চট্টগ্রামের উপনির্বাচনে মৃত ও প্রবাসীরা ভোট দিয়েছে : আমীর খসরু
চট্টগ্রাম-৮ আসনের (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) উপনির্বাচনে ইভিএমের পরিবর্তে ব্যালটের মাধ্যমে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনের ভোটে মৃত ব্যক্তি, প্রবাসীরা এমনকি জেলে থাকা বন্দিরাও ভোট দিয়েছে। ইভিএমে ভোট ডাকাতি হয় চট্টগ্রামের ভোটে তা প্রমাণিত হয়েছে।’
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাকক্ষে কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির চার সদস্যের প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে দুপুরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছি চট্টগ্রামের নির্বাচনটি বাতিল করে দিন। ব্যালটের মাধ্যমে পুনর্নির্বাচন দিন। কারণ দিনের আলোর মতো পরিষ্কার সেখানে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ ছিল না। সেখানে কেন্দ্র দখল করেছে, ইভিএমের পাসওয়ার্ড নিয়েছে, ব্যালট ইউনিটে তারা ভোট দিয়েছে। আমরা বলেছি, ভোট বাতিল করে ব্যালটে ভোটের ব্যবস্থা করুন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে কী হয়েছে, তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও তা প্রকাশিত হয়েছে। সেটি নিয়ে আজ কথা বলেছি। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের চেয়েও অনেক বেশি খারাপ হয়েছে এই উপনির্বাচন। নির্বাচন ব্যবস্থা অধিকতর খারাপের দিকে যাচ্ছে। উন্নতি তো দূরের কথা অবনতির দিকে যাচ্ছে, ফলে আস্থাহীনতা বাড়ছে।’
চট্টগ্রামে সব কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মোট ১৭০ পোলিং স্টেশনের মধ্যে সবই দখল করে নিয়েছিল ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী কেন্দ্রের বাইরের কেউ থাকতে পারবে না, গাড়ি-মোটরসাইকেল চলবে না। কিন্তু সেখানে চট্টগ্রাম বিভাগের যত মেয়র, কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ নেতাদের অবস্থান দৃশ্যমান ছিল। সবাই সরাসরি কেন্দ্র দখল করেছে, মিছিল করেছে। যেখানে ভোট দেয় তা দখল করে নিয়েছে।’
আমীর খসরু বলেন, ‘চট্টগ্রাম-৮ আসনের ভোটে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দেয়নি। যারা যেতে পেরেছে তারা শুধু আঙ্গুলের ছাপ দিয়েছে, ভোটের ব্যালট ইউনিটে ভোটের কাজ আওয়ামী লীগের লোকজন সেরে ফেলেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনেও যেখানে ইভিএমে ভোট হয়েছে সেখানেও এমন হয়েছে, চট্টগ্রামে তার চেয়েও খারাপ হয়েছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘ইভিএমের ভোটে জালিয়াতি হলেও চ্যালেঞ্জের কোনো সুযোগ নেই। ভারতের চেয়ে ১১ গুণ বেশি টাকায় ইভিএম মেশিন কেনা হয়েছে। কিন্তু সেখানে অডিট ট্রেইল ও পেপার ট্রেইল নেই। ভারতের মেশিনে তা আছে। পাঁচ-ছয়টি দেশে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে। সেখানে কমিশন বা সরকার নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ নয়। কিন্তু বাংলাদেশের কমিশন এবং সরকার প্রশ্নবিদ্ধ।’
আপনাদের অনুরোধের জবাবে কমিশন কী বলেছে জানতে চাইলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘তারা বলছে সব ঠিক আছে। আগে ৩০ ডিসেম্বরেও বলেছিল সব ঠিক আছে, এখনো বলছে সব ঠিক আছে। এর বাইরে কমিশন আর কী বলতে পারে?’
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু বলেন, ‘আজ আমাদের ঢাকা উত্তরের প্রার্থী তাবিথের ওপর হামলা হয়েছে। এ্যানিসহ ১৫ জন হামলায় আহত হয়েছে। ঢাকার নির্বাচনে তারা রাস্তার ওপর অফিস করেছে, পোস্টার লাগিয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রার্থীকে বাধা দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের ওপর সরকার খবরদারি চালাচ্ছে বলে মনে করি। কমিশনের ওপর সমস্ত আস্থা হারিয়ে ভোট ব্যবস্থা চলছে। বিএনপি ভোটে অংশ নিচ্ছে এটি কমিশন আস্থা হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু জনগণের কোনো আস্থা নেই।’
বৈঠকে ইসির পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে অন্যদের মধ্যে ছিলেন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।