অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি কেন, প্রশ্ন রিজভীর
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, যে গণতন্ত্রের জন্য ১৬ বছর ধরে এদেশের মানুষ অপেক্ষা করেছে, লড়াই করেছে, রক্ত ঝরিয়েছে, নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে, এই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে এত দ্বিধা কেন? এত গড়িমসি কেন? এটা আজ জনগণের জিজ্ঞাসা।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে বনানী কবরস্থানে তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন রিজভী।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা শুনতে পাচ্ছি উপদেষ্টার পক্ষ থেকে কিংস পার্টি করা হবে। আমরা এও শুনতে পাচ্ছি, বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলকে উপদেষ্টাদের পক্ষ থেকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এজন্য কি রাজনীতিক দলগুলো সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে না?’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘মানুষের ধারণা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে। অনন্তকাল ধরে তারা সংস্কার করবে, এটা হতে পারে না।’
রিজভী বলেন, ‘আজ থেকে ১০ বছর আগে বিএনপি চেয়ারপারসনকে গুলশানের কার্যালয়ে বালির ট্রাক দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এমন নিমর্মতার খবর শুনে মালয়েশিয়ায় অসুস্থ আরাফাত রহমান মার যান। এসব নির্যাতন-ত্যাগ উপেক্ষা করে গত ৫ আগস্ট আমরা একটা বাংলাদেশ কাঁপানো, পৃথিবীর কাঁপানো বিজয় দেখেছি। এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল এই সরকারকে সমর্থন দিয়েছে।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্মমসচিব বলেন, ‘জনপ্রত্যাশা এই সরকার নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কিন্তু যখন শুনি, আগে সংস্কার পরে নির্বাচন। তখন মনে হয়, শেখ হাসিনার সেই বক্তব্যের প্রতিধ্বনি আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো উপদেষ্টার কাছ থেকে এটা শোভা পায় না।’
রিজভী বলেন, ‘যে গণতন্ত্রের জন্য ১৬ বছর ধরে এদেশের মানুষ অপেক্ষা করেছে লড়াই করেছে, রক্ত ঝরিয়েছে, নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে, এই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে এত দ্বিধা কেন? এত গড়িমসি কেন? এটা আজকে জনগণের জিজ্ঞাসা, এটা কি অন্যায়? গণতন্ত্র মানে আলোচনা হবে, জিজ্ঞাসা হবে।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বাজারে যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে, এটার জন্য কি সমালোচনা করা যাবে না? সরকারের প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ কাজ না করে, তার জন্য কি সমালোচনা করা যাবে না? ভয় দেখান, ১/১১ এর পুরাবৃত্তি হবে। সব কিছু উপেক্ষা করে বছরের বছর বুক চিতিয়ে লড়াই করেছি, আন্দোলন করেছি। কোন বিষয়ে কথা বলতে হবে আর বলতে হবে না, দেশের প্রাগ্য রাজনীতিবিদদেরকে কি উপদেষ্টারা শেখাবে? আমাদের আমাদের সব আস্থা তো আপনাদের ওপর দেওয়া হয়েছিলব কিন্তু আমাদের কথা হলো এত গড়িমসি কেন? কেন নির্বাচনের ডেটলাইন নেই, কেন হাসিনার কথার পুনরাবৃত্তি হবে? আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র। আরে আমরা তো এই কথা শুনতে চাই না—আগে সংস্কার পরে নির্বাচন।’
রিজভী বলেন, ‘সংস্কার তো যুগের পর যুগ চলতে পারে। নানা কারণে নতুন নতুন সংস্কার হতে পারে। গণতন্ত্রের প্রবাহ তা আপনি আটকে রাখবেন কেন? এখন যে প্রশাসনে ৭০ শতাংশ আওয়ামী লীগের দোসর, ফ্যাসিস্টদের দোসর, তারাই তো দেশ চালাচ্ছেন, যারা বঞ্চিত হয়েছেন তাদের হয়তো প্রমোশন দিয়েছেন। তাদের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে দেননি। অধিকাংশ সচিব ফ্যাসিস্টদের দোসর, তাদের দিয়ে দেশ চালাচ্ছেন। জিনিসপত্রের দাম কমবে কী করে করে, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করবেন তাদের দিয়ে। তারাই তো বিভিন্ন জায়গায় গাপটি মেরে আছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।’
বিএনপিনেতা রিজভী বলেন, ‘আজকে চুরি-ডাকাতি বেড়ে গেছে, খুব যখন জখম বেড়ে গেছে, কেন বেড়েছে ওই দোসররা রন্ধ্রে রন্ধ্রে আছে। কাকে দিয়ে জরিপ করাবেন? ব্যুরো অফিস সরকারি সংস্থা, তাদেরকে দিয়ে নাকি জরিপ করাচ্ছে। তারা নাকি বলে আগে ইউপি নির্বাচন, তারপর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যাদের দিয়ে জরিপ করাচ্ছেন, তারা তো সরকারের পক্ষে কথা বলবে। জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলেন দেখেন, জনগণ কী বলে? আজকে ১৬ বছর ধরে তারা তাদের ভোট দিতে পারে না। তাদের ভোট দিয়ে তাদের সরকার গঠন করতে পারে না। বড় অফিস দিয়ে জরিপ করাচ্ছেন, বলাচ্ছেন যে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, পরে পার্লামেন্ট নির্বাচন, এগুলো নিয়ে মানুষের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে কেউ কেউ রাজনৈতিক দল করার কথা বলছেন, মানুষ তো প্রশ্ন তুলতেই পারে। বিভিন্ন ধরনের কথা যদি আসে, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলো তো মনে করতেই পারে, অন্তবর্তী সরকারের কোনো মাস্টারপ্ল্যান রয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘কোন কোন উপদেষ্টা বিএনপি নিয়ে বিরূপ কথা বলছেন, এই যদি হয় অবস্থা। ১৬ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন করে ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সাইফুল ইসলাম হিরো, সুমনের মতো নেতা নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। যে দলের নেতাকর্মীরা এমন পথ পাড়ি দিয়েছে, তাদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন?’
গণমাধ্যমের উদ্দেশে বিএনপিনেতা রিজভী বলেন, বিএনপির নাম করে কেউ কেউ দুষ্কর্ম করতে পারে, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, বহিষ্কার করা হচ্ছে। লেখেন না ফলাও করে। পত্রিকায় বিএনপির কোনো নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ এলেই তার বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্রে আরাফাত রহমান কোকোকে হত্যা করা হয়েছে। আজকে আমরা তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন।’ এ সময় লন্ডনে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার জন্যও দোয়া কামনা করেন তিনি।