি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’