চলে গেলেন সৈয়দ আবুল মকসুদ
সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলাম লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
সৈয়দ আবুল মকসুদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রাত ৮টার দিকে স্কয়ার হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. সামিউল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সন্ধ্যা ৭টার দিকে সৈয়দ আবুল মকসুদকে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে ইমারজেন্সিতে (জরুরি বিভাগ) নেওয়া হয়। সে সময় মেডিকেল অফিসার ডা. ফয়সাল হক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’
ডা. সামিউল ইসলাম বলেন, ‘ডা. ফয়সাল হক সৈয়দ আবুল মকসুদের শরীরে কোনো সাউন্ড পাননি। ডা. ফয়সালের ভাষ্য, তাঁকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়।’
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নিহতের ছেলে সৈয়দ নাসিফ মকসুদ ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিকেলে বাবা হঠাৎ করে শ্বাসকষ্টে ভুগলে আমরা তক্ষুনি তাঁকে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসি। একটু আগে তিনি মারা যান।’
সৈয়দ আবুল মকসুদ বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে নানা বই ও প্রবন্ধ লিখেছেন। বিখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন। পাশাপাশি কাব্যচর্চাও করেছেন। তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা ৪০-এর ওপর। বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দ আবুল মকসুদ ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার এলাচিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা সৈয়দ আবুল মাহমুদ ও মা সালেহা বেগম। শৈশব থেকে আবুল মকসুদ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকা পড়ার সুযোগ পান।
সৈয়দ আবুল মকসুদের কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬৪ সালে এম আনিসুজ্জামান সম্পাদিত সাপ্তাহিক নবযুগ পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমে। এটি ছিল পাকিস্তান সোস্যালিস্ট পার্টির মুখপত্র। পরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি সমর্থিত সাপ্তাহিক ‘জনতা’য় কাজ করেন কিছুদিন। পরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ বার্তা সংস্থায় যোগ দেন। ২০০৮ সালের ২ মার্চ বার্তা সংস্থার সম্পাদকীয় বিভাগের চাকরি ছেড়ে দেন। তিনি দৈনিক প্রথম আলোর একজন নিয়মিত কলামিস্ট। এই দৈনিকে ‘সহজিয়া কড়চা’ এবং ‘বাঘা তেঁতুল’ শিরোনামে তিনি সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে কলাম লেখেন।
সৈয়দ আবুল মকসুদ সাহিত্যিক হিসেবেও খ্যাতিমান ছিলেন। ১৯৮১ সালে তাঁর কবিতার বই বিকেলবেলা প্রকাশিত হয়। ১৯৮৭ সালে তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ দারা শিকোহ ও অন্যান্য কবিতা প্রকাশিত হয়। মানবাধিকার, পরিবেশ, সমাজ ও প্রেম নিয়ে তিনি কবিতা লিখেছেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বুদ্ধদেব বসু, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রমুখ প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা করেছেন।
আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে নিয়ে তিনি লিখেছেন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর জীবন, কর্মকাণ্ড, রাজনীতি ও দর্শন (১৯৮৬) ও ভাসানী কাহিনী (২০১৩)। ভাসানী কাহিনীতে তিনি ভাসানীর বৈচিত্র্যময় ও ঘটনাবহুল দীর্ঘ জীবন এবং তাঁর রাজনৈতিক দর্শন বর্ণনা করেছেন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহকে নিয়ে লিখেছেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জীবন ও সাহিত্য (২০১১) ও স্মৃতিতে ওয়ালীউল্লাহ (২০১৪)। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জীবন ও সাহিত্য গ্রন্থে তিনি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জীবন ও তাঁর সাহিত্যকর্ম নিয়ে লিখেছেন। এ ছাড়া, তৎকালীন সময়ের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক দিকগুলো তুলে ধরেছেন।