‘চাকার হাওয়া’ ছাড়ার প্রতিবাদে দক্ষিণাঞ্চলের ৮ রুটে বাস ধর্মঘট
মাহিন্দ্র গাড়ি থেকে যাত্রী নামানোর ঘটনার সূত্র ধরে বাসের চাকার হাওয়া ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আটটি রুটে বাস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন শ্রমিকরা। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই বরিশাল-ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার আটটি রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় তারা।
বরিশাল বাস মালিক সমিতির সভাপতি ইমান আলী কালু জানান, সড়কে থ্রি-হুইলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বরিশাল থেকে ঝালকাঠি রুটে কিছু দুষ্কৃতিকারী থ্রি-হুইলার মাহিন্দ্রা চলাচল অব্যাহত রেখেছে। গতকাল ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি থ্রি-হুইলারে চেক বসালে বরিশাল রূপাতলীর বাসিন্দা সুমন মোল্লা নামের একজনের একটি মাহিন্দ্রা থেকে যাত্রী নামিয়ে রাখে বলে শুনেছি। সেই সূত্র ধরে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে আজ (মঙ্গলবার) সকালে ঝালকাঠি রুটের সবগুলো বাসের চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয়, শ্রমিকদের মারধর করেন সুমন মোল্লা। এর প্রতিবাদে ঝালকাঠি মালিক সমিতি বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। আমরা রূপাতলী বাস মালিক সমিতি তাদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছি।
রূপাতলী বাস-মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, ‘সুমন মোল্লার অরাজকতার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। এই হামলাকারীকে আইনের আওতায় না আনা পর্যন্ত ও সড়ক থেকে থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
তবে অভিযুক্ত সুমন মোল্লা বলেন, ‘বাস মালিক সমিতির লোকজনদের আমরা কেউ মারধর বা হামলা চালাইনি। বরং তারাই আমাদের মাহিন্দ্রা শ্রমিকদের মারধর করেছে, গাড়ি আটকে রেখেছে। এই ক্ষোভে মাহিন্দ্রা শ্রমিকরা রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে ঝালকাঠির একটি বাসের চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয়।’
ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির লোকজনের মারধরের শিকার মাহিন্দ্রা চালক নজরুল ইসলাম বলেন, ঝালকাঠি রুটের সর্বশেষ বাস বিকেল সাড়ে ৬টায় রূপাতলী থেকে ছেড়ে যায়। আমি রূপাতলী থেকে সন্ধ্যা ৭টায় একজন রোগী নিয়ে রাজাপুর উপজেলার মিরের হাট নামক স্থানের দিকে রওনা হই। সাড়ে ৭টার দিকে ষাটপাকিয়া স্থানে ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির লোকজন মাহিন্দ্রা থামিয়ে যাত্রী নামিয়ে দেয়। এসময়ে তারা আমাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারধর করেন।’
নজরুল বলেন, ‘শুধু আমি না, এমন আরও অনেকের সঙ্গে অত্যাচার চালায় বাস মালিক সমিতি। আমরা ক্ষিপ্ত হয়ে বাসস্ট্যান্ডে ঢুকে ঝালকাঠি রুটের একটি বাসের একটি চাকার হাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। এর বেশি কিছু করিনি।
ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মহাসড়কে বাস চলাচলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা না দেওয়া পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। রূপাতলীতে আজ বাস শ্রমিকদের মারধর করা হয়েছে, গাড়ির হাওয়া ছেড়ে দেওয়া হয়েছে; ব্যাটারি খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এর প্রতিবাদে শ্রমিকরা আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।’
পশ্চিমাঞ্চলীয় আটটি রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানান নাসির উদ্দিন।
ঝালকাঠি প্রতিনিধি কে এম সবুজ জানান, মহাসড়কে অবৈধ মাহিন্দ্রা গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধের দাবিতে ঝালকাঠি থেকে বরিশালসহ আট রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ সকাল ১০টা থেকে ধর্মঘটের ডাক দেয় ঝালকাঠি বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতি এবং শ্রমিক ইউনিয়ন। আকস্মিক বাস ধর্মঘটের কারণে বরিশাল, খুলনা, পিরোজপুর, বাগেরহাটগামী যাত্রীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। দুর্ভোগের শিকার অনেকেই সময় মতো গন্তব্যে যেতে না পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাহাদুর চৌধুরী জানান, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এর পরেও ঝালকাঠির আঞ্চলিক মহাসড়কে পুরোদমে চলছে অবৈধ মাহিন্দ্রা গাড়ি। এর প্রতিবাদ করলে মাহিন্দ্রা গাড়ির মালিক ও চালকেরা বিভিন্ন সময় বাস শ্রমিকদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও বাসের যন্ত্রাংশ চুরি করে নেয়। গতরাতে (সোমবার রাত ১২টার দিকে) বরিশাল রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে ঝালকাঠির একটি বাসের যন্ত্রাংশ চুরি করে নেয় মাহিন্দ্রার মালিক ও চালকেরা। এ ঘটনার বিচার ও মহাসড়কে অবৈধ মাহিন্দ্রা চলাচল নিষিদ্ধের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য আট রুটে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ঝালকাঠি-বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কে থ্রি-হুইলার মাহিদ্রা গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করে বিচার না করা হলে বাস ধর্মঘট চলবে বলেও জানান বাসমালিক ও শ্রমিকেরা।
এদিকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে যাত্রীদের। ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল কিংবা ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় করে অধিক ভাড়ায় তাদের গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।